কী হবে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার সত্য সাই ট্রাস্টের? সত্য সাইয়ের দেহাবসানের পরে এই প্রশ্নটাই এখানে নিঃশব্দে ঘুরপাক খাচ্ছে। সঙ্গে জাগিয়ে তুলছে আরও কিছু প্রশ্ন। পুত্তাপুর্তিতে সত্য সাই নামাঙ্কিত সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্টেডিয়াম-জাদুঘর-সঙ্গীত কলেজ, মায় ছোট্ট বিমানবন্দর— সবই ১৯৭২ সালে তৈরি শ্রীসত্য সাই সেন্ট্রাল ট্রাস্টের অধীনে। রয়েছে শ্রীসত্য সাই জেনারেল হাসপাতাল। শ্রীসত্য সাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর একটা ক্যাম্পাস। শুধু পুত্তাপুর্তি দেখে চমকে গেলে চলবে না। এখান থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে, বেঙ্গালুরুর অনতিদূরে হোয়াইটফিল্ডে গড়ে উঠেছে সাইয়ের 'বৃন্দাবন আশ্রম।' আবার ঘোর গ্রীষ্মে মাঝে মাঝে তামিলনাড়ুর শৈলশহর কোদাইকানালে গিয়ে থাকতেন সত্য সাই। যেখানে তাঁর 'সাই শ্রুতি' আশ্রম। আশ্রম যে কত! দাক্ষিণাত্য জুড়ে ছড়ানো 'সত্যম শিবম সুন্দরম।' ষাটের দশকে মহারাষ্ট্রে প্রথম মন্দির বা আধ্যাত্মিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাই। 'সত্যম।' পরের আশ্রম 'শিবম' হায়দরাবাদে। 'সুন্দরম' চেন্নাইয়ে। এর সঙ্গে বিশ্বের ১৬৬টি দেশে ছড়িয়ে অজস্র সাইকেন্দ্র, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল। এবং যাবতীয় জায়গা থেকে প্রণামী ও চাঁদা এসে জমা হয় ট্রাস্টের নামেই। বুঝতে অসুবিধে নেই, কী বিশাল তার বহর! প্রশান্তি নিলয়ম আশ্রমে সেই ট্রাস্টের দফতর গত তিন-চার দিন যাবৎ সুনসান। আশ্রমের 'অ্যাকোমোডেশন অফিস'-এর পাশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, কম্পিউটারশোভিত দোতলা ট্রাস্ট অফিসে প্রায় সব চেয়ার শূন্য। কোলাপ্সিবল গেটের আড়ালে দু'জন কম্পিউটারের সামনে ব্যস্ত। গত শুক্রবার যাঁদের মুখে শোনা গিয়েছিল, "ট্রাস্টের কাউকে পাবেন না। বুঝতেই পারছেন, সবাই সারা দিন হাসপাতালে। মোবাইল নম্বর নিয়ে লাভ নেই। কেউ ফোন ধরবেন না।" অফিস ছেড়ে সকলে চব্বিশ ঘণ্টা হাসপাতালে কেন? বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেল, সত্য সাই যখন ভেন্টিলেটরে, তখন রোজ ট্রাস্টের বৈঠক বসত হাসপাতালেই! সত্য সাই ট্রাস্টের সচিব এখন কে চক্রবর্তী। তেলুগু এই আইএএস '৮১-তে চাকরি ছেড়ে সাইয়ের কলেজে যোগ দিয়েছিলেন। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি পিএন ভগবতী, প্রাক্তন ভিজিল্যান্স কমিশনার এসভি গিরিও ট্রাস্টে আছেন। তবে স্থানীয় জনশ্রুতি, চক্রবর্তীই গোটা ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করেন। বিস্ময়ের কথা, যাঁর নামে ট্রাস্ট, স্বয়ং সেই সত্য সাইয়ের কোনও আত্মীয় ট্রাস্টে ছিলেন না। এত দিন বাদে, সদ্য গত বছর সাই তাঁর ভাইপো রত্নাকর রাজুকে ট্রাস্টের সদস্য করে নেন। এ-ও শোনা যায়, ট্রাস্টের উপরে এখন অনেকেরই নাকি আস্থা নেই! স্থানীয় প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলছিলেন, "সাই মানুষকে ভালবাসতেন। মানুষ ওঁকে ভালবাসত। কিন্তু ঘটনা হল, সাইকে ভালবাসা মানে তো ট্রাস্টকে ভালবাসা নয়!" এই কথাটাই কি নিঃশব্দে উচ্চারিত পুত্তাপুর্তিতে? উত্তরাধিকারের প্রসঙ্গে বাতাসে যেন টানাপোড়েনের চাপা আবহ। ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা প্রশ্ন। ২৮ মার্চ হাসপাতালে ভর্তির আগে কী হয়েছিল? কত দিন ওঁর শরীর খারাপ ছিল? কী চিকিৎসা চলছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকী, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ডিরেক্টর এএন সফিয়া পরিষ্কার বলছেন, "আমরা ২৮ মার্চ থেকে কেস-শিট রেখেছি। তার আগে সাইয়ের কী শারীরিক অসুবিধা হচ্ছিল, কী ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, সে সব কিছু জানি না।" সত্যজিৎ নামে এক সেবক সাইয়ের দেখাশোনা করতেন। সফিয়া তাঁকে আইসিইউয়ে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিলেন। তার পরেই সমালোচনার ঝড় ওঠে— শুধু সত্যজিৎ কেন? ভক্তেরা জানেন, সাইয়ের কাছে গরিব-বড়লোক ভেদাভেদ ছিল না। সেবাকাজে দশ টাকা দিলেও দু'প্যাকেট বিভূতি ও ছবি। দশ হাজার ডলার দিলেও তা-ই! সাই ট্রাস্টের হাসপাতালে চিকিৎসা হয় নিখরচায়। মেধার ভিত্তিতে ট্রাস্টের স্কুল-কলেজে ঢুকতে পারলে টিউশন ফি নেই, শুধু হস্টেল খরচ। অন্ধ্রের খরাপ্রবণ রায়লসীমা থেকে তামিলনাড়ু কিংবা মহারাষ্ট্রের লাতুুরে ট্রাস্টের উদ্যোগে চলছে সেচ, পানীয় জলের প্রকল্প। জাম্বিয়া, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, পেরুর মতো ৩৩টি দেশে চলছে সাই ট্রাস্টের শিক্ষা-প্রকল্প। সাইয়ের মৃত্যুর পরে কী হবে দেশ-বিদেশে এই বিপুল কর্মোদ্যোগের? সরকার কিছু ভূমিকা নেবে? ঘটনাচক্রে, এক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রের সিরডিতে সরকার-নিয়ন্ত্রিত ট্রাস্টের 'জনবিমুখতা'র প্রতিবাদে একটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আজ সকালে পুত্তাপুর্তির হাসপাতালে সত্য সাইকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী কিরণকুমার রেড্ডি জানিয়ে গেলেন, "এখানকার ট্রাস্ট চলবে তার নিয়মে। সরকার হস্তক্ষেপ করবে না।" আর ট্রাস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাসলেন সত্য সাইয়ের তেলুগু বক্তৃতার অনুবাদক অনিলকুমার— "বিবেকানন্দের অবর্তমানে কি রামকৃষ্ণ মিশন থেমে গিয়েছে? নশ্বর শরীর থাকবে না। কিন্তু তাঁর আদর্শটা তো থেকেই যাবে।" আপাতত সেই আশা নিয়ে বুক বাঁধতে পারে পুত্তাপুর্তি।
টু-জি চার্জশিটে আজ থাকতে পারে করুণার স্ত্রী-কন্যার নাম | নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি | টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআইয়ের দ্বিতীয় চার্জশিট ঘিরে ফের কংগ্রেস ও ডিএমকে-র মধ্যে টানাপোড়েন। স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির মামলার জন্য গঠিত বিশেষ আদালতে আগামিকাল দ্বিতীয় চার্জশিট পেশ করবে সিবিআই। তাতে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে-সুপ্রিমো করুণানিধির স্ত্রী দয়ালু আম্মাল, তাঁদের সাংসদ-কন্যা কানিমোঝি এবং তাঁদের কয়েক জন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নাম থাকবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। চার্জশিটে করুণানিধির স্ত্রী-কন্যার নাম থাকলে রাজ্য রাজনীতি তো বটেই, জাতীয় স্তরেও যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়তে হবে ডিএমকে-কে। করুণানিধির দল তাই কেন্দ্রীয় সরকার তথা কংগ্রেসের উপরে যথাসম্ভব চাপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। ডিএমকে শিবির থেকে এমনও বলা হচ্ছে যে, চার্জশিটে দয়ালু আম্মাল ও কানিমোঝির নাম থাকলে দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত এত বড় ঝুঁকি ডিএমকে নেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, তামিলনাড়ুতে ভোটগ্রহণ হয়ে গেলেও ফলপ্রকাশ হয়নি। ডিএমকে আবার ক্ষমতায় ফিরবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। বরং বিরোধী দলনেত্রী জয়ললিতাই কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একই সঙ্গে রাজ্যে ও কেন্দ্রে সরকারের বাইরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে করুণানিধি শিবিরে। উল্টো দিকে কংগ্রেস শিবিরও শরিক দলের চাপে মাথা নোয়ানো হবে, এমন কোনও ইঙ্গিত দিতে চাইছে না। বরং প্রধানমন্ত্রী তিন দিন আগেই মন্তব্য করেছেন, "সাধারণ মানুষ আর দুর্নীতি মেনে নিচ্ছে না।" কেন্দ্রের তরফে এ কথাও বলা হচ্ছে, সিবিআই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে। কাজেই চার্জশিটে কাদের নাম থাকবে, সেটা সিবিআই-ই ঠিক করবে। সিবিআই গত ২ এপ্রিল প্রাক্তন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এ রাজা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ আমলাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে। অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স টেলিকমের তিন শীর্ষকর্তা, ইউনিটেকের অন্যতম মালিক সঞ্জয় চন্দ্র এবং সোয়ান টেলিকমের দুই মালিকের নামও ছিল তাতে। রাজা ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে রিলায়্যান্স ও ইউনিটেকের কর্তারাও এখন তিহার জেলে বন্দি। সিবিআইয়ের বক্তব্য, প্রথম চার্জশিটে শুধুমাত্র স্পেকট্রাম বণ্টনে অনিয়মের ক্ষেত্রে সরাসরি জড়িতদের বিরুদ্ধেই তথ্যপ্রমাণ পেশ হয়েছিল। স্পেকট্রাম দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা কাদের ঝুলিতে গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখে তৈরি হয়েছে নতুন চার্জশিট। সে অর্থে দ্বিতীয় এই চার্জশিট আসলে প্রথমটিরই পরিপূরক। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে তা পেশ করা হবে বলে সিবিআই আগেই জানিয়েছিল আদালতকে। সিবিআইয়ের সন্দেহ, শাহিদ বালয়ার ডিবি রিয়েলটি সংস্থার মাধ্যমে স্পেকট্রাম বণ্টন থেকে পাওয়া ঘুষের আয়ের প্রায় ২০০ কোটি টাকা করুণানিধি-পরিবারের মালিকানাধীন কালাইগনার টিভি, সিনেযুগ ফিল্মসের মতো বিভিন্ন সংস্থার সিন্দুকে পৌঁছেছে। এ সংক্রান্ত কিছু তথ্যপ্রমাণও সিবিআইয়ের হাতে এসেছে। কাগজে-কলমে ওই টাকা ঋ ণ বলে দেখানো বলেও আসলে তা ঘুষের টাকা বলেই অভিযোগ। যা প্রমাণিত হলে স্পষ্ট হয়ে যাবে, এ রাজার যাবতীয় দুর্নীতি সম্পর্কে ডিএমকে-শীর্ষনেতৃত্ব পুরোপুরি অবগত ছিলেন এবং তাতে সম্মতিও ছিল তাঁদের। দয়ালু আম্মাল ও কানিমোঝিদের নাম উঠে আসছে এই সূত্রেই। কারণ, কালাইগনার টিভির ৬০ শতাংশ শেয়ারের মালিক দয়ালু আম্মাল। ডিএমকে-সাংসদ কানিমোঝিও ওই সংস্থার ২০ শতাংশ অংশীদার। বাকি ২০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে সংস্থার ম্যানেডিং ডিরেক্টর শরদ কুমারের কাছে। তাঁর নামও চার্জশিটে থাকার সম্ভাবনা। ঘুষের টাকার হাতবদলে কুসেগাঁও সংস্থারও ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ। সংস্থার দুই ডিরেক্টর, শাহিদ বালয়ার আত্মীয় আসিফ বালয়া ও রাজীব অগ্রবালের নামও চার্জশিটে থাকতে পারে। ইতিমধ্যেই এঁদের গ্রেফতার করেছে সিবিআই। চার্জশিটে রাজার আর এক ঘনিষ্ঠ সাদিক বাটচার ভূমিকার কথাও থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। সিবিআইয়ের জেরার পরেই রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় বাটচার। তাঁর মালিকানাধীন গ্রিনহাউস প্রোমোটার সংস্থায় এ রাজার কালো টাকা খাটছিল বলে সিবিআইয়ের সন্দেহ। বাটচা আত্মহত্যা করেছিলেন, নাকি আরও কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে তাঁকে খুন করা হয়েছে, তার তদন্ত চলছে।
শোকাহত সচিন জন্মদিনে প্রাতরাশ করলেন না | নিজস্ব প্রতিবেদন | এক দিকে সত্য সাইয়ের মৃত্যুতে শোকাহত, অন্য দিকে সারা দিন ধরেই এসে চলেছে ৩৮ তম জন্মদিনে একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা। গোটা ক্রিকেটবিশ্ব থেকেই আসছে অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা। আসছে ভারতরত্ন দেওয়ার বহুচর্চিত দাবিও। সচিন তেণ্ডুলকর নিজে বিকেলে আইপিএলের ম্যাচ খেলে ফের কমলা টুপির মালিক হলেও সত্য সাইয়ের মৃত্যুর জন্য নিজের জন্মদিন নিয়ে কোনও অনুষ্ঠানই করেননি। বরং তাঁর হোটেলের ঘরে সব সময়ই ঝুলছিল, 'ডু নট ডিস্টার্ব।' হায়দরাবাদের হোটেলে সচিনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি ও দুই সন্তান সারা ও অর্জুন। | | স্মৃতির সরণি বেয়ে: সে দিন ছিল সত্য সাইয়ের ৮০-তম জন্মদিন। '০৫ নভেম্বর। | শোকাহত সচিন সকালে প্রাতরাশই করেননি। হোটেলের ম্যানেজার বলছেন, "উনি সকালে কিছুই খাননি। কেউই ওঁর ঘরে ঢোকার অনুমতি পায়নি।" গতকালই টুইট করে সত্য সাইয়ের আরোগ্য কামনা করেছিলেন সচিন। সাই বাবার মৃত্যুর খবরের পরে সকালে রটে যায়, সচিন ম্যাচ না-ও খেলতে পারেন। কিন্তু দুপুরে টিম বাসে ওঠার আগে সচিন প্রচারমাধ্যমকে বলে দেন, "আমি খেলছি।" তার আগে দেখা করেন শুধু মুম্বই ইণ্ডিয়ান্স মালকিন নীতা অম্বানীর সঙ্গে। আর কারও সঙ্গে কোনও কথাই বলেননি। শোনা যাচ্ছে, সত্য সাইয়ের অন্তিম সংস্কারের অনুষ্ঠানেও যেতে পারেন সচিন। শোকাহত সচিনের জন্য অবশ্য শুভেচ্ছা এসেই চলেছে। বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য বিরাট কোহলি বলেছেন, "যখন ছোট ছিলাম, সব সময় সচিনকেই দেখতাম। ক্রিকেটার হিসেবে ওঁকেই সমানে রাখতাম। পরে দেখেছি শুধু মহান ক্রিকেটারই নয়, মানুষ হিসেবেও অসাধারণ। সব সময় টিমমেটেদর সাহায্য করেন। আমি চাই, আরও অনেক দিন যেন সচিন পাজি খেলে যেতে পারেন।" পেসার শ্রীসন্থ টুইট করে বলেছেন, "আপনিই সব সময়ই সেরা। | | সপরিবারে কমলা টুপির মালিক সচিন। স্ত্রী অঞ্জলি, কন্যা সারা এবং পুত্র অজুর্নের সঙ্গে। রবিবার হায়দরাবাদে।- এএফপি | আরও এগিয়ে যান, আমরা সবাই আমরা সবাই আপনাকে ভালবাসি। শুভ জন্মদিন।" এক সময় মুম্বই ইণ্ডিয়ান্সে খেলা সচিনের প্রাক্তন টিমমেট সৌরভ তিওয়ারি সোজাসুজি বলেছেন, "দেশের জন্য সচিন যা করেছেন, তাতে ভারতরত্ন সম্মান অবশ্য প্রাপ্য। ওঁর নামে কোনও পুরস্কার চালু করা উচিত, যাতে তরুণরা সেটা পেতে পারে নিজেদের কৃতিত্বের জন্য।" সচিনের নতুন টিমমেট অ্যাণ্ড্রু সাইমণ্ডস বলছেন, "জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা সচিনকে।" কলকাতা নাইট রাইডার্স পেসার লক্ষ্মীপতি বালাজি বলেছেন, "সচিন ভাই, আমরা সবাই আপনার জন্য গর্বিত। আরও অনেক বছর ধরে খেলে যান।" সচিনকে কিংবদন্তি হিসেবে বর্ণনা করে নভজ্যোৎ সিংহ সিধু বলেছেন, "দেশকে ও অনেক কিছু দিয়েছে। বিশ্বকাপও। দু'ধরনের ক্রিকেটে রান দেখুন। অবশ্যই কিংবদন্তি, যার কোনও তুলনা হয় না।" এ দিকে, ৩৮ ঘণ্টা ধরে ১৫০০ ফুটের সচিনের ছবি আঁকলেন জনৈক শিল্পী রাজ কপূর চিতোরা। গত তিন দিন ধরে টানা এই ছবি এঁকে চলেছেন তিনি। বলেছেন, ''আমার স্বপ্ন এটা সচিনকে উপহার দেওয়া। আশা করছি এক দিন পারব।"
লিখিত ক্ষমাপ্রার্থনা অনিলের | বুদ্ধের ভর্ৎসনা সত্ত্বেও শাস্তি নয় কেন, প্রশ্ন দলেই | নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | ভোট চলাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে দলের প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসুর কদর্য মন্তব্যের ক্ষতি সামলাতে দ্রুত আসরে নামল সিপিএম। দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে 'প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা' করে অনিলবাবুকে আপাতত সভা-সমাবেশে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশিই, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অনিলবাবু রবিবার লিখিত বিবৃতি দিয়ে তৃণমূল নেত্রী সম্পর্কে তাঁর মন্তব্যের জন্য 'ক্ষমা'ও চেয়েছেন। কিন্তু অনিলবাবুকে কোনও শাস্তি দেওয়ার পথে যাচ্ছে না আলিমুদ্দিন। সেই জন্যই এতে 'কাজের কাজ' কিছু হবে কিনা, তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরেই সংশয় রয়েছে। প্রশ্ন থাকছে, ভোটের ক্ষতি সামাল দেওয়ার তাগিদ না-থাকলে অনিলবাবুকে লাগাম পরাতে সিপিএম কি আদৌ এত 'তৎপর' হত? আরও 'তাৎপর্যপূর্ণ'— সিপিএমের দলীয় মুখপত্রে এ দিন অনিলবাবুর মন্তব্য এবং সেই সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বিবৃতির বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। অনিলবাবুর 'লিখিত ক্ষমাপ্রার্থনা' আলিমুদ্দিনে পৌঁছনোর পর সিপিএমের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখা থেকে যে দ্রুততায় তা জনসমক্ষে আনা হয়েছে, সেটা থেকেও স্পষ্ট যে, এই 'অতি-সক্রিয়তা' ভোটের কারণেই। কারণ, অতীতেও সিঙ্গুরের ধর্না থেকে মমতাকে 'চুলের মুঠি ধরে বার করে দেওয়া উচিত ছিল' গোছের 'অশালীন' মন্তব্য করেছিলেন অনিলবাবু। তখন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এ বারেও। | | অষ্টমের লক্ষ্যে। মুকুন্দপুরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার। —রাজীব বসু | এ দিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে প্রত্যাশিত ভাবেই অনিলবাবুকে নিয়ে পরপর প্রশ্নের মুখে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। যার জবাবে তিনি বলেন, "অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। উনি কদর্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা কেউই বরদাস্ত করতে পারে না। শনিবার রাতেই তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ওঁকে বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।" মুখ্যমন্ত্রী ওই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই অনিলবাবুর স্বাক্ষরিত লিখিত বিবৃতি জারি হয়। সেখানে অনিলবাবু বলেছেন, 'হুগলিতে একটি জনসভায় আমি বিরোধী দলনেত্রী সম্বন্ধে অসতর্ক হয়ে যে উক্তি করেছি, তা মোটেই উচিত হয়নি। এটা আমাদের পার্টির নীতি ও সংস্কৃতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ ব্যাপারে জনমানসে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা আমি উপলব্ধি করেছি। ওই ভাষা প্রয়োগের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।' শুক্রবার আরামবাগে অনিলবাবুর প্রকাশ্যে কদর্য মন্তব্যের বিষয়টি শনিবার সকালে গোচরে আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী তাকে 'ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ' বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু শনিবার দিনভর এবং রাতেও অনিলবাবু তাঁর অবস্থান থেকে নড়েননি। উল্টে মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম বিবৃতির পর অনিলবাবু প্রশ্ন তুলেছিলেন, "আমি কী আক্রমণ করেছি, তা-ই তো বুঝতে পারছি না!" শেষ পর্যন্ত তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনার বিবৃতি এল মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনার ২৪ ঘণ্টারও বেশি পরে। তা-ও শনিবার রাতে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে আরও এক দফা তিরস্কারের পরে! সিপিএমের একাংশের মতে, রবিবার 'গণবিক্ষোভ' বাড়তে দেখে অনিলবাবুকে দিয়ে তড়িঘড়ি 'ক্ষমাপ্রার্থনা' লিখিয়ে অবস্থা সামাল দিতে চাওয়া হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর মতে 'ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ' করার পরেও শুধু 'ক্ষমা' চেয়ে অনিলবাবু পার পেয়ে যাচ্ছেন কী করে? কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল না? সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, "প্রথমত, ঘটনা ঘটার পরে আমি এবং আমাদের দলের রাজ্য সম্পাদক প্রকাশ্যে তাঁকে ভর্ৎসনা করেছি। দ্বিতীয়ত, তাঁকে হুঁশিয়ারি দিয়েছি। ওই ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। তৃতীয়ত, রাতে তাঁকে বলা হয়েছে, ক্ষমা চাইতে হবে। একটু অপেক্ষা করুন! এই রকম কাজ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবেনা। শাস্তি পেতে হবে।" অনিলবাবুর মন্তব্যের প্রভাব ভোটে পড়বে কি? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "মানুষ আমাদের সকলকে চেনেন। দলটা তো এ রকম হয়ে যায়নি! দু-এক জনের হয়তো মাথা খারাপ হয়েছে! মাথাটা ঠিক করতে হবে! না-পারলে ব্যবস্থা নিতে হবে।" তবে এ দিনই সন্ধেয় নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নাম না-করে অনিল কাণ্ডে তীব্র কটাক্ষ করেছেন কবি শঙ্খ ঘোষকে। তাঁর কথায়, "অনিলবাবু ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। শুধু দলের কাছে নয়, প্রকাশ্যে তাঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে। এটাই আমাদের দল। কিন্তু কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আছেন, যাঁরা আমাদের দলের কেউ এমন অপরাধ করলে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। দক্ষিণপন্থী দলের দিক থেকে আমাদের দিকে আক্রমণ এলে তখন কিছু বলেন না। ওঁদের দুটো কান। বাঁ দিকের কানটা খোলা থাকে। ডান দিকেরটা বন্ধ!" প্রসঙ্গত, আরামবাগের সভায় প্রকাশ্যেই তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের উপমা টেনেছিলেন প্রাক্তন সাংসদ অনিলবাবু। শনিবার এক বিবৃতিতে তার কড়া সমালোচনা করে শঙ্খবাবু বলেন, "তাঁর ভাষায় ও শারীরিক ভঙ্গিতে যে অশালীনতা ও হিংস্রতার প্রকাশ দেখা গেল, তার নীচতা এবং ভয়ঙ্করতায় আমি স্তম্ভিত।" এতে 'বামফ্রন্টের প্রকৃত মুখচ্ছবি' দেশের মানুষ বুঝতে পারলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ দিন অনিলবাবুর কড়া সমালোচনা করেছে 'শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চ'-ও। মমতা এ দিন অনিলবাবুর নাম না-করে নির্বাচনী প্রচারে বলেন, "ওরা ভুল করলে আমরা করব না। ওরা যত খারাপ কথা বলুক, আমরা বলব না। ওরা আমায় যত পারে খারাপ কথা বলুক, আমায় যত পারে আঘাত করুক, মানুষের যেন ক্ষতি না-করে। আমায় যত খুশি গালাগাল দাও। তোমরা (সিপিএম) ভাল মানুষ হও।" পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর নাম না-করে মমতা বলেন, "মুখে গালাগালি দেবে আর তার পর মুখোশ বলবে, না, এটা ঠিক হয়নি! আসলে এ হল চোরকে চুরি করতে বলে গৃহস্থকে সতর্ক হতে বলার মতো!" খগলির গোঘাটে নির্বাচনী প্রচারে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় অনিলবাবুর নাম না-করে বলেন, "এক সিপিএম নেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ অভব্য, বিকৃত মন্তব্য করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে। এর প্রতিবাদ তো অনেক ভাবেই করা যায়! কিন্তু সিপিএম যত দিন না তাঁকে শাস্তি দিচ্ছে, ধিকৃত ও বহিষ্কৃত করছে, তত দিন ওই দলের কাউকে একটিও ভোট দেবেন না। সেটাই হবে আসল প্রতিবাদ!" কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, "মানকে (মানিক) রায় নাম ভাঁড়িয়ে অনিল বসু হয়েছেন! তাঁর মতো কুলাঙ্গারের গালাগালের প্রতিকার চাইলে ঘরে বসে থাকলে হবে না। মমতাকে যে ভাষায় কথা বলেছে, তার জবাব দিতে হলে মাঠে আসুন।" অনিলবাবুর মন্তব্য নিয়ে বিক্ষোভের ঝড় এ দিনও অব্যাহত। এ দিনই আরামবাগে, উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায় কয়েকশো মহিলা তৃণমূল কর্মী ধিক্কার-মিছিল করেন। অনিলবাবুর কুশপুতুল পোড়ানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, তাঁদের দলে 'ভাল কর্মী'র সংখ্যা অন্যান্য দলের চেয়ে বেশি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, "বিরোধীরা আমায়, গৌতমকে (আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব) আক্রমণ করছেন। এত কুৎসিত কথার জবাব দিতেও ভাল লাগে না!" কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রাথমিক ভর্ৎসনার পরেও শনিবার খানাকুলে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে একটি জনসভায় বক্তৃতা করেন অনিলবাবু। দুঃখপ্রকাশ করার আগেই কী ভাবে আবার জনসমক্ষে বক্তৃতা করলেন? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "সে ব্যাপারেও ওঁকে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। জনসভা তিনি করবেন না।" মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তাঁদের দলে এ ধরনের আচরণ 'বরদাস্ত' করা হবে না। ঘটনাচক্রে, কিছু দিন আগেই হুগলি জেলারই বাঁশবেড়িয়ায় 'পরিবর্তনপন্থী' নাট্যকার অর্পিতা ঘোষের 'পশুখামার' নাটক বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জেলা রাজনীতিতে অনিলবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা এবং আর এক প্রাক্তন সাংসদ রূপচাঁদ পালকে তিরস্কার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীই। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রেও দলীয় স্তরে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে প্রশ্ন থাকছেই যে, 'কঠিন' ভোট বলেই কি অনিল-রূপচাঁদদের প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করে দলের ভাবমূর্তি বাঁচানোর এই চেষ্টা? রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত জানান, অনিলবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে হুগলির জেলাশাসকের রিপোর্ট এ দিন তাঁদের কাছে জমা পড়েছে। তিনি বলেন, "জেলাশাসক অনিলবাবুর বক্তৃতার ভিডিও-ক্লিপিংস, বয়ান ইত্যাদি পাঠিয়েছেন। তা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।" বন্ধ, পথ-জুড়ে সভা নিষিদ্ধ হবে, আশ্বাস মমতার | নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | তাঁর সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় এলে প্রয়োজনে কঠোর আইন করে বন্ধ-অবরোধ তুলে দেবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেট্রো চ্যানেলের মতো রাস্তা আটকে রাজনৈতিক সভা করাও বন্ধ হবে। প্রাথমিক ভাবে মমতা জানিয়েছেন, শহরে একমাত্র শহিদ মিনার ময়দান নির্দিষ্ট হবে সভা-সমাবেশের জন্য। তাঁর কথায়, "যারা সভা করতে চাইবে, তারা ১৫ দিন আগে আবেদন করবে। তার পর 'আগে এলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া হবে। কেন এমন সিদ্ধান্ত? মমতার জবাব, "কারণ, মানুষই প্রথম! মানুষের ভোগান্তি করে কিছু হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর এটা বোঝা উচিত। কারণ, মানুষকে সঙ্গে নিয়েই রাজনীতি।" গত প্রায় তিন বছর মমতা নিজে কোনও বন্ধ ডাকেননি। তাঁর জোটসঙ্গী এসইউসি বন্ধ ডাকলেও তা সমর্থন করেননি। নেতাইয়ের মতো ঘটনা বন্ধ ডাকার পক্ষে 'উপযুক্ত' হলেও তৃণমূল নেত্রী সেই রাস্তায় হাঁটেননি। এমনকী, অবরোধও করেননি। দলের অন্দরেও তিনি ইতিমধ্যেই ফরমান জারি করেছেন, দলের শীর্ষনেতাদের অনুমোদন ছাড়া কোথাও রাস্তা অবরোধ করা যাবে না। তবে পথ আটকে সভা করার ব্যাপারে এখনও কোনও নিষেধাজ্ঞা দারি করেননি মমতা। প্রতি বছর একুশে জুলাই ধর্মতলার মোড় জুড়ে তাঁর বৃহত্তম 'শহিদ সমাবেশ' করেন তিনি। যদি তৃণমূল ক্ষমতায় আসে, তা হলে শহিদ মিনার ময়দানের 'স্থায়ী এলাকা'য় সরিয়ে নেওয়া হয় কিনা, দেখার সেটাও। | | চা-বিরতি। টালিগঞ্জে সভার ফাঁকে রবিবার। —অশোক মজুমদার | রবিবার গভীর রাতে স্টার আনন্দে এক সাক্ষাৎকারে 'প্রশাসক' হিসেবে তিনি যে যথেষ্ট 'কঠোর', তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, "কাজে ফাঁকি আমি সহ্য করি না। এমনিতে আমি খুব নরম মনের মানুষ। কিন্তু কাজের ব্যাপারে আমি খুব রাফ-অ্যাণ্ড-টাফ।" কাজের ক্ষেত্রে তিনি যে শ্রমিক ইউনিয়নের বাধা মানবেন না, তা-ও জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, "এক দিনে ইউনিয়ন ভেঙে যাবে! আমার বিশ্বাস, যাঁরা সত্যিই বামপন্থী ইউনিয়ন করেন, তাঁরা আমায় সাহায্যই করবেন।" মমতার কথায়, "ইউনিয়ন আসে-যায়। ও সব আমি অনেক দেখেছি। যখন যে ক্ষমতায় থাকে, ইউনিয়ন তাদের দিকেই থাকে। আমার রেলেও তো ইউনিয়ন আছে। তারা কি আমার সঙ্গে অসহযোগিতা করে? এখানেও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের সহযোগিতা পাব আমরা। কারণ, আমরাও মনে করি, শ্রমিকদের ঠকানো অনুচিত।" তাঁর আরও বক্তব্য, "আমি আন্দোলনের লোক। আন্দোলন কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা আমি জানি।" শিক্ষা-স্বাস্থ্য-প্রশাসন— তিনটি বিষয়েই 'নিরপেক্ষতা' বজায় রাখতে চান 'প্রশাসক' মমতা। শিক্ষাক্ষেত্রে 'দলতন্ত্রের' অবসান ঘটানো হবে। কিন্তু তার জন্য কোনও কমিটি গঠনের পক্ষপাতী নন তিনি। তবে মমতার বক্তব্য, "মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারটাকে আমি শ্রদ্ধা করি। ভালবাসি না। ওরা যে ভাবে এই চেয়ারকে কলঙ্কিত করেছে, তাতে ওই চেয়ারকে ভালবাসা যায় না। মানুষের কাছে আমার দায়বদ্ধতা আছে বলে হয়তো আমি ওই চেয়ারে বসে কাজ করব।" ক্ষমতায় এলে দশ বছর সময় তাঁকে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এবং জানিয়ে দিয়েছেন, প্রথম দশ বছর কোনও বাধা (তাঁর কথায়, 'বাঁদরামি') বরদাস্ত করা হবে না। তখন শুধু উন্নয়নের কাজ হবে। মমতার বক্তব্য, "যারা কাজ করতে জানে, তারা উন্নয়নের ডাণ্ডাও ঘোরাতে জানে। প্রথম প্রথম ওরা বেগড়বাঁই করবে জানি। কিন্তু কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।" পাশাপাশিই তাঁর সাফ কথা, "এক দিনে তো সব কিছু করতে পারব না! সময় লাগবে।" মুখ্যমন্ত্রী হলেও তিনি কালীঘাটের বাড়ি ছাড়বেন না। এবং তাঁর মন্ত্রিসভা হলে তা শপথ নেবে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউণ্ডে। জানিয়েছেন মমতা নিজেই। সঙ্গে আবার জানিয়েছেন, তাঁর মন্ত্রিসভা ছোট হবে। সকলের মন্ত্রী হওয়ার 'ইচ্ছা' পূরণ করা যাবে না। মমতার কথায়, "নীতি ঠিক করতে হবে। যাঁরা মন্ত্রী হবেন, তাঁরা উপযুক্ত মানুষ হবেন। প্রশাসনিক সংস্কার করতে হবে। রাজনীতি বাদ দিয়ে প্রশাসনের কাজ হবে। দলের ঊর্ধ্বে উঠে। পুলিশকেও রাজনীতির বাইরে রাখা হবে।" মিটিং-মিছিল সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা ছাড়াও মমতা সাক্ষাৎকারে (টানা সভার ধকলে খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়ায় মাঝপথেই বার দুয়েক বিরতি নিতে হয়) সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, পরিবেশের ক্ষতি করে এ রাজ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়া হবে না। প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি নির্দিষ্ট হয়েছিল। কিন্তু তার পর মূলত স্থানীয় তৃণমূলের বাধায় তা আটকে যায়। তার পিছনে যে দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর সমর্থন ছিল, তা এ দিন মমতার কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, "হরিপুরে পরমাণু কেন্দ্র হবে না। ওটা ঘিঞ্জি এলাকা। মাছ মারা যাবে। জায়গা বদলানো হবে। যেখানে পরিবেশ উপযুক্ত, সেখানে হবে। এ রাজ্যেই যে হবে, তার কোনও মানে নেই। অন্য রাজ্যেও হতে পারে।" বস্তুত, পরিবেশের কারণেই যে নয়াচরেও কেমিক্যাল-হাব হবে না, তা-ও জানিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, "ওখানে কোনও পরিবেশ-বান্ধব শিল্প হোক। দরকারে ওখানে একটা পাখিরালয় করা যেতে পারে।" বিরোধী জোটে গোঁজ নিয়ে মমতা বরাবরই কঠোর। সাক্ষাৎকারেও তা স্পষ্ট জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, "এই ভোটে গোঁজ প্রার্থীদের কোনও জায়গায় নেই।" বস্তুত, এ দিনই মেটিয়াবুরুজ এবং গার্ডেনরিচে কংগ্রেসের শীর্ষনেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে জোটপ্রার্থীদের সমর্থনে সভা করেছেন মমতা। ওই এলাকার দু'টি আসনে টিকিট না-পেয়ে নির্দল দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের দুই বিধায়ক রাম পেয়ারি রাম ও আব্দুল খালেক মোল্লা। এ দিনের সভায় কারও নাম না-করেই প্রণববাবু বলেন, "কোনও কোনও মানুষ টিকিট না-পেয়ে অসন্তুষ্ট হতে পারেন। তাঁদের রাজনৈতিক উচ্চাশা থাকতেই পারে। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন ছিল জোট করার। প্রয়োজন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস নিয়ে আসার যে, কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট করে বামফ্রন্টকে আটকাতে পারে।" মমতার নেতৃত্বে 'নতুন বাংলা গঠন করে ৩৪ বছরের জগদ্দল পাথরকে সরিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে রাজ্যের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া'র জন্যই যে জোটের প্রয়োজন, তা ফের বলেন প্রণববাবু। সমালোচনার জবাব | মনমোহন-মমতা বিভাজনের চেষ্টায় বুদ্ধ | নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার পাল্টা জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু একই সঙ্গে চেষ্টা করলেন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে প্রধানমন্ত্রীকে 'আলাদা' করার। এটা বুঝিয়ে যে, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট 'সুসম্পর্ক' রয়েছে। নিছক 'রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার' কারণেই শনিবার কংগ্রেস-তৃণমূলের প্রথম যৌথ প্রচারের মঞ্চ থেকে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন মনমোহন সিংহ। সিপিএমের একাংশ জানাচ্ছে, মমতার থেকে প্রধানমন্ত্রীকে 'আলাদা' করে দেখাতেই বুদ্ধবাবুর এই 'দ্বিমুখী কৌশল'। অতীতেও বুদ্ধবাবু এবং তাঁর দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু একাধিক বার তৃণমূল থেকে কংগ্রেসকে 'পৃথক' করার কৌশল নিয়েছেন। শনিবার প্রধানমন্ত্রী মমতার সঙ্গে যৌথ সভা করেন দমদমে। প্রধানমন্ত্রী যে সব বিষয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছিলেন, রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী তার জবাব দিতে গিয়ে বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত নন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, শিল্পায়ন থেকে শুরু করে যে সমস্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের সমালোচনা করেছেন, দিল্লিতে গেলে তিনি সে সব বিষয়েই রাজ্য সরকারের প্রশংসা করেন! পাশাপাশি, রেলমন্ত্রীর কিছু কাজে প্রধানমন্ত্রী 'ক্ষুব্ধ' বলেই বুদ্ধবাবুর দাবি। বুদ্ধবাবু এ দিন তারও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "পণ্য করিডর নিয়ে জাপানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। | সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: রাজীব বসু।
| দেশের উন্নয়নের হার ৮%। এটা প্রধানমন্ত্রীর আনন্দের বিষয়। কিন্তু এই বৃদ্ধি আরও বাড়াতে পণ্য করিডরের প্রয়োজন। কিন্তু এখনও তার কাজ শুরু হল না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী অসন্তুষ্ট। যদিও তা নিয়ে সভায় কোনও কথা বলেননি!" সিঙ্গুরে যা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী তা-ও পছন্দ করেননি বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে আমার একটু অবাক লাগছে। উনি কখন আবিষ্কার করলেন, বামফ্রন্ট সরকার চলছে না।! দিল্লিতে ওঁর সঙ্গে দেখা করে, কথা বলে তো কখনও এমন |
| ধারণা পাইনি! রাজ্যে কৃষকদের জমি বণ্টন হচ্ছে কিনা, শালবনিতে ইস্পাত কারখানার অগ্রগতি কী হচ্ছে, জাপানি বিনিয়োগ কী হচ্ছে— এ সব ব্যাপারেই উৎসাহের সঙ্গে উনি কথা বলেছেন। জিজ্ঞাসা করেছেন। ওঁর অন্য রকম বক্তব্য দেখে অবাক লাগল। অবশ্য নির্বাচন এলে এমন অনেক কথাই বলতে হয়। উনি তো রাজ্যে বিরোধী দলের হয়ে প্রচারে এসেছেন!" মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট, প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনাকে তিনি রাজনীতির বাধ্যবাধকতা হিসেবে দেখছেন। 'প্রকৃত' সমালোচনা হিসেবে নয়। এবং সেই সূত্রেই এ রাজ্যের মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী একমত নন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অসম, গুজরাতের মুসলিমরাও এ রাজ্যের মুসলিমদের চেয়ে ভাল আছেন। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "সংখ্যালঘুরা নাকি অন্য রাজ্যে, গুজরাতে, এ রাজ্যের থেকে ভাল আছেন। মনমোহন সিংহের কাছ থেকে আমি এ কথা আশা করিনি। এ রাজ্যের মুসলিমরা গুজরাতের থেকে অনেক শান্তিতে আছেন। ওখানে মুসলিমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটান। কিন্তু এখানে তাঁরা শান্তিতে বসবাস করেন।" রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী স্বয়ং বুদ্ধবাবু। প্রধানমন্ত্রীর মুসলিম নিয়ে কটাক্ষ তাই সরাসরি তাঁকেই বিদ্ধ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "দুর্ভাগ্যজনক যে প্রধানমন্ত্রী বললেন, এ রাজ্য থেকে গুজরাতে সংখ্যালঘুরা ভাল আছেন! প্রধানমন্ত্রীর এ কথা মুসলিমরা মানবে না। কেউই মানবে না।" মূল্যবৃদ্ধি বা মাওবাদী-প্রশ্ন (যাকে প্রধানমন্ত্রীই দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বৃহত্তম বিপদ বলেন) নিয়ে একটি শব্দও যে মনমোহন উচ্চারণ করেননি, তা-ও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাম শাসনে শিক্ষা ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে গিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ক্ষমতায় এলে প্রেসিডেন্সির হৃতগৌরব ফেরানোর চেষ্টা হবে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পাল্টা বলেন, ''সর্বভারতীয় গড়ের তুলনায় এ রাজ্যে সাক্ষরতার হার বেশি। আর প্রেসিডেন্সি কলেজকে আমরাই বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। দিল্লি থেকে পরামর্শ আসেনি! ভবিষ্যতেও প্রেসিডেন্সি কলেজকে আমরাই উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলব।" এ ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী কথার বিচারের ভার বুদ্ধবাবু রাজ্যবাসীর উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। | জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণেই কি শনিবারের সভায় প্রধানমন্ত্রী রাজ্য সরকারের সমালোচনা সংবলিত লিখিত বক্তৃতা পাঠ করলেন? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "লিখিত ভাষণে আপত্তি নেই। তিনি লিখিত ভাষণ পড়তেই পারেন। আগেও বহু বার পড়েছেন। কিন্তু আপত্তি বিষয়বস্তু নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটা তাঁর মনোভাব নয় বলেই জানি।" এক সময়ে মনমোহন সিংহ দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বুদ্ধবাবুকে শংসাপত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি সমালোচনা করছেন। তা হলে কি বুদ্ধবাবু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়ন পরিবর্তিত হয়েছে? জবাবে বুদ্ধবাবু বলেন, "প্রধানমন্ত্রী আমার সম্পর্কে কখন কী বলেছেন জানি না! প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব বদলানো নিয়ে চিন্তিত নই। রাজ্যের মানুষ কী বলছেন, সেটাই আসল কথা।" | |
| বস্তুত, বুদ্ধবাবু বার বার বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক যেমন আছে, শনিবার সমালোচনার পরেও তেমনই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁর বার্তা কী? জবাবে বুদ্ধবাবু বলেন, "তাঁর প্রতি আমার কোনও বার্তা নেই। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে আমাকে যা বলেছেন, নির্বাচনের আগে তিনি সে সব কথার পরিবর্তন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাজ করেছেন। আমি আমার কাজ করেছি। ভোটের আগে প্রত্যেককেই কিছু কথা বলতেই হয়। প্রধানমন্ত্রীও সে ভাবেই বলেছেন।" প্রধানমন্ত্রীর কথায় 'ব্যথিত' বামফ্রন্ট শরিক সিপিআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দুভূষণ বর্ধনও। এ দিন কলকাতায় বর্ধন বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে দুঃখ পেলাম। তিনি নিজেই এমন একটি সরকার চালাচ্ছেন, যার বিরুদ্ধে বৃহত্তম কেলেঙ্কারির অভিযোগ। টু-জি স্পেকট্রাম, কমনওয়েলথ প্রভতি একের পর এক কেলেঙ্কারি। কে তার দায়িত্ব নেবে? ওঁদের সরকার পরিচালনার নীতির জন্যই এ দেশে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে এত দুস্তর ব্যবধান।" প্রধানমন্ত্রী এবং সনিয়া গাঁধীর অভিযোগের জবাবে বর্ধন আরও বলেন, "গত ৩৪ বছরে এ রাজ্য পিছিয়ে গিয়েছে? ওঁরা তো অনেক তথাকথিত পরিসংখ্যান দিচ্ছেন। আমি একটা পরিসংখ্যান দিই। এ বছর এ রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ২১ শতাংশেরও বেশি সংখ্যালঘু। বামফ্রন্টের কর্মসূচি ছাড়া এটা হত?" নির্দলদের ভোট নয়, মমতাকে পাশে রেখে সাফ কথা প্রণবের | নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | কলকাতা বন্দর ও মেটিয়াবুরুজে জোটে গোঁজের কাঁটা বিঁধে রয়েছে। কিন্তু কাঁটার ঘায়ে জোট যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রদীপ ভট্টাচার্যর মতো কংগ্রেসের দুই প্রবীণ নেতা সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে সরাতে জোট সমর্থিত তৃণমূল প্রার্থীদেরই ভোট দেওয়ার আবেদন জানালেন। রাজ্যে তৃতীয় দফা ভোট কাল, বুধবার। কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনার ৭৫টি আসনে ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘন্টা আগে খিদিরপুর ও গার্ডেনরিচে রবিবার দু'টি জনসভায় আলাদা আলাদাভাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রদীপবাবু ও প্রণববাবু এই আবেদন করেন। কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে কংগ্রেসের বিদায়ী বিধায়ক রাম পেয়ারি রাম দলীয় টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছেন। একই ভাবে মেটিয়াবুরুজে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের বিদায়ী বিধায়ক আব্দুল খালেক মোল্লা। এ দিন মেটিয়াবুরুজ ও বন্দর কেন্দ্রের সীমানায় গার্ডেনরিচের পাহাড়পুর এলাকার বাঁধাবটতলায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের যৌথ সভায় রাম পেয়ারে ও খালেক মোল্লার নাম না করলেও প্রণববাবু বলেন, "কোনও কোনও মানুষ টিকিট না পেয়ে অসন্তুষ্ট হতে পারেন। তাঁদের রাজনৈতিক উচ্চাশা থাকতেই পারে। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন ছিল জোট করার। জোট করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস নিয়ে আসা যে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট করে বামফ্রন্টকে আটকাতে পারে।" মমতার নেতৃত্বের 'নতুন বাংলা গঠন করে ৩৪ বছরের জগদ্দল পাথরকে সরিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে রাজ্যের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া'র জন্যই যে জোটের প্রয়োজন তা ফের এ দিন প্রণববাবু বলেন। | | গার্ডেনরিচে যৌথ সভায় প্রণব মমতা। —অশোক মজুমদার | তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনের শুরু হয়েছে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে। কিন্তু আজকে জোট নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।" মমতাকে 'বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী' বলে উল্লেখ করে প্রণববাবু বলেন, "সিঙ্গুর নিয়ে মমতার ২৬ দিনের অনশন, নন্দীগ্রাম নিয়ে ওর নেতৃত্বে আন্দোলন জোটের পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করেছিল। গত লোকসভা নির্বাচনে সেই জোট করে আমরা বামফ্রন্টের দুর্ভেদ্য দুর্গকে ভেঙে তছনছ করে দিতে পেরেছি। মানুষের মনে বিশ্বাস আনতে পেরেছি আমরা জোট করে বামফ্রন্টকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারি।" তবে প্রণববাবু সরাসরি কারও নাম না করলেও প্রদীপবাবু ও স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতা বিশ্বজিৎ লালা এ দিন খিদিরপুরের বাবুবাজারে কংগ্রেস-তৃণমূলের যৌথ সভায় রাম পেয়ারেকে ভোট না দেওয়ার আবেদন জানান। কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত খিদিরপুরের এই এলাকার সভায় প্রদীপবাবু বলেন, "কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ফিরহাদ (ববি) হাকিম জাতীয় কংগ্রেস সমর্থিত জোট প্রার্থী তাঁকে ভোট দিন। রাম পেয়ারে রাম এখন কংগ্রেসের কেউ নন। ববি হাকিমই জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী।" এখানে মমতা সরাসরি রাম পেয়ারে রামকে 'সিপিএম মদত দিচ্ছে' বলে অভিযোগ করে বলেন, "এখানে কোনও নির্দলকে ভোট নয়। এখানে যুদ্ধ হচ্ছে। সেই যুদ্ধে একপক্ষ জিতবে। অন্যপক্ষ হারবে। এর মাঝে আর কোনও কথা নেই। আর কেউ নেই। আর এই যুদ্ধে যারা শত্রুপক্ষকে মদত দেয় তাদের বেইমান বলা হয়।" পাশাপাশি তিনি এখানে বিজেপি প্রার্থীকেও ভোট না দেওয়ার আর্জি জানিয়ে বলেন, "বিজেপি বামবিরোধী ভোট কাটতে সিপিএমের হয়ে নেমেছে। বিজেপিকেও কোনও ভোট নয়।" এ দিন খিদিরপুর ও গার্ডেনরিচের সভায় কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা ও কর্মীরা মিছিল নিয়েও আসেন। গড়িয়া রেল স্টেশনের কাছে সোনারপুর উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে সভাতেও কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ছিলেন। মমতা বলেন, "কংগ্রেস-তৃণমূল একজোট হয়ে বাংলা থেকে সিপিএমের অপশাসন দূর করব।" মজুত হচ্ছে অস্ত্র | হিংসা রুখতে সক্রিয় নারায়ণন | জয়ন্ত ঘোষাল • কলকাতা | দু'দিন আগের কথা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার আর কে পচনন্দার নির্দেশে বেলেঘাটার একটি ক্লাবে হানা দেয় পুলিশবাহিনী। গোয়েন্দা সূত্রে খবর ছিল, ক্লাবে অস্ত্রশস্ত্র মজুত করা হয়েছে। ক্লাবটি সিপিএমের আশ্রয়ে লালিত। তবু থেমে থাকেনি পুলিশি অভিযান। ক্লাবঘর থেকে উদ্ধার হয় ২৫টি তাজা বোমা, ৬০টি কার্তুজ এবং বেশ কিছু রিভলভার। ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি, দু'জনেই স্থানীয় সিপিএম কর্মী। তাঁরা পলাতক। পলাতক ক্লাবের আরও কিছু সদস্য। পুলিশ ক্লাবটি 'সিল' করে দেয়। | | আপাত দৃষ্টিতে ছোট এই ঘটনাটির মধ্যেই কিন্তু সিন্ধু দর্শন করছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তিনি মনে করছেন, রাজনৈতিক হিংসা কবলিত রাজ্যের একটি খণ্ডচিত্রই উঠে এসেছে এই ঘটনার মধ্যে। ভোটকে কেন্দ্র করে সেই হিংসা যাতে কোনও ভাবেই বাড়তে না পারে, সে জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। রোজকার হাল-হকিকত নিয়ে নিয়ম করে খবরও নিচ্ছেন। গোয়েন্দারা বলছেন, দু'দলেই নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে |
| মাফিয়ারা রয়েছে, এটা সত্যি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসতে পারে ধরে নিয়ে তাদের অনেকেই সে দিকে ভিড়তে চাইছে, এটাও সত্যি। কিন্তু অস্ত্র মজুতকারীদের একটা বড় অংশই এখনও সিপিএম-ঘনিষ্ঠ। এখন যে তারা অস্ত্র মজুতে সক্রিয় হতে চাইছে, তার পিছনেও কারণ রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের খবর, ভোটের দিন গোলমাল বাধানোটা এখন বড় লক্ষ্য নয়। ভোটের দিন হিংসার আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে না দিলেও গোয়েন্দারা মনে করছেন, ২৭ এপ্রিল নয়, এই 'প্রস্তুতির' মূল লক্ষ্য ১৩ মে। তৃণমূল যদি জেতে, তা হলে কী হবে— এই চিন্তায় সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাববোধ কাজ করছে। পুলিশের আশঙ্কা, 'পরিবর্তন' হলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এরা মরিয়া হয়ে বড় ধরনের ঝামেলা বাধাতে পারে। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, শুধু কলকাতাই নয়, জেলায় জেলায় বেশ কিছু গোপন ঘাঁটিতে অস্ত্র মজুতের কাজ চলছে। রাজ্যপাল এ ব্যাপারে যথেষ্টই উদ্বিগ্ন। শুধু রাজ্যপালই নন, উদ্বেগ রয়েছে দিল্লিরও। সম্প্রতি সেখানে ডিজি-আইজিদের সম্মেলনে একটি রিপোর্ট পেশ করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাতে দেখা গিয়েছে, সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত হিংসা না হলেও রাজনৈতিক হিংসায় পশ্চিমবঙ্গ অন্যদের থেকে অনেক 'এগিয়ে'। রাজ্যপাল নিজেও প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন। কাল কেশপুর-গড়বেতায় সভা করতে আসছেন চিদম্বরম। এক সময় রাজনৈতিক হিংসার অন্যতম উদাহরণ এই এলাকা সম্পর্কেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোঁজখবর নেবেন বলে জানা গিয়েছে। খোঁজ নেবেন সামগ্রিক ভাবে রাজ্য সম্পর্কেও। কয়েক দিন আগে রাজভবনে পুলিশি প্রস্তুতি নিয়ে যে বৈঠক হয়, সেখানে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ কমিশনার এবং গোয়েন্দা কর্তাদের সামনেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক হিংসা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন রাজ্যপাল। প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধানের ফরমান মেনে এখন গোটা রাজ্যে এবং ২৭ তারিখের দিকে তাকিয়ে শহর কলকাতায় ব্যাপক পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। তল্লাশি চলছে যাবতীয় জঞ্জালের গাদায়। কারণ, বোমা বা অস্ত্র লুকিয়ে রাখার অন্যতম ক্ষেত্রই হল জঞ্জালের স্তূপ। রাজভবন সূত্রে জানা যাচ্ছে, কলকাতা পুলিশ এর মধ্যেই ৩২০০ জনকে গ্রেফতার করেছে। যে দলে সিপিএম কর্মীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে আরও অনেকের নামে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের নিয়ম করে আদালতে হাজির করানো হচ্ছে। পুলিশের আপাতত লক্ষ্য, ২৭ তারিখ পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা। পরবর্তী পর্বে এদের ১৩ তারিখ পর্যন্ত আটকে রাখার কথাও ভাবা হবে। দু'দিন ধরে রাতে টহল দিতে বেরোচ্ছেন পুলিশ কমিশনার। প্রতিটি থানায় তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকেও নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করছেন তাঁরা। পুলিশের যৌথ কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স) রোজ রাজ্যপালের কাছে রিপোর্ট দিচ্ছেন। কোন সভায় কত লোক হচ্ছে এবং কত পুলিশ থাকছে, রাজ্যপালকে বিস্তারিত জানানো হচ্ছে। লালবাজারের পাশাপাশি আলিপুর, মৌলালির মতো জায়গায় আরও কয়েকটি স্যাটেলাইট কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, ভোটের দিন কলকাতায় ৭ হাজার বিএসএফ জওয়ান এবং কলকাতা পুলিশের ২০ হাজার কর্মী মোতায়েন থাকবেন। প্রতিটি থানা থেকে তিনটি মোবাইল ভ্যান এবং তিনটি করে মোটরবাইক নির্বাচনী কেন্দ্রে টহল দেবে। কিছু দিন আগে শ্যামপুকুর থানার ওসি-র বিরুদ্ধে সিপিএম কর্মীদের আড়াল করার অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধীদের অভিযোগ জমা পড়ার আগে, ঘটনাটি জানতে পারা মাত্রই সক্রিয় হয়েছিল পুলিশ। পুলিশি তৎপরতায় এই 'পরিবর্তন' অনেকেরই চোখে পড়েছে। রাজ্যপাল নিজেও কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ভোটের পরে হিংসা সামলানো যে বড় পরীক্ষা, সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন মমতা জেলায় জেলায় নির্দেশ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, দলের ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-বিমান বসুরাও সচেষ্ট। মানুষ অনেক কথা ভুলে যান, সব ভোলেনও না | শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় | সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক জনের সঙ্গে কয়েক দিন আগে টেলিফোনে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় জিগ্যেস করলাম, "সময় কাটাচ্ছেন কী করে?" তিনি বললেন, "কেন মশাই, সময় তো এখন দিব্যি কেটে যাচ্ছে। মর্নিংওয়াক, তার পর হাটবাজার, খেয়েদেয়ে দিবানিদ্রা, সন্ধের পর চান-টান করে টিভির সামনে পলিটিক্সের তরজা দেখতে বসে যাই। কোথায় লাগে সিরিয়াল বা আইপিএল! আপনি দেখছেন না?" দেখি, আমিও দেখি। এই ধুন্ধুমার বাগ্যুদ্ধের অন্তে কাউকেই জয়ী বলে মনে হয় না। বরং ধারণা হয়, দুই পক্ষই হেরে গিয়েছেন। একটা কথা খুব মনে হচ্ছে, এ বারের নির্বাচনে যেন আক্রোশ-বিদ্বেষ আরও বেশি। ভাষার মান আরও একটু নিম্নগামী, রুচিবোধেরও অভাব। অবশ্য তাতে প্রমোদের উপকরণ বাড়ে বই কমে না। | | এই যে কে কার মুখে কতখানি ঝামা ঘষে দিতে পারে, তার মরিয়া প্রতিযোগিতার শেষে 'ম্যান অব দ্য ম্যাচ' কে হবে সেইটেই দেখার। শিক্ষকতার জীবনে ফাইভ-সিক্সের ক্লাস নিতে গেলে নালিশের চোটে কান ঝালাপালা হয়ে যেত। আর নালিশের বৈচিত্রও বিস্ময়কর। এমন নালিশও শোনা যেত, 'ও আমার দিকে তাকাচ্ছে স্যার।' পশ্চিমবঙ্গের এখনকার পরিস্থিতি অনেকটা যেন ও রকমই। |
| কে কার বিরুদ্ধে কত রকম নালিশ তুলতে পারেন, তা দেখে বিস্মিত হতে হয়। এমন সব ছেলেমানুষি অভিযোগ যে, অভিযোগকারীর পরিণত মানসিকতা সম্পর্কেই সন্দেহ উপজাত হয়। তবু বলি, চরিত্রহনন এতদ্দেশীয় রাজনীতির শিরোভূষণ। বঙ্কিম বলেছিলেন, 'পিয়াদারও শ্বশুরবাড়ি আছে, তথাপি সপ্তদশ অশ্বারোহীমাত্র যে দেশকে জয় করিয়াছিল সেই দেশের পলিটিক্স নাই। 'জয় রাধে ভিক্ষা দাও গো' ইহাই আমাদের পলিটিক্স।' স্মৃতি থেকে উদ্ধৃত বলে বাক্যটিতে ভুল থাকতে পারে। তবে মোদ্দা কথাটা এ রকমই এবং আজও অনেকাংশে অতিশয় সত্য। যেটা চার দিকে তাকালেই মালুম হয়। রাজনীতির অঙ্গনটিই বোধহয় অপসংস্কৃতির সব চেয়ে বড় ঠেক। রাজনীতি মানেই যদি পারস্পরিক গালমন্দ, তারস্বরে চেঁচানো এবং মুখস্থ বুলি আউড়ে যাওয়া হয়, তবে বাম বা ডান কোনও দিকেই এ রাজ্যের আগু হওয়ার সম্ভাবনা অতিশয় ক্ষীণ। কিন্তু তবু এই নির্বাচনের কিছুটা অভিনবত্ব আছে। গত লোকসভা নির্বাচনের কিছু আগে নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের অশান্তির পরে বাঙালির রাজনীতিতে একটি নতুন সংযোজন ঘটতে শুরু করে। সেটি হল, বুদ্ধিজীবী তথা বিশিষ্ট জন এবং সৃজনশীল কর্মে লিপ্ত কতিপয় মানুষের ভূমিকা। বিশিষ্ট জনেরা সকলেই কিন্তু অর্থবান নন। প্রতিষ্ঠিত বা প্রভাবশালী নন। বরং এক জন নাট্যকর্মী বা কবিকে বুড়ো বয়স পর্যন্ত অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। প্রার্থিত খ্যাতি বা মূল্যায়ন পেতে কালঘাম বেরিয়ে যায়। কাজেই বিশিষ্ট জনেরা হলেন 'সহজ মৃগয়া' বা 'সফ্ট টার্গেট'। তাঁদের অপমান বা অনাদর করা সহজ। শাসক দল এঁদের উপেক্ষণীয় ভেবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেও ব্যাপারটা কিন্তু ভোটদাতা জনসাধারণ মনে রেখেছিল। মানীকে মানটুকুও না দেওয়াটা মানসিক দৈন্যেরই লক্ষণ। লোকে সেটা ভাল চোখে দেখেও না। আমার ধারণা, যে সব কারণ বিগত লোকসভা নির্বাচনে দান উল্টে দিয়েছিল, তার মধ্যে এই প্রতিবাদী বিশিষ্ট জনেদের অবস্থানও অন্যতম। আর একটি 'সহজ মৃগয়া' ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মেয়েটিকে গত কুড়ি-পঁচিশ বছর ধরে চিনি। পরিচয়টা ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক। আমি যে এলাকার বাসিন্দা, সেই যোধপুর পার্ক ও লেক গার্ডেন্সে তিনি প্রায়ই রাজনৈতিক কারণে আসতেন। দেখা হলেই হেসে আমার লেখালেখির খবর নিতেন। মমতা সিপিএম-বিরোধী ছিলেন বটে, কিন্তু প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিলেন দুর্বল। তাঁর ক্ষীণ প্রতিবাদ ছিল অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে হোমিওপ্যাথির লড়াইয়ের মতো। কিন্তু বরাবরই মমতাকে অন্যায্য কটুকাটব্য, মারধর ও নানা হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। মমতার অসামান্য গুণগুলি কি উপেক্ষার বিষয়? যেখানেই যখন মানুষের কোনও বিপদ ঘটেছে, তিনি শ্রান্তি-ক্লান্তি ভুলে সেখানেই ছুটে গিয়েছেন। এবং আজও যান। দায়ে দফায় কেউ ডাকলেই মমতা সেখানে হাজির। বিনয় কোঙার, অনিল বসু বা বিমানবাবুর উক্তিগুলি বোধহয় মমতার পাওনা ছিল না। নিতান্তই ছাপোষা ঘরের গ্ল্যামারহীন, স্বনির্ভরতায় উঠে আসা, ডাকাবুকো মমতাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ উপেক্ষায় যত হেনস্থা করা হয়েছে, ততই তাঁর ধীরে ধীরে শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছে। আজকের প্রবল ও প্রায়-অপ্রতিরোধ্য মমতার উত্থানে সিপিএম-এর নেতিবাচক ভূমিকা বড় কম নয়। যাকে বলা যায়, শাপে বর। মমতা মাঝে মাঝে জ্যোতি বসুকে প্রণাম করতে যেতেন। মমতার দীর্ঘ উপবাসের সময়ে জ্যোতিবাবুর চাপা উদ্বেগের কথাও মনে পড়ে। কিন্তু বামফ্রন্টের আর কেউ মমতার দিকে রাজনৈতিক সৌজন্যের হাতটুকুও বাড়াননি। দুর্বল সবলের দিকে হাত বাড়াতে কুণ্ঠা বোধ করে। প্রত্যাখ্যানের ভয়ে। সবলের তো সে ভয় নেই। হাত বাড়ানো দূরে থাক, বামফ্রন্টের অনেকে ঘৃণায় তাঁর নামটাও উচ্চারণ করতে চান না। ভোটদাতারা অনেক কথাই ভুলে যান বটে, কিন্তু সব কথাই ভুলে যান না। কিছু কিছু মোক্ষম কথা তাঁদের মনে গেঁথে থাকে। কলকাতার ভোটকেন্দ্রগুলি চষে বেড়াতে বেড়াতে খড়দহের একটি দীন পল্লির সরু রাস্তায় অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের সঙ্গে দেখা। খুশি হয়ে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরলেন। সাহিত্য নিয়েই কথা বললেন বেশি, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনার কথাও। জিগ্যেস করলাম, "অশোক মিত্রকে তাঁর রাজনৈতিক বাণপ্রস্থ থেকে প্রচারের কাজে ডেকে আনা হচ্ছে কেন? সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কেই বা কেন পুনর্বাসিত করার উদ্যোগ? বামফ্রন্ট কি ভয় পাচ্ছে?" নিপাট ভদ্রলোক অসীমবাবু হাসলেন। বললেন, "তা নয়, অশোক মিত্র নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন।" বললেন, নির্বাচনের আগে বামফ্রন্টের দিক থেকে যাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁরা অনেকেই ফিরে আসছেন। সাড়া পাচ্ছেন ভালই। অমিত মিত্রের সঙ্গে দেখা হল না। কিন্তু তাঁর সাক্ষাৎকারটি মন দিয়ে শুনেছি। নেত্রী মমতার দূরদৃষ্টি ও অর্থনৈতিক চেতনার অকপট বিশ্লেষণ করলেন। যদি পরিবর্তন হয়, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক চেহারাটা কী হবে তারও আভাস দিয়ে রাখলেন। সাত্য বসুকে নিয়ে আমার একটু শঙ্কা ছিল। শঙ্কাটা হল এই, শেষ অব্দি কি নাকের বদলে নরুন পাব? ব্রাত্য বসুর বদলে এক জন মন্ত্রী বা এমএলএ? প্রতিভাবান এক জন মানুষ সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করলে তার ভাবনাচিন্তায় একটা মন্দা আসার সম্ভাবনা থাকে। কথাটা ব্রাত্যর কাছেও তুলেছিলাম, "যদি তোমাদের জোট ক্ষমতায় আসে আর তুমি যদি মন্ত্রী-টন্ত্রী হয়ে যাও, তা হলে কি তোমার নাট্যকার সত্তা ব্যাক বেঞ্চে বসে থাকবে?" ব্রাত্য হা হা করে হেসে বলল, "না না, তা কখনওই হবে না দেখবেন। আমি লিখব, অভিনয়ও করব।" উত্তর কলকাতায় ঘুরতে ঘুরতে একটি জমায়েতের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম। গুটি তিরিশ-চল্লিশ মহিলা ও পুরুষ। তাতে দু'পক্ষেরই লোকজন আছেন। কিন্তু পরস্পরের বিরুদ্ধে কোনও বিরূপ মনোভাব নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকেও না। তাদের পাশাপাশি বাস করতে হয়, পরস্পরের উপরে নির্ভরও করতে হয়। ঝগড়া-কাজিয়া, আক্রোশ-বিদ্বেষ, চাপানউতোর— সবই উপরের স্তরে। রাজনীতির মারপ্যাঁচ তাঁরা তেমন বোঝেনও না। তাঁরা যা বলছিলেন, তার সবই সেই সব আটপৌরে কথা, যা আমরা প্রতি দিন সাধারণ মানুষের মুখে শুনি। তাঁরা চান রাস্তা, জল, আলো, নিরাপত্তা। তাঁরা চান না খুনখারাপি, গুণ্ডামি, বিশৃঙ্খলা বা দ্রব্যমূল্যের বাড়বাড়ন্ত। তাঁরা চান না ভাঙা রাস্তা, বৃষ্টির জমা জল বা পাইপলাইনের ফাটল। এই চাওয়া-না চাওয়ার সমীকরণ আর ভারসাম্যের উপরেই দোল খায় এঁদের রাজনৈতিক চেতনা। পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন? এই জ্বলন্ত প্রশ্নে দীর্ণ বাংলার আকাশে এখন অনেক উড়ন্ত ঘুড়ি। কালো টাকা, হেলিকপ্টার, পোড়া কুপন, ঘুষ, জমি কেলেঙ্কারি, নেতাই, জঙ্গল মহল, রাজারহাট এবং অনিল বসুর অশালীন মন্তব্য। দেখেশুনে আমার মনে হয়, জনগণেশের রায় ইতিমধ্যেই স্থির হয়ে গেছে। বোতামে আঙুলের চাপটুকু বাকি। পলিটিক্স আরও ছড়িয়েছে। এখন এমন অবস্থা যে, দূর গ্রামাঞ্চলেও কোনও কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনে কোন দল জিতল, সেটাও 'ব্রেকিং নিউজ' হয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে উপচে পড়ে। আমরা চোখ কচলে বিস্ময়ভরে দেখি, ক্যামেরার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে সদ্য গোঁফ ওঠা কাঁচা বয়সের ছাত্রনেতা গেরামভারি সব বুলি আউড়ে যাচ্ছেন। সেই যে ঘোর এক মাতাল পুলিপিঠে ভেবে মরা ইঁদুর মুখে তুলতে গিয়ে অবাক হয়ে বলেছিল, কালে কালে কতই হল, পুলিপিঠের ন্যাজ বেরোল! এ-ও হল সেই বৃত্তান্ত। আমার পিতৃদেবের অনেক গুণই আমাতে অর্শায়নি। তিনি সুপুরুষ ছিলেন, সুকণ্ঠ ছিলেন, দারুণ স্মার্ট ইংরেজি বলতেন, টেনিস খেলতেন। তত্তুলনায় আমি নিতান্তই সাদামাটা, ম্যান্তামারা। কিন্তু পিতৃদেবের একটা গুণ আমি পেয়েছি, সেটা হল হাঁটা। তিনি মাইলের পর মাইল হাঁটতেন, আমিও হাঁটি। কলকাতার সচল পদাতিকদের প্রথম দশ-বিশ জনের মধ্যেই আমার থাকার কথা। আর হেঁটে হেঁটে বিস্তর জনসংযোগও হয়ে যায় আমার। বাড়িতে অভিযোগ ওঠে, আমি কেন সব্জিওয়ালা, রিকশাওয়ালা, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, প্লাম্বার— এদের সঙ্গে এত কথা বলি? যখন কালীঘাটের স্কুলে পড়াতাম, তখন ফটকের কাছেই ফুটপাথবাসী এক কাঙাল পরিবারের সঙ্গে আমার দিব্যি বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। আসা যাওয়ার পথে তাদের প্লাস্টিকের ছাউনির ঘরের সামনে দু'দণ্ড দাঁড়িয়ে অত্যাশ্চর্য বেঁচে-থাকাকে অনুধাবন করতে চেষ্টা করতাম। ভোটার লিস্টে নাম নেই, রেশন কার্ড নেই, জনগণনায় ধর্তব্য নয়, ঘর নেই, জমি নেই, খাবার নেই, এবং কে জানে, হয়তো ঈশ্বরও নেই। এই অলৌকিককে প্রণাম জানানো ছাড়া আমার কী-ই বা করার ছিল। বাংলার পথেঘাটে এদের সঙ্গে আমার বারবার দেখা হয়ে যায়। যদি জিগ্যেস করি, ভোট দাও? তা হলে অপার বিস্ময় ফুটবে তার চোখে। ভোট! সেটা গোল না চৌকো জানা নেই তার। সোমনাথের হয়ে সওয়াল বুদ্ধ-গৌতমের | নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে 'দলের বিশিষ্ট নেতা' বলে অভিহিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মী এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব আশাপ্রকাশ করলেন, লোকসভার প্রাক্তন স্পিকারকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। আর স্বয়ং সোমনাথবাবু একেবারে সিপিএমের সুরেই তৃণমূলের 'পরিবর্তনে'র স্লোগানকে নস্যাৎ করে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার আবেদন জানালেন। সব মিলিয়ে রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোটের আগে সোমনাথবাবুকে পুরোদমে ময়দানে নামাল সিপিএম। দলের প্রচারে আসার জন্য সোমনাথবাবুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আবাসনমন্ত্রী গৌতমবাবু। সোমনাথবাবু সেই সভায় যাওয়ার আগে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "তিনি আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। মাঝে কিছু সমস্যা হয়েছিল। এখন তিনি প্রচারে আসছেন, খুব ভাল কথা!" এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তাঁর আরও বক্তব্য, "তিনি আমাদের বিশিষ্ট নেতা। তিনি প্রচারে এলে আমাদের যে লাভ হবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।" | | বিরাটির প্রচারসভায় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং গৌতম দেব। — সুদীপ ঘোষ | বুদ্ধবাবুর চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন গৌতমবাবু। বিরাটির শরৎ সঙ্ঘ ময়দানে দমদম সংলগ্ন চারটি কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীদের নিয়ে যৌথ জনসভায় সোমনাথবাবুর উপস্থিতিতেই এ দিন গৌতমবাবু বলেন, "কোনও নেতা দলের ঊর্ধ্বে নয়। আমি, সোমনাথদা বা দলের সাধারণ সম্পাদক, কেউ নয়! দল কী করবে, আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু দলের কোনও বইয়ে লেখা নেই, যাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁকে আর কখনও ফেরানো যাবে না। আশা করি, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" গৌতমবাবু অবশ্য এ-ও উল্লেখ করেন, "দল কী চায়, সোমনাথদা'ই বা কী চান, আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।" অর্থাৎ বিতর্কের পথে না-গিয়েও কৌশলে সোমনাথবাবুর প্রত্যাবর্তনের পক্ষেই সওয়াল করেছেন গৌতমবাবু। যিনি এবং সোমনাথবাবু, দু'জনেই সিপিএমের প্রয়াত জ্যোতি বসুর অনুগামী নেতা বলে পরিচিত। সোমনাথবাবুর প্রত্যাবর্তনের প্রশ্নে বুদ্ধবাবু অবশ্য এতটা এগোতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, "সেটা অনেক কিছুর উপরে নির্ভর করছে। এখনই বলা যাবে না।" সোমনাথবাবুর পাশাপাশি প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্রকেও প্রচার-সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন গৌতমবাবু। তাঁর 'সম্মতি' না-নিয়েই বক্তা হিসাবে নাম ব্যবহার করা হয়েছেবলে মন্তব্য করে অশোকবাবু জানিয়েছিলেন, তিনি আমন্ত্রণে সাড়া দেবেন না। প্রত্যাশিত ভাবেই, এ দিন বিরাটির জনসভায় তিনি যাননি। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সোমনাথবাবু এবং অশোকবাবু, দু'জনের প্রসঙ্গেই বলেন, "ওঁরা বামপন্থী শিবিরেরই নেতা। তাঁরা প্রচারে এলে ভালই হবে।" লোকসভার প্রাক্তন স্পিকারও 'সুযোগে'র সদ্ব্যবহার করেছেন। শনিবার বালিগঞ্জের সভার মতোই এ দিনও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ভাষণের 'অসত্য তথ্যে'র সমালোচনা করেছেন। গৌতমবাবুকে পাশে বসিয়েই বলেছেন, রাজারহাটের উন্নয়ন দেখলে তাঁর 'বুক গর্বে ভরে যায়'। রাজারহাট এবং নিউটাউনে গৌতমবাবু যে ভাবে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করেছেন, সেই পদ্ধতিরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সিপিএমের 'দলীয় লাইন' মেনেই বলেছেন, "একটা জগাখিচুড়ি সরকার যদি ক্ষমতায় আসে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের বিপর্যয় হবে। গরিব মানুষের ক্ষতি হবে।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পরিবর্তনে'র স্লোগানকে প্রচ্ছন্ন কটাক্ষ করেছেন। তাঁর কথায়, "পরিবর্তন যদি হয়, তা হলে যে কয়েকটা কাজের ত্রুটি হয়েছে, সেগুলোর পরিবর্তন করে আরও ভাল বামফ্রন্ট করতে হবে। রোগশয্যা থেকে উঠে এসেছি। কারণ, গৌতম আমার ভাইয়ের চেয়েও বেশি। ওকে না করতে পারিনি।" গৌতমবাবুও মঞ্চেই সোমনাথবাবুকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে দলীয় নেতৃত্বের প্রতি 'বার্তা' পাঠিয়েছেন! প্রসঙ্গত, সোমনাথবাবুর সঙ্গে মঞ্চে দমদমের প্রার্থী গৌতমবাবু ছাড়া আরও তিন সিপিএম প্রার্থী উত্তর দমদমের রেখা গোস্বামী, রাজারহাট-গোপালপুরের রবীন মণ্ডল ও বিধাননগরের পলাশ দাস উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমিতাভ নন্দীও। শুধু দলীয় মঞ্চই নয়, 'বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দে'র তরফেও বামফ্রন্ট সরকার গড়ার জন্য আবুল বাশার, শোভা সেন, তরুণ মজুমদার, অমর পাল, সুনীল দাসদের সঙ্গে লিখিত আবেদনে সই করেছেন সোমনাথবাবু। তৃণমূলের প্রচারে কালো টাকার ব্যবহার এবং আরও নানা প্রশ্নে গৌতমবাবু তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ঢঙেই আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। সোমনাথবাবুও নাম না-করে তীব্র কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়ের ছেলে, তৃণমূল প্রার্থী শুভ্রাংশুকে। বলেছেন, "এক জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের অফিসারকে পিটিয়ে দিলেন! পরে তিনিই বসে দলনেত্রীর পাশে! আশা করি জিতবেন না! যদি জেতেন, স্পিকারকেই হয়তো পিটিয়ে দেবেন রাগ হলে! জজসাহেবকেও আমি সতর্ক হতে বলি, রায় পছন্দ না-হলে কী হবে, বলা মুশকিল!" নির্বাচনী তরজায় তপ্ত প্রচারের অন্য দেওয়াল ঋজু বসু • কলকাতা | |
| এ-ও এক ধরনের 'দেওয়াল দখল'! সিপিএমের এক সর্বভারতীয় ছাত্রনেতা ও বিদায়ী বাম মন্ত্রিসভার এক জাঁদরেল মন্ত্রীর (এ বার প্রার্থী-তালিকায় নেই) দেওয়ালে ছাপ ফেলেছে তৃণমূল! খোদ বাম সরকারের 'অস্ত্রেই' তাদের ঘায়েল করতে তৈরি হয়েছে বিজ্ঞাপনী প্রচারের প্যারডি। যেমন রয়েছে বাম জমানায় শিক্ষা-স্বাস্থ্য নিয়ে কটাক্ষ: 'আমার সরকার, আছে না কি, আমাদেরই পাশে/ শিক্ষাকে আজ গিলে খেল পার্টি অক্টোপাসে' কিংবা 'হাসপাতালের স্বাস্থ্য দেখে রোগীরা আজ হাসে'। টিভি চ্যানেলে এবং বিভিন্ন সভায় বলিয়ে-কইয়ে এক সিপিএম নেতার 'দেওয়াল'-এই শোভা পাচ্ছে বিরোধীদের এই খোঁচা। মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায়ের 'দেওয়াল'-এও 'দশভুজা মমতা'র ছবির ক্যাপশন 'শান্তিরূপেণ সংস্থিতা'। তবে এই নিয়ে কোনও রকম নালিশ ঠোকাঠুকি নেই। বরং বাম নেতা-সমর্থকেরাও দ্বিগুণ উৎসাহে পাল্টা ছোবল মারতে দেওয়াল দখলে মত্ত। সিপিএমের মমতা-বিরোধী প্রচারও বহু বিরোধী-সমর্থকের 'দেওয়ালে' লটকেছে। দেওয়ালে দেওয়ালে ছড়িয়ে পড়ছে দলীয় কর্মসূচি ও মিটিং-মিছিলের খবর। তৃণমূলকে 'উন্নয়ন-বিরোধী' সাব্যস্ত করতে একটি স্লোগানে বলা হচ্ছে, 'পরিবর্তন' রোগাক্রান্ত বাংলাকে বাঁচাতে প্রয়োজন 'বামফ্রন্ট ভ্যাকসিন'। ওই 'পরিবর্তন' রোগের লক্ষণ হল, রাস্তা কাটা, খুন, ভাঁওতা! আর সেই রোগের বাহক তৃণমূল নেত্রী। এ দেওয়াল অবশ্য সে দেওয়াল নয়। নির্বাচনী বিধির কড়াকড়িতে বিধানসভা ভোটে দেওয়ালে দেওয়ালে তরজা অন্য বারের তুলনায় কম। তাই বিকল্প দেওয়াল খুঁজে নিয়েছেন ভোটের প্রতিপক্ষেরা। ইন্টারনেটের কোনও কোনও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের পরিসরটিও 'ওয়াল' নামে খ্যাত। সেই সাইবার-দেওয়ালেও পড়ছে রাজ্যে চলতি ভোটযুদ্ধের প্রতিবিম্ব। প্রধান দু'পক্ষের 'মার্কা-মারা' সমর্থকেরা অবশ্যই আছেন, আবার আম-নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষার ছবিটাও দেওয়ালে দেওয়ালে উজ্জ্বল। তৃণমূল না সিপিএম? কারা এগিয়ে এই নেট-প্রচারে? সিপিএমের মানব মুখোপাধ্যায়, মহম্মদ সেলিম থেকে শুরু করে কোনও কোনও প্রার্থীও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এ সক্রিয়। এসএফআই-এর সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "সাইবার-স্পেসে স্বাস্থ্যকর তর্ক-বিতর্কেও এক ধরনের প্রচার করা যায়। এ ব্যাপারে এগিয়ে আমরাই।" আবার নেটে বাম-অস্তিত্বকে উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের সাইবার-প্রচারের 'কাপ্তেন' ডেরেক ও'ব্রায়েন। এ রাজ্যের রাজনীতিবিদদের মধ্যে টুইটারে সব থেকে জনপ্রিয় ডেরেক। তাঁর দাবি, মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের নতুন ওয়েবসাইট নিয়মিত 'আপডেট' করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে এ বারের প্রচারের সব মশলাই নেট-জগতে হাজির। এখানেও গৌতম দেবের অভিযোগের পক্ষে-বিপক্ষে ছড়া বাঁধার প্রতিযোগিতা। সিপিএমের ডাকাবুকো মন্ত্রীর কার্টুনের ছড়াছড়ি। মমতাকে নিয়ে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ অনিল বসুর 'কুরুচিকর' মন্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়ের পুত্র তথা তৃণমূল-প্রার্থী শুভ্রাংশু রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের অভিযোগও তেমনই নেটে সিপিএমের হাতিয়ার। তির্যক শ্লেষের সুরে কেউ লিখেছেন, 'বাঁশের চাইতে কঞ্চি বড়, নেতার চাইতে পুত্র বড়/ সরস সত্য এই খবরও রাখিস না তুই কমিশন'। আবার গৌতম দেবের অভিযোগ-বৃষ্টির 'বিনোদন-প্যাকেজ'কে ব্যঙ্গ করে নেট-কবিতার লাইন, 'থাকগে ও সব, তাণ্ডব আপনি জারি রাখুন নটরাজ/ কোন্ চ্যানেলে কাল ক'টায় শো, মিস করেছি আজ!' মেঠো-প্রচার বা রকের আড্ডা-সুলভ অশালীন ভাষা ব্যবহারও কিন্তু মাঝেমধ্যে নেটে ঢুকে পড়ছে। কসবায় সিপিএমের তরুণ প্রার্থী শতরূপ ঘোষ নিয়মিত নেটে জনসংযোগ করছেন। দমদমে তৃণমূল-প্রার্থী ব্রাত্য বসুর অবশ্য নেট-প্রচারে তত ভক্তি নেই। তাঁর কথায়, "সাইবার-দেওয়ালে বড়জোর কে কার সমর্থক বোঝা যায়। ইন্টারনেট এখনও পায়ে হেঁটে প্রচারের বিকল্প হয়ে ওঠেনি।" গত শতকের ভোটের ছড়ায় দাদাঠাকুর-সুলভ রসবোধ বা অন্নদাশঙ্কর রায়ের রাজনৈতিক ভাষ্য অবশ্যই দুর্লভ। কিন্তু নেটভক্তেরা দলতন্ত্রের গণ্ডিতে বাঁধা পড়তে নারাজ নিরপেক্ষ কণ্ঠস্বরও শুনতে পাচ্ছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার যেমন লিখছেন, 'পার্টির গাধাবোটে বেঁধে দিলে নৌকো মনের আকাশ হবে ঘুলঘুলি চৌকো ঘুম কেড়ে নেবে যত দানব আর দত্যি কালোকে বলব সাদা, মিথ্যেকে সত্যি। রাজনৈতিক তরজার বাইরে এই তৃতীয় স্বরও সাইবার-দেওয়ালের সংযোজন। প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতায় বিজেপি-সিপিএম একসুর | নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বিরোধিতা করতে গিয়ে সিপিএমের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী শনিবার কাটোয়া এবং দমদমে নির্বাচনী প্রচারসভা করতে এসে এ রাজ্যের প্রশাসনিক অবস্থার সমালোচনা করেছেন। বিজেপি-ও সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সহমত। বস্তুত, তারাও নিয়ম করেই এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে বামফ্রন্ট সরকারকে তুলোধোনা করে থাকেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য নিয়ে রবিবার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ দিল্লির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। প্রসাদ এ দিন বলেন, "প্রধানমন্ত্রী এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলেছেন, এ রাজ্যে প্রশাসন নেই। কিন্তু আমি ওঁকে প্রশ্ন করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী যেখানে থাকেন, সেই দিল্লির প্রশাসন কি খুব ভাল চলছে?" প্রসাদের এই বক্তব্যের ফলেই কংগ্রেস-বিরোধিতায় ফের সিপিএম এবং বিজেপি-র সুর মিলে গিয়েছে। সিপিএমও এই যুক্তিতেই আত্মপক্ষ সমর্থন এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারকে আক্রমণ করে। তাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী এমন একটি সরকারের প্রধান, যার বিরুদ্ধে স্পেকট্রাম, কমনওয়েলথ-সহ বিরাট বিরাট দুর্নীতির অভিযোগ। সুতরাং, অন্যের প্রশাসন নিয়ে সমালোচনা করার নৈতিক অধিকার তাঁর বা তাঁর দলের নেই। এ দিন প্রসাদও ওই সমস্ত দুর্নীতির কথা তুলেই কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারকে কটাক্ষ করেছেন। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে বিজেপি এবং সিপিএমের এই 'সুরের ঐক্য' যথেষ্ট 'তাৎপর্যপূর্ণ'। কারণ, তৃণমূল নেত্রী প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় বলছেন, বিজেপি সিপিএমের হাত ধরেছে। বিরোধী ভোট কেটে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের সুবিধা করে দেওয়াই বিজেপি-র উদ্দেশ্য। প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপি শিবির থেকে মমতার ওই আক্রমণের জবাব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ দিন প্রসাদের ওই বক্তব্য মমতাকে বিজেপি-সিপিএম 'ঐক্য'-এর তত্ত্ব প্রচারে আরও উৎসাহ জোগাবে বলেই রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা। |
এসেই সুরক্ষা-বৈঠক বিশেষ পর্যবেক্ষকের | নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | রাজ্যের তৃতীয় দফার ভোটপর্ব সরেজমিনে দেখতে তিন দিন আগেই, রবিবার কলকাতায় পৌঁছে গেলেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক এস শ্রীনিবাসন। তিনি ওড়িশার মুখ্য নির্বাচনী অফিসার। ভোটের আগেও আইনশৃঙ্খলা দেখতে কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক হয়ে রাজ্যে এসেছিলেন বিহারের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুধীরকুমার রাকেশ। এ বার ভোটের মধ্যে একই দায়িত্ব দিয়ে অন্য এক রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠাল কমিশন। বুধবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কলকাতার মোট ৭৫টি আসনে ভোট হবে। তৃতীয় দফার ভোটের আগে নিরাপত্তার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতেই শ্রীনিবাসনকে এ রাজ্যে পাঠানো হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর। এ দিন কলকাতায় এসে শ্রীনিবাসন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্তের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বুধবার যে-৭৫টি আসনে ভোট হবে, তার মধ্যে ক'টি অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবণ, সুনীলবাবুর কাছে তা জানতে চান বিশেষ পর্যবেক্ষক। সেগুলির নিরাপত্তায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই ব্যাপারেও খোঁজখবর করেন তিনি। আজ, সোমবার এবং কাল, মঙ্গলবার শ্রীনিবাসন দুই ২৪ পরগনা এবং কলকাতার কয়েকটি এলাকায় ভোট-প্রস্তুতি দেখতে যাবেন বলে রাজ্য নির্বাচন দফতর সূত্রের খবর। পশ্চিমবঙ্গে ছ'দফার নির্বাচনের মধ্যে দু'দফার ভোট ইতিমধ্যেই শেষ। মোট ১০৪টি কেন্দ্রে নির্বাচন শান্তিতে সম্পন্ন হওয়ায় নির্বাচন কমিশন অনেকটাই স্বস্তিতে। তৃতীয় দফার ভোটও যাতে শান্তিতে ও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়, সেই জন্যই আগাম ব্যবস্থা নিতে চাইছে কমিশন। এবং বিশেষ করে সেই কারণেই আগেভাগে শ্রীনিবাসনকে পাঠানো। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও সমস্যা থাকলে বুধবারের আগেই যাতে তার সমাধান করা যায়, তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই বিশেষ পর্যবেক্ষকের উপরে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে পৌঁছে যাওয়া অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলবেন শ্রীনিবাসন। | | অসুস্থ গৌতম এন্টালি কেন্দ্রের বামফ্রন্ট প্রার্থী দেবেশ দাসের সমর্থনে ট্যাংরার শীল লেনে একটি সভায় বক্তৃতা করার কথা ছিল তাঁর। তিনি আসবেন বলে অপেক্ষমান শ্রোতাদের মধ্যে উৎসাহও ছিল ব্যাপক। চেয়ার-মাঠ ভরে গিয়েছিল। কিন্তু এলেন না রাজ্যের আবাসন মন্ত্রী তথা সিপিএমের 'ঘুরে দাঁড়ানোর কাণ্ডারী' গৌতম দেব। দলের আরেক নেতা বিনয় কোঙার বক্তৃতা করতে উঠে ক্ষমা চেয়ে নিলেন এই বলে, "ও আসতে পারছে না। আমি বিকল্প হিসাবে বলতে এসেছি।" বিনয়বাবুর পর বক্তৃতা করেন প্রার্থী দেবেশবাবু। সভার শেষে ঘোষণা করা হয়, গৌতমবাবু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাঁটতে পারছেন না। তাই আসতে পারেননি। মুড়ি-মিছরি বাছাবাছি বিধানসভা ভোটের প্রচারে যে সমস্ত ভিভিআইপি রাজ্যে আসছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে মেডিক্যাল টিম দিতে হয়। এটাই প্রোটোকল। তা মেনে প্রতিটি টিমেই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর স্তরের চিকিৎসকদের রাখা হচ্ছে। আর তাতেই বেঁকে বসেছেন এসএসকেএমের বেশ কয়েক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট তথা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসার। তাঁদের দাবি, তাঁরা পদমর্যাদায় উপরের সারিতে। অতএব প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বা লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো 'হেভিওয়েট'দের মেডিক্যাল টিমে তাঁদের রাখতে হবে। আর অন্য নেতা-নেত্রীদের মেডিক্যাল টিমে রাখা হোক রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্রছাত্রীদের। না হলে নাকি 'মুড়ি-মিছরির এক দর' হয়ে যাচ্ছে। ওই চিকিৎসকদের দাবিমতো মেডিক্যাল শিক্ষা অধিকর্তা সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। অনশনে রাহুল
প্রশাসনের একাংশকে ব্যবহার করে তৃণমূল তাঁদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে—এই অভিযোগ তুলে তার বিহিতের দাবিতে রাজ্য নির্বাচন দফতরের সামনে 'আমরণ অনশন'-এ বসেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি অনশন শুরু করেন। রাহুলের বক্তব্য, "আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভোটের প্রচারে আসছেন। তাঁদের সফরসূচি বহু আগেই প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে। অথচ তাঁদের হেলিকপ্টার নামার মাত্র এক ঘণ্টা আগে, কখনও সভার নির্ধারিত সময়ের পরে প্রশাসনিক অনুমতি মিলছে। আসলে বিজেপি-র প্রচার তুঙ্গে উঠতে দেখে ভয় পেয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছে তৃণমূল। তারাই প্রশাসনের একাংশকে কাজে লাগিয়ে আমাদের প্রচারে বাধা দিচ্ছে। তাই প্রচারসভার ক্ষতি করেও অনশনে বসতে বাধ্য হলাম।" উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং উলুবেড়িয়া থানার আইসি-কে সাসপেণ্ড করার দাবি জানিয়েছেন রাহুল। তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশনকে আশ্বাস দিতে হবে, এর পর কোনও বিজেপি নেতার প্রচারে অনুমতি দিতে প্রশাসন গড়িমসি করবে না। বিধিভঙ্গে বাজেয়াপ্ত
সিপিএম এবং তৃণমূল—দু' দলের প্রচারেই ব্যবহার করা হচ্ছিল পারমিট-বিহীন গাড়ি। খবর পেয়ে পুলিশকে সেই গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিলেন বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসার সুশান্ত চক্রবর্তী। ঘটনাটি ঘটেছে পাত্রসায়র থানার ধারাবাড়ি এবং বিষ্ণুপুর থানার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে। শনিবার সুশান্তবাবু বলেন, "তৃণমূল পাত্রসায়র থানার ধারাবাড়ি গ্রামে প্রচার মিছিলে পারমিট ছাড়াই দু'টি বাস ব্যবহার করে। বিষ্ণুপুর থানার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে সিপিএম প্রচার-মিছিলে ব্যবহার করেছে পারমিট-বিহীন একটি গাড়ি। দু'টি ঘটনাতেই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে দু'দলকেই।" ঘেরাও অভিজিৎ
নলহাটির একটি বুথে বাম-বিজেপির বিক্ষোভের মুখে পড়লেন নলহাটির কংগ্রেস প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। শনিবার সকালে তিনি নলহাটির ভবানন্দপুর গ্রামে যান। বুথ থেকে কিছু দূরের মাঠে তিনি একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন সিপিএম, ফব ও বিজেপি সমর্থকরা তাঁকে ঘিরে অভিযোগ করে, ভোটের দিনেও অভিজিৎবাবু এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে প্রচার করছিলেন। এতে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হয়েছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। সম্পাদকীয় ১... | শান্তির বাণী | কাশ্মীরের সর্বদলীয় হুরিয়ত সম্মেলনের কট্টরপন্থী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির কণ্ঠে শান্তির ললিত বাণী শুনা যাইতেছে। তাঁহার বক্তব্য-- বন্দুক বা গ্রেনেড নয়, অস্ত্রের ঝনৎকার নয়, এমনকী পাথরের ক্ষেপণাস্ত্রও নয়, শান্তির পথেই তাঁহারা লড়াই চালাইবেন, যাহাতে আন্তর্জাতিক জনমতকে কাশ্মীরিদের দাবি ও সংগ্রামের প্রতি আকৃষ্ট করা যায়। গিলানি হুরিয়তের গোঁড়া, আপসহীন এবং জঙ্গি নেতা বলিয়া গণ্য। তবু তাঁহার কণ্ঠে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য এমন সওয়াল অশ্রুতপূর্ব নয়। ইতিপূর্বেও তিনি পুলিশ বা নিরাপত্তা রক্ষীদের লক্ষ করিয়া কাশ্মীর উপত্যকার প্রতিবাদী বিক্ষোভকারীদের পাথর ছোড়ার ঘটনাকে অনভিপ্রেত বলিয়া নিন্দা করিয়াছিলেন। কিন্তু যখন তাঁহার আবেদনে কর্ণপাত না করিয়া প্রতিদিন পাথর ছোড়া ও পুলিশি গুলিচালনার ঘটনা ঘটিয়া চলে, তখন তিনি মুখে কুলুপ আঁটিয়া থাকেন। পাছে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা তাঁহাকে 'শান্তিবাদী' বলিয়া বর্জন করে এবং তাঁহার নেতৃত্বের উপরেই ভরসা হারাইয়া ফেলে, তাই হিংসাত্মক বিক্ষোভের সমালোচনা হইতে বিরত থাকাই তাঁহার কাছে বুদ্ধিমানের কাজ বলিয়া মনে হয়। এ বারও যে তিনি শান্তিবাদী সাজিয়াছেন, তাহার পিছনে সম্ভবত একটি ঘটনার ক্রিয়া আছে-- সন্ত্রাসবাদীদের হাতে জমিয়ত আহ্লে হাদিশ নেতা মৌলবি শওকত শাহের নৃশংস হত্যা, যাহার প্রতি ধিক্কারে মুখর হইয়াছেন হুরিয়ত সভাপতি ওমর ফারুক হইতে জে কে এল এফ নেতা ইয়াসিন মালিক পর্যন্ত অনেকেই। পাকিস্তান লালিত এই মুজাহিদিন বা মুক্তি যোদ্ধারা যে কাশ্মীর আন্দোলনের কর্তৃত্ব নিজেদের করতলগত করিতে ব্যগ্র, এই হত্যাকাণ্ডে তাহারই প্রমাণ পাইয়াছেন তাঁহারা। এই অবস্থায় গিলানির পক্ষে নীরব থাকা কঠিন। অতএব হিংসা ও সন্ত্রাসের নিন্দা তাঁহাকে করিতেই হইত। সেই সন্ত্রাস যে প্রায়শ স্বপক্ষের যোদ্ধাদের বলি চড়াইতেছে, তাহাও কম অস্বস্তিকর কারণ নয়। গিলানি তাই শান্তির পথে অগ্রসর হইতে চাহেন, আলাপ আলোচনার পথই তাঁহার পছন্দ। আর এক গিলানি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য 'নিরবচ্ছিন্ন' দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালাইতে উৎসুক। অথচ সৈয়দ আহমদ শাহ গিলানি ভারতীয় সংবিধানের চৌহদ্দির ভিতরে কোনও আলোচনায় প্রস্তুত নন। তিনি তবে কী লইয়া শান্তি-আলোচনা চান? কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লইয়া? অন্তত মুখে তেমনটাই বলিতেছেন। কিন্তু তাঁহার বা হুরিয়তের অপরাপর নেতাদের মুখের কথায় ভরসা করা অর্থহীন। অভিজ্ঞতা সেই ভরসা সরবরাহ করে না। মীমাংসায় যদি তাঁহাদের রুচি থাকিত, তবে তাঁহারা শ্রীনগরে হাজির সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের সহিত সহযোগিতার পাশাপাশি বিশিষ্ট অসরকারি ব্যক্তিত্বদের লইয়া গঠিত মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গেও আলোচনা করিতেন, সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে পারিতেন। তাহার বদলে তাঁহারা মধ্যস্থতাকারীদের সম্পূর্ণ বয়কট করিলেন এবং হুরিয়তেরই প্রাক্তন সভাপতি মৌলানা আব্বাস আনসারিকে মধ্যস্থতাকারীদের সহিত কথা বলার অপরাধে বহিষ্কার করা হইল। এই লোকগুলি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় বিশ্বাসী, এমন বিশ্বাস করা অতএব কঠিন। তেমন হইলে কাশ্মীর সমস্যা কবেই মিটিয়া যাইত। কিন্তু লস্কর-এ-তৈবা, হিজবুল মুজাহিদিনের মতো পাক-আশ্রিত জঙ্গি জেহাদিদের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া তাঁহারা এক পা-ও অগ্রসর হইতে পারেন না। একই সঙ্গে জনসাধারণের বিভিন্ন ইচ্ছা-অনিচ্ছাও শিরোধার্য করিতে হয়। তাই যখন তাঁহারা দেখিলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংসা কবলিত উপত্যকায় ভারত সরকার সংগঠিত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গি হুমকি ও বয়কটের ডাক অগ্রাহ্য করিয়া ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত ভোটদাতা স্থানীয় উন্নয়নের দাবিকে অগ্রাধিকার দিয়া সোৎসাহে অংশগ্রহণ করিলেন, তখন জনবিচ্ছিন্ন 1_d0ওয়ার শঙ্কা হইতেই পুনরায় শান্তির বাণী শুনাইবার এই সিদ্ধান্ত। আলোচনা নিশ্চয়ই জরুরি, কিন্তু আলোচকদের বিশ্বাসযোগ্যতাও কম জরুরি নয়। সম্পাদকীয় ২... | অবাঞ্ছিত | সম্প্রতি দেশের শীর্ষ আদালতে দায়ের করা একটি মামলার সূত্রে বিচিত্র একটি তথ্য মিলিয়াছে। বিগত ২০০৯ সালে দেশে আনুমানিক এক কোটি দশ লক্ষ পরিত্যক্ত শিশুর সন্ধান পাওয়া গিয়াছিল। তাহার নব্বই শতাংশই কন্যাশিশু। তথ্যটি, সংক্ষেপে বলিলে, ভয়ঙ্কর। ২০০৯-কে ব্যতিক্রম ভাবিয়া সন্তুষ্ট থাকিবার হেতু নাই। দেওয়ালের লিখনটি স্পষ্ট। শুধু পড়িয়া লইবার অপেক্ষা। পড়িয়া ফেলা উচিত, কারণ সবেমাত্র সর্বনাশের সূচনার আভাস দেখা দিয়াছে। সতর্ক না-হইলে সংকট গভীরতর হইবে। কন্যাশিশুর প্রতি ভারতীয় সমাজের মনোভাব ঠিক কী রকম, তাহা সাম্প্রতিক জনগণনা হইতেই বাহির হইয়াছে। প্রতি হাজার পুরুষে নারীর সংখ্যা কমিতে কমিতে ৯১৪-য় আসিয়া ঠেকিয়াছে। স্বাধীনতার পরে ভারতে ইহাই পুরুষ ও নারীর সর্বনিম্ন আনুপাতিক হার। অর্থাৎ, ভারতীয় গণমানসে কন্যা এখনও অবাঞ্ছিত। বিধিবদ্ধ উপায়ে গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ বন্ধ করিবার চেষ্টা চলিতেছে। তাহাতে কিছু ফল যে হয় নাই, তাহা নহে। প্রশ্ন হইল, গণমানস নিছকই আইনের বশ নহে। তাহার সুচেতনার জন্য একটি সচেতনতা প্রয়োজন। পরিভাষায় যাহাকে বলে 'ডেটারেন্ট' অর্থাৎ নিবারক, শুধুমাত্র শাস্তির ভয় সেই কাজটুকু করিতে পারে। অতঃপর, নিজস্ব সচেতনতাই ভরসা। সেই ক্ষেত্রটি এখনও অন্ধকার। পরিণামে কোটির অধিক পরিত্যক্ত শিশুর ভিতরে নব্বই শতাংশ কন্যাশিশু অসহায় ভাবে সমাজের মুখের দিকে চাহিয়া থাকে। এই অসহায়তাটি তুলনাহীন। লজ্জাকরও বটে। সমাজ কী করিতেছে? এই দেশে একটি বিধিবদ্ধ দত্তক গ্রহণ প্রথা আছে। দেশে দত্তক গ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তির সংখ্যাও বিশেষ কম নহে। সুতরাং, কিছু শিশু সেই সূত্রেও নূতন ঠিকানা লাভ করিতে পারে। পুনর্বার পরিসংখ্যানই ভরসা। সেই অঙ্ক বলিতেছে, ২০০৯-এ এক কোটি দশ লক্ষ পরিত্যক্ত শিশুর ভিতরে মাত্র দুই হাজার পাঁচশত আঠারোটি শিশু দত্তক হিসাবে গৃহীত হইয়াছে। সংখ্যাটি এমনই স্বল্পাকার যে ভগ্নাংশের হিসাব কষিলে হাস্যকর ঠেকিবে। অথচ, বিষয়টি নিছকই হাসির নহে। কারণ, সংখ্যাটিও নিছক দুই হাজার পাঁচশত আঠারো নহে। এই পর্যন্ত সরকারি বিধিবদ্ধ তথ্য। তাহার পরে আরও অজস্র শিশু যে বিক্রি হয়, সদুদ্দেশ্যে এবং অসদুপায়ে, তাহা বাস্তব। নির্মম বাস্তব। অথচ, সরকারি হিসাব সেই আনুবীক্ষণিক ভগ্নাংশেই বন্দি রহিল। কেন রহিল, সেই প্রশ্নটিও তোলা উচিত। দেশের সরকারি দত্তক গ্রহণ প্রথা যে কার্যত নিষ্ক্রিয় হইয়া পড়িয়াছে, এই তথ্য তাহারই প্রমাণ। একটি বেচাকেনার বাজার পুরাদমে কাজ করিতেছে, অথচ সরকারি তৎপরতা প্রায় নাই বলিলেই চলে। এই পরিস্থিতিতে একটি শূন্যতা তৈয়ারি হইবার কথা। হইয়াছেও। সেই শূন্য ময়দানে যে বিবিধ আইন-বহির্ভূত কাজকর্ম চলিতেছে, তাহা জনগোচর তো বটেই, সরকারও জানে না বলিলে অন্যায় হইবে। অথচ, জানিবার পরে সরকার কী করিতেছে, তাহা আদপেই স্পষ্ট নহে। দেশের গরিষ্ঠ সংখ্যক জনতা কন্যাশিশু লইয়া কী ভাবিতেছেন, তাহা অবশ্য স্পষ্ট। পাটিগণিতের হিসাবে প্রায় এক কোটি পরিত্যক্ত কন্যাশিশুই সেই ভাবনাচিন্তার স্পষ্ট প্রমাণ। নিছকই আইন করিয়া সরকারি উদ্যোগে এই সমস্যার সমাধান করা যাইবে না। জনতা সত্যকার অর্থে সচেতন না-হইলে এই সংকটের কার্যকর সমাধান খুঁজিয়া পাওয়া অসম্ভব। |
|
|
|
|
| |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
বিহারে ২ দফার পঞ্চায়েত ভোট নির্বিঘ্নে | নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা | আজ মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হল বিহার পঞ্চায়েত নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। মোট ভোট পড়েছে ৫৮.৮ শতাংশ। সব থেকে বেশি ভোট পড়েছে কৈমুর জেলায়। সেখানে ভোট পড়ার হার ৬৮ শতাংশ। নওয়াদা জেলায় ভোট পড়ার হার সব থেকে কম, মাত্র ৪৪ শতাংশ। মোট ৩৭ টি জেলায় ৫৭ টি ব্লকের প্রায় ৫ লক্ষ ২৮ হাজার ভোটার আজ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। ৯৪ হাজার ৭৭৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করলেন তাঁরা। ১২ হাজার ৫৫৯টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সর্বত্রই কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত ছিল। এ সব সত্ত্বেও ছোটোখাটো কিছু গণ্ডগোলের খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের দাবি, কড়া নজরদারি বহাল থাকায় বড় ধরনের কোনও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। | | নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে গিয়ে ফাঁকা মাঠে নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে উদ্ধার করা বোমা। রবিবার বিহারে গয়া জেলার টেকারি এলাকায় রঞ্জিত দে-র তোলা ছবি | গয়ার টেকারিতে ৮টি তাজা বোমা পাওয়া যায়। পুলিশ সেগুলো দূরে নিয়ে গিয়ে নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা করে। কেউই হতাহত হননি। শেখপুরায় অরিয়ারি ব্লকের ভিমন পঞ্চায়েতের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা অভিযোগ করেন যে ওই কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যালট পেপার নেই। তার পর জেলা প্রশাসন সেখানে ভোটগ্রহণ বাতিল বলে ঘোষণা করে। এই ঘটনায় উত্তেজিত জনতা সরকারি গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। এতে আহত হয়েছেন এক মহকুমা শাসক মনজুর আলি। ভোটারদের মধ্যে টাকা বিলি করার অপরাধে নওয়াদা জেলার আকবরপুর ব্লক থেকে চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার মনোজ কুমার রাজ জানান, কুলা পঞ্চায়েতের জেলা পরিষদের সভাধিপতি নীতু কুমারী কে এই অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর কাছে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা ছিল। তাঁর কাছ থেকে একটি বিনা নম্বর প্লেটের গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। টাকা বিলি করার অপরাধে ধরা পড়েছেন আরও তিন জন। তাঁদের কাছে পাওয়া গিয়েছে ৪ হাজার টাকা। শঙ্করপুর বিন্হি পঞ্চায়েতে ভোট চলাকালীন এক প্রার্থীর প্রায় ৫০-৬০ জন সমর্থক শূন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে দুটি বুথ দখল করার চেষ্টা করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে গোলমালের খবর পাওয়া মাত্রই তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ ও প্রশাসন। জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে পুলিশ এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারেও জনজোয়ারে আজহার | নির্মল বসু • বসিরহাট | তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে এ বার প্রচারে নামলেন কংগ্রেস সাংসদ তথা ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন। এ রাজ্যে ভোটের প্রচারে এত দিন যে ক'টি কেন্দ্রে গিয়েছেন তিনি, সব জায়গায় প্রার্থী ছিল কংগ্রেসের। আজহার নিজেও ওই দলেরই সাংসদ। রবিবার তিনি এসেছিলেন বসিরহাট (উত্তর) কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সর্দার আমজাদ আলির সমর্থনে (যাঁকে পরে 'কাকা' সম্বোধন করে আজহার বলবেন, তাঁর ডাকেই এখানে আসা)। এ দিন ৫০ কিলোমিটারের বেশি রোড-শো করেছেন আজহার। তাঁর দর্শনপ্রার্থী জনতার ঢল দেখে দেখে এ ক'দিনে ঈষৎ ধাতস্থ হওয়ার কথা ছিল আজহারের। কিন্তু এ দিনও মানুষের আবেগের জোয়ার দেখে বিহ্বল প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক। তিনি বলেন, "এখানে আসব আগে ভাবিনি। বিশ্বাস হচ্ছে না, এত লোক আমাকে ভালবাসতে পারে।" সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি, স্নিকারের রাজনীতিক-সুলভ পোশাকে ইতিমধ্যেই রাজ্যবাসী তাঁকে দেখেছে। এ দিনও কপ্টার হাসনাবাদের মাটি ছোঁয়ার পরে সেই পোশাকেই নেমে এলেন আজহার। চোখে সানগ্লাস। মাথায় টুপি। হাসনাবাদের আমলানি বাজার থেকে শুরু হয় তাঁর রোড-শো। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে তাঁকে ম্যাটাডরে তুলতে রীতিমতো হিমশিম থেকে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। | | প্রচারে আজহারউদ্দিন। রবিবার বসিরহাটে। — নির্মল বসু | রাজ্যের প্রত্যন্ত এই এলাকায় ফ্যান-ক্লাবের তোড় সামলে মধ্যে মধ্যে জোট-প্রার্থীর হয়ে প্রচারের আনুষ্ঠানিকতাটুকু সেরে নেন আজহার। হিন্দিতেই বলেন, ''এ রাজ্যে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। সিপিএম এত বছর ক্ষমতায় থেকেও এখানে কোনও কাজ করেনি। কংগ্রেস-তৃণমূলের তরফে প্রণব-মমতা যে জোট হয়েছে, তা কেন্দ্রে সনিয়াজী-রাহুলজীর হাতই শক্ত করবে। জোট-বিরোধী কাউকে একটি ভোটও দেবেন না। এখানে জোট জয়ী হওয়া মানে কেন্দ্রে সনিয়া-রাহুলের জয়।" আজহারের আশা, জোট এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এত উন্নয়ন হবে, যা আগে কেউ কখনও দেখেনি। আজহারের কনভয়ের সঙ্গে ছিল কয়েকশো বাইক, অটো, যন্ত্রচালিত ভ্যান। কংগ্রেস, তৃণমূল দু'দলের কর্মী-সমর্থকেরাই সামিল হয়েছিলেন তাতে। জনতার ভিড়ে একেক সময় আটকে গিয়েছে কনভয়। মোবাইলে ছবি তুলতে দেখা গেল অনেককে। আজহারের নাম ধরে তারস্বরে চেঁচাচ্ছিলেন রাস্তার দু'ধারের মানুষ। মহিলারা শাঁখ বাজাচ্ছিলেন। উলুধ্বনি দিচ্ছিলেন। রাস্তায় রাস্তায় অনুগামীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন ফুল, আবির নিয়ে। আজহার অনেকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন গাড়ি থেকেই। বাড়িয়ে দেওয়া ব্যাটে সই করেছেন। ফ্যানেদের মধ্যে এক অতি উৎসাহী শুধুই কাগজ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আজহার বললেন, "আরে ভাই পেন তো দো।" সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে এক সহকর্মী বাড়িয়ে দিলেন কলম। হরিহরপুরে বেশ কয়েক জন কিশোরের চিৎকারে গাড়ি থামাতে বললেন আজহার। ছেলেরা ছুটে এসে ঘিরে ধরল তাঁর গাড়ি। অটোগ্রাফ চেয়ে বাড়িয়ে দিল ব্যাট। হিন্দিতেই জানতে চাইলেন আজহার, "তোমরা ক্রিকেট খেলো?" পরে বললেন, "সেই কবে খেলা ছেড়েছি। অথচ এখনকার বাচ্চারাও আমাকে মনে রেখেছে দেখছি।" বসিরহাট (উত্তর) বিধানসভা কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রোড শো করেছেন আজহার। প্রচারে তাঁকে পেয়ে আপ্লুত তৃণমূল প্রার্থীও। বলেন, "আমি নিজেও আজহারের খেলার ফ্যান ছিলাম। আমার প্রচারে আসতে উনি এক কথায় রাজি হয়ে যাবেন ভাবতেও পারিনি। জোটের বার্তা এতে আরও জোরদার হবে।"
'সুন্দরীর' প্রতিশ্রুতি নিয়ে তোয়াক্কা নেই 'সম্রাটের' | শুভাশিস ঘটক • রায়দিঘি | তিনি যেন এ তল্লাটের 'সম্রাট'। আর তাঁর বিপরীতে টালিগঞ্জের 'সুন্দরী'। লুঙ্গি-পাঞ্জাবিতে 'সম্রাট' ঘুরেছেন মোটরবাইকে। 'সুন্দরী' অটোয়। পরনে দামি সুতির শাড়ি। চোখে সানগ্লাস। যেখানেই গিয়েছেন, লোকে হাঁ করে দেখেছে। 'সম্রাট' কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় সরাসরি ভোট চাননি। আর 'সুন্দরী' দেবশ্রী রায় বইয়ে দিয়েছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন রায়দিঘি কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী হিসাবে দেবশ্রীর নাম ঘোষণা করলেন, তার অনেক আগে থেকেই পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছেন কান্তিবাবু, যাঁকে গোটা বিধানসভা এলাকার ৯০ শতাংশ মানুষ 'দাদা' বলে ডাকেন। যিনি আয়লার পরে প্রায় এক মাস চরকির মতো ঘুরেছেন রায়দিঘি-সহ সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত ১৬টি ব্লকে। দুর্গত মানুষদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন, বাঁধে মাটি দিয়েছেন, বাঁশ পুঁতেছেন। মানুষের জন্য সাহায্য জোগাড় করেছেন নানা ভাবে। মানুষের দুর্দিনে তিনি পাশে ছিলেন। তাই মানুষ তাঁকেই জেতাবেন বলে দাবি কান্তিবাবুর। সরাসরি ভোট চাননি ঠিকই, তবে কৌশলে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁকে না-জেতালে 'বিপদের' কথা। বহু গ্রামবাসীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, "দেশের সামনে খুব বড় বিপদ। তোরা তো সবই জানিস। আবার মনে হয়, ভাতের ফ্যান খাওয়ার সময় এসে গেল। গরিবেরা আর বাঁচবে না।" | | দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে তৃণমূল প্রার্থী দেবশ্রী রায়ের সমথর্নে প্রচারে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় এবং গায়ক পল্লব কীর্তনীয়া। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র। | কিন্তু সরাসরি ভোট না-চেয়ে কান্তিবাবু কি বেশিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়লেন না! যেখানে রাজ্য জুড়ে 'পরিবর্তনের হাওয়া' এত প্রবল, যে জেলায় পঞ্চায়েত ভোটে ধরাশায়ী হয়েছে কান্তিবাবুর দল, যে জেলা থেকে লোকসভা ভোটে কোনও সাংসদ পায়নি সিপিএম— সেখানে প্রার্থীর এই পদক্ষেপ ব্যুমেরাং হয়ে যাবে না তো? কান্তিবাবুর ব্যাখ্যা, "এই কেন্দ্রের ১৭টি পঞ্চায়েতই বিরোধীদের দখলে। ওদের দুর্নীতিতে মানুষ তিতিবিরক্ত। তাই এ বার মানুষ সিপিএমকেই চাইছে।" আরও 'অকাট্য' যুক্তি দিচ্ছেন কান্তিবাবুর এক ছায়াসঙ্গী, "এখানকার ২৫৬টি বুথের মানুষকে দাদা খুব ভাল করে চেনেন। প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িতেই দাদা একাধিক বার নানা কারণে আগে গিয়েছেন। সারা বছরই তো এদের নিয়েই থাকেন। ভোটের জন্য আলাদা কোনও প্রচারের প্রশ্নই নেই।" রায়দিঘি নতুন কেন্দ্র। সাবেক মথুরাপুরের একাংশ ঢুকেছে এই কেন্দ্রে। মথুরাপুর থেকে জিতে কান্তিবাবু দশ বছর মন্ত্রিত্ব করছেন। তাই এলাকাটি তাঁর 'হাতের তালুর মতো' চেনা। ঠিক এই জায়গাতেই কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে দেবশ্রীকে। ভোটের জন্য ডায়মণ্ড হারবারে হোটেল ভাড়া করে রয়েছেন। অটোতে বা হেঁটে চষেছেন নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র। বৈশাখের তপ্ত দুপুরে ঘেমেনেয়ে একসা হয়েছেন। কখনও কোনও বাড়িতে ঢুকে বিশ্রাম নিয়েছেন। তাঁকে দেখতে ভিড়ও হয়েছে। উৎসাহীরা তাঁর উপরে পুষ্পবৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সেই ভিড় ভোটের বাক্সে প্রভাব ফেলবে তো? প্রশ্ন থাকছে তৃণমূলের অন্দরেই। নতুন মাঠে খেলতে নেমে দেবশ্রীর নতুন অভিজ্ঞতা, "এখানে কোনও কাজই হয়নি। যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই অভিযোগ পাচ্ছি। পানীয় জল নেই, রাস্তা খারাপ, ঝড়ে বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপুরণ মেলেনি। যা-তা অবস্থা। ভোট চাইলে গ্রামবাসীরা বলছেন, আগে টিউবওয়েল বসিয়ে দাও। তারপরে ভোট দেব। ভাবুন!" এর পরেই প্রত্যয়ী দেখায় 'সুন্দরী'কে। বলেন, "কাজ হয়নি। আমি জিতব। কাজও করব।" সুন্দরবনের উন্নয়ন করার এই তিনি প্রতিশ্রুতি বিলিয়েছেন এক মাস ধরে। যা শুনে হাসছেন কান্তিবাবু। বলছেন, "এলাকার মানুষ জানেন, কতটা উন্নয়ন হয়েছে। এলাকাটা আগে চিনতে হবে, জানতে হবে। তার পরে তো বক্তব্য।" বিধানসভায় 'সম্রাট' ও 'সুন্দরী'র লড়াই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে রায়দিঘিতে। তৃণমূলকে জেতাতে বলে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনায় প্রণব | নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট | বামফ্রন্ট সরকার ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও এ রাজ্যে কোনও উন্নয়নই করতে পারেনি। বরং ওরা পশ্চিমবাংলাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। বাম জমানায় সাক্ষরতায় পশ্চিমবঙ্গ নাগাল্যাণ্ড, মনিপুরের থেকেও পিছিয়ে। রবিবার বিকেলে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নারায়ণ গোস্বামীর সমর্থনে সভা করতে এসে শাঁকচুড়ো বাজারের কাছে স্মরণীয়া কারবালা ময়দানে এ ভাবেই বামফ্রন্ট ততা সিপিএমকে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ হেলিকপ্টারে করে আসার কথা ছিল প্রণববাবুর। সেই মতো কারবালা ময়দানে সভামঞ্চের পিছনে হেলিপ্যাডও তৈরি করা হয়েছিল। এমনকী হেলিকপ্টার দেখার জন্য কচিকাঁচা থেকে মহিলা, বুড়ো সকলেই জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু পরে জানা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রণববাবু হেলিকপ্টারে আসতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত দমদম বিমানবন্দর বসিরহাটে উদ্দেশে রওনা হন। | | হঠাৎ বৃষ্টিতে মাথা বাঁচাচ্ছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বসিরহাটে একটি জনসভায়। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র | বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আকাশ কালো করে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। ওই মাঠের পাশেই একটি একটি গুদামে আশ্রয় নেন। কাউকে কাউকে দেখা যায়, মাঠে বসার জন্য যে পলিথিন ছিল তার তলায় মাথা ঢাকতে। ইতিমধ্যে পাঁচটা নাগাদ প্রণববাবুর কনভয় যখন মাঠে এসে পৌঁছয়, তখন ঝড়ের দাপট কিছুটা কমলেও অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল। তারই মধ্যে কোনওরকমে গাড়ি থেকে নেমেন মঞ্চের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। কিচুটা গিয়েই আচমকা কাদার মধ্যে পা পিছলে যায় প্রণববাবুর। সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে ধরে ফেলেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে দেখে ততক্ষমে অবশ্য স্থানীয় তৃণমূল ও কংগ্রেস সমর্থকেরা মঞ্চের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছেন। তাঁদের উদ্দেশে প্রণববাবু বলেন, "যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কপ্টার উড়তে পারেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনাদের কথা ভেবে গাড়িতেই এখানে চলে এলাম।" আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, "তবে এখন যে দুর্যোগ চলছে, তার চেয়েও বড় দুযোগ চলছে এই রাজ্যে। বামফ্রন্ট রাজ্যকে কেবল পিছিয়ে দিয়েছে। তাই ওদের সরাতেই মমতার সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া।'' বামফ্রন্টের স্লোগান 'গরিবের বন্ধু'-র প্রসঙ্গ টেনে প্রণববাবু বলেন, " পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে রাজত্ব করলেও ওরা গরিবি হটাতে পারেনি।" কংগ্রেসি হয়ে কেন তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসিদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, "তৃণমূলের সঙ্গে জোট হওয়ায় অনেকেরই অসুবিধা হচ্ছে। অনেকেই ক্ষুব্ধ। কিন্তু তাঁদের মনে রাখতে হবে, বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থেই এই জোট করা হয়েছে।" মঞ্চে কংগ্রেস এবং তৃণমূল নেতাদের পাশে নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী নারায়ণ গোস্বামীকে জোড়া ফুল চিহ্নে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে প্রণববাবু বলেন, "আয়লার সময় না চাইতেই রাজ্য সরকারকে এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছিলাম। অথচ দু'বছর পার হয়ে গেলেও ওরা নদীর বাঁধ বাঁধা এবং গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির কাজে সেই টাকা ব্যবহার করতে পারল না।" বামফ্রন্ট সরকারের নানা কাজের সমালোচনা করে প্রণববাবু বলেন, "সঠিক ভাবে জোট না হওয়ার কারণে আগে এর আগে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ওদের ক্ষমতা থেকে হটানো যায়নি। তাই মানুষ মনে করছিল, হয়তো ওদের আর সরানো যাবে না। তাই এ বার আমরা বহু আলোচনা করে বামফ্রন্টকে সরাতেই মমতার সঙ্গে জোট করেছি।" আয়লার পরে পুনর্গঠনে ব্যর্থ রাজ্য, বাসন্তীতে নালিশ প্রণবের | নিজস্ব সংবাদদাতা • বাসন্তী | আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। রবিবার সকালে বাসন্তীতে দলীয় প্রার্থী অর্ণব রায়ের সমর্থনে এক সভায় প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেন, "আয়লার খবর পেয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে আমি ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলাম। রাজ্য সরকার কোনও প্রকল্পই পাঠায়নি। এমনকী কেন্দ্রের পাঠানো টাকায় নদীবাঁধ, গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি পর্যন্ত করতে পারেনি এই সরকার।" আয়লার প্রসঙ্গ টেনে প্রণববাবু বলেন, "উত্তরবঙ্গে সিপিএম বিরোধী যে ঝড় উঠেছে, তা সুন্দরবনে আয়লা হয়ে আছড়ে পড়বে। সেই ঝড়ে সিপিএমের শাসন শেষ হবে।" রাজ্যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বামফ্রন্ট সরকার কিছু করেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর কথায়, "রাজ্যে বর্তমানে নথিভুক্ত ৭০ লক্ষ বেকার রয়েছেন। কিন্তু ১৯৭৭ সালে রাজ্যে কত জন বেকার ছিল? গত ৩৪ বছরে কমর্সংস্থানের জন্য রাজ্য সরকার কিছুই করেনি।" | | দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে সভায় প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: সামসুল হুদা। | মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পনীতির সমালোচনা করেন তিনি। নাম না করে প্রণববাবু বলেন, "মাঝেমধ্যেই মউ স্বাক্ষর করতে বিদেশে যান। সেখানে থেকে শিল্পপতিরা রাজ্যে আসবে এবং বেকারদের চাকরির আশ্বাস দেন। কিন্তু ৩৪ বছরে কত চাকরি হয়েছে? কোথায় হয়েছে?" এ দিন প্রণববাবু ছাড়াও সভায় হাজির ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদ। আয়লা প্রসঙ্গে প্রণববাবুর অভিযোগের জবাবে সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আমরা এক হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা এসেছিলেন। তার পরে কেন্দ্র ১৮৭ কোটি টাকা পাঠায়। জেলা পরিষদের মাধ্যমে তা খরচ হয়েছে।" টুকরো খবর | | যুবককে ছুরি মেরে খুন নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা টিটাগড়ে রবিবার রাতে ছুরি মেরে এক যুবককে খুন করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম রবি জয়সোয়াল (২৪)। টিটাগড়ের বৌবাজারের ওই বাসিন্দাকে খুন করার অভিযোগে তাঁর এক বাল্যবন্ধুকে খোঁজা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, রাত ৮টা নাগাদ টিটাগড় বাজারের কাছে হাড়িপাড়ায় রবি এবং তাঁর বাল্যবন্ধু রূপেশ সাউয়ের মধ্যে বচসা বাধে। রূপেশ তখনই ছুরি দিয়ে রবির বুকে আঘাত করে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারাই রক্তাক্ত রবিকে ব্যারাকপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রূপেশ ফেরার। মিছিলে ভ্যান উল্টে মৃত ১ নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা নির্বাচনী মিছিলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক যুবতীর। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে বজবজের সিইএসসি প্ল্যান্টের কাছে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম টুম্পা অধিকারী (২৭)। বজবজ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অশোক দেবের নির্বাচনী মিছিলে একটি ম্যাটাডরে ছিলেন টুম্পা। উল্টো দিক থেকে আসা একটি অটোরিকশাকে পাশ কাটাতে গিয়ে ভ্যানটি উল্টে যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। | সেনসেক্সের লক্ষ্য ফের ২০ হাজার অমিতাভ গুহ সরকার |
| স্বস্তির কথা শুনিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এ বারও দেশে স্বাভাবিক বর্ষণের ব্যবস্থা করবেন বরুণদেব। তা যদি হয় তবে এটা হবে দশ বছরের মধ্যে সাত বছর স্বাভাবিক বর্ষা। গত বছর স্বাভাবিকের থেকে ২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল দেশে। ফলে উন্নতি হয়েছে কৃষি উৎপাদনে। এর আগের বছর অবশ্য বড় রকম ঘাটতি ছিল বর্ষায়। স্বাভাবিক বর্ষণের ইঙ্গিতে স্বভাবতই খুশি কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য এবং শেয়ার বাজার। দেশের আর্থিক উন্নয়ন এবং খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতির অনেকটাই নির্ভর করে আকাশ থেকে কতটা জল ঝরে তার উপর। ২০০৮-'০৯ এবং ২০০৯-'১০ সালে বর্ষায় ঘাটতি থাকায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল শূন্যের কাছাকাছি। ভাল বর্ষার সুবাদে ২০১০-'১১ সালে তা বেড়ে হয় ৫.৪ শতাংশ। শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা রাখার অন্যতম শর্ত হল পরিমাণ মতো সুষম বর্ষণ। সুখবর শুনিয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্য দফতরও। ২০১০-'১১ অর্থবর্ষে দেশের রফতানি বেড়েছে ৩৭.৫ শতাংশ। স্বাধীনতার পর এটিই সব থেকে চড়া রফতানি বৃদ্ধির হার। মনে রাখতে হবে এটি সম্ভব হয়েছে ভারতীয় টাকার দাম বাড়া এবং মন্দা কবলিত বিশ্ব বাজারে চাহিদা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও। গত বছর রফতানির পরিমাণ ছিল ২৪,৬০০ কোটি ডলার। চলতি বছরে রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২৫ শতাংশে রাখা হয়েছে। ২০১৩-'১৪ সালে রফতানি ৪৫,০০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি আছে খারাপ খবরও। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নতুন করে সুদ বাড়ানোর আগেই স্টেট ব্যাঙ্ক বিভিন্ন ঋণের উপর সুদ বাড়িয়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণ-নীতির পর্যালোচনা করবে ৩ মে। দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক সুদ বৃদ্ধি করায় খরচ বাড়বে বাড়ি, গাড়ি এবং শিল্প ঋণে। এর পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি আর এক দফা সুদ বাড়ানোর ব্যবস্থা করে তবে তা অবশ্যই আঘাত হানবে বিভিন্ন শিল্পের উপর। ফলাফল প্রকাশের তৃতীয় সপ্তাহে আয় ও লাভের হিসাব নিয়ে হাজির দুই মহানায়ক। গত সপ্তাহে চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা বার্ষিক ফলাফল প্রকাশ করেছে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা রিলায়্যান্স ইণ্ডাষ্ট্রিজ এবং বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি টি সি এস। অন্যদের মধ্যে ফলাফল নিয়ে হাজির হয়েছে এইচ ডি এফ সি ব্যাঙ্ক এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। বাজারের আশার তুলনায় আয় অনেকটা বাড়লেও রিলায়্যান্স-এর নিট লাভ প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছতে পারেনি চতুর্থ ত্রৈমাসিকে। কোম্পানির আয় যখন ২৫ শতাংশ বেড়ে পৌঁছচ্ছে ৭৫,২৮৩ কোটি টাকায় তখন নিট মুনাফা ১৪ শতাংশ বেড়ে স্পর্শ করেছে ৫,৩৭৬ কোটি টাকা। গোটা বছরে কোম্পানির আয় ছাড়িয়েছে ২,৫৮,৬৫০ কোটি টাকা। এই আয়ের উপর নিট লাভ হয়েছে ২০,২৮৬ কোটি টাকা। শেয়ার পিছু আয় ৪৯.৭ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬২ টাকা। ২০১০-'১১ সালে কোম্পানির রফতানি ৩৩ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১,৪৬,৬৬৭ কোটি টাকায়। কোম্পানির বর্তমান নগদ এবং নগদতুল্য তহবিলের পরিমাণ ৪২,৩৯৩ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় লাভ ৪০০০ কোটি টাকা বাড়ায় গত বারের ৭০ শতাংশের জায়গায় মুকেশ অম্বানীর এই বিশালকায় কোম্পানি এ বার ডিভিডেণ্ড দেবে ৮০%, যা টাকার অঙ্কে ২৭৭২ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার প্রায় ১৫ টাকা বেড়ে রিলায়্যান্স শেয়ারের বাজার দর পৌঁছেছে ১০৪১ টাকায়। টি সি এস ভাল ফল প্রকাশ করলেও বাজারে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে কোম্পানির নিট লাভ ৩১ শতাংশ বেড়ে স্পর্শ করেছে ২,৬২৩ কোটি টাকা। প্রায় একই হারে আয় বেড়ে পৌঁছেছে ১০,১৫৭ কোটি টাকায়। গোটা বছরে দেশের বৃহত্তম সফটওয়্যার রফতানিকারী সংস্থার মোট আয় ২৪ শতাংশ বেড়ে ছাড়িয়েছে ৩৭৩২৫ কোটি টাকা। প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে লাভ পৌঁছেছে ১০,৪১৭ কোটি টাকায়। শেষ তিন মাসে কোম্পানির নিয়োগের সংখ্যা ছিল ১১,৭০০ জন। বছর শেষে কোম্পানির মোট কর্মী সংখ্যা ৩৮,১৮৫ জন। ইনফোসিস-এর হতাশাজনক ফলাফলের পর টি সি এসের ফলাফল নিশ্চয়ই নতুন আশা জাগাবে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে। ব্যাঙ্কিং শিল্প যে এ বার ভাল ফলাফল উপহার দেবে, তার ইঙ্গিত মিলেছে মরসুমের গোড়াতেই। এরই মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি এইচ ডি এফ সি ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ও আই ডি বি আই ব্যাঙ্ক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ইণ্ডিয়ান ব্যাঙ্ক। বার বার সুদ বৃদ্ধি এবং পেনশনের বোঝা চাপা সত্ত্বেও এই ফলাফল খুশি রাখবে শেয়ার বাজারকে। ভাল-মন্দের টানাপোড়েনে ১৯ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে কিছুতেই এগোতে পারছে না মুম্বই সূচক। বিশ্ব বাজারের চাঙ্গা অবস্থা, বিদেশি লগ্নি প্রবাহে বৃদ্ধি এবং নজরকাড়া কিছু ফলাফল সেনসেক্সকে সাহায্য করতে পারে আবার কুড়ি হাজারে প্রবেশ করতে। অপেক্ষা এখন তারই জন্য। চাল-গম বিদেশে রফতানির পক্ষে সওয়াল পওয়ারের | সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি | বিদেশে চাল-গম রফতানি করার পক্ষে সওয়াল করলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার। গত অর্থবর্ষে দেশে চাল ও গমের ফলন যথেষ্ট ভাল। পাশাপাশি চলতি বছরে ভাল বৃষ্টির পূর্বাভাসে ফলন আরও বাড়বে বলেই আশা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ব বাজারে ভাল দাম। এই সব কারণেই রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন পওয়ার। | | গম শুকোনোয় ব্যস্ত শ্রমিকেরা। চণ্ডীগড়ের শস্য মণ্ডিতে। তবে বিদেশের বাজার না-ধরলে কি অপচয় বন্ধ হবে এই সোনালি ফসলের? - পিটিআই | ভারতের ক্ষেত্রে ২০১১-য় রেকর্ড পরিমাণ (প্রায় ৮.৪৩ কোটি টন) গম উৎপাদন হবে বলে ইতিমধ্যেই আশা প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। আর চালের ক্ষেত্রে তা প্রায় ১০.২ কোটি টন। একই সঙ্গে, দেশে মজুত গমের পরিমাণও ছাড়িয়েছে ১.৭ কোটি টন। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবর্ষে শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৪% বৃদ্ধির হার ছোঁয়া সম্ভব হবে বলেই আশা। অনেক ক্ষেত্রেই হিমঘরের অভাবে উৎপাদিত চাল ও গম নষ্টও হয়েছে। তাই পওয়ারের মতে রফতানি ফের চালু করার এটাই ঠিক সময়। তবে, ৯ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে ফের খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে থাকবে কেন্দ্র। দেশে শস্যের দাম বাড়লে রফতানি কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠবে বলেই ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। তাই মন্দার সময় যে রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা ফের কবে চালু হবে তা নিয়েও দ্বিধা থেকেই যাচ্ছে। অবশ্য, চলতি বছরে বিশ্ব জুড়ে গম উৎপাদন প্রায় ৩.৪% বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের ফুড অ্যাণ্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও)। তারা জানিয়েছে, ২০১১ সালে বিশ্বে মোট ৬৭.৬ কোটি টন গম উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা, ২০১০-এর থেকে যা ৩.৪% বেশি। এশিয়ার মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদন হবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে এফএও। কারণ গম চাষ এখন যথেষ্ট লাভজনক। রাজকুমারের বিয়ে | | জনপ্রিয়তায় ডায়নাকে ছুঁয়ে ফেলছেন কেট শ্রাবণী বসু • লণ্ডন |
| জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রয়াত শাশুড়িকে এখনও ছুঁতে না পারলেও চড়চড় করে বাড়ছে কেট মিডলটনের 'বাজারদর'। বিপণন গুরুদের দাবি, 'ব্র্যাণ্ড কেট'-এর মূল্য এখন ২০০ কোটি পাউণ্ড। অর্থাৎ, ক্যাথরিন মিডলটনের নাম ভাঙিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে ব্রিটেনে। ব্রাজিলীয় ফ্যাশন ডিজাইনার ড্যানিয়েলা হেলায়েলের তৈরি যে নীল পোশাকটি কেট তাঁর বাগ্দানের দিন পরেছিলেন, সে ধরনের পোশাকের জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। একটি সংস্থার দাবি, তাদের একটি বিশেষ স্টাইলের জিন্স পছন্দ করেন কেট। আবার যে ধরনের সাদা ক্যাজুয়াল টপে স্বচ্ছন্দ ক্যাথরিন, সেগুলির বিক্রিও প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। শুধু জামাকাপড়ই নয়, কেটের মনপসন্দ খয়েরি রংয়ের চামড়ার ব্যাগ বা হাঁটু-সমান বুটও রইরই করে বিকোচ্ছে। অক্সফোর্ড ষ্ট্রিটের ফুটপাথের দোকান থেকে নামীদামি ডিজাইনারের বিপণী— সর্বত্র কেট। এমনকী উইলিয়াম তাঁকে বাগ্দানের যে আঙটিটি দিয়েছিলেন, তারও সস্তা নকল বেরিয়ে গিয়েছে। মাত্র ছ'পাউণ্ডে পাওয়া যাচ্ছে অবিকল সেই আঙটির মতো দেখতে 'এনগেজমেন্ট রিং'। শুধু জিনিসপত্র নয়, কেটের কাঁধে ভর দিয়ে পর্যটন শিল্পকেও চাঙ্গা করে তুলতে চাইছে ব্রিটেন। ২০১২ সালে লণ্ডন অলিম্পিকস। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পর্যটনশিল্পকে তার থেকেও বেশি রসদ যোগাচ্ছে রাজপরিবারের বিয়ে। সাধারণত, লণ্ডনে প্রতিদিন ৫ লক্ষ পর্যটক আসেন। রাজকীয় বিয়ের জন্য সেই সংখ্যাটা আরও ছ'লক্ষ বেড়ে ১১ লক্ষে গিয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন দফতরের মুখপাত্র। লণ্ডন ছাড়া পর্যটকদের টানতে তুলে ধরা হচ্ছে স্কটল্যাণ্ডের শহর সেন্ট অ্যাণ্ড্রুজকেও। এই শহরেই উইলিয়ামের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কেটের। এ ছাড়া, নর্থ ওয়েলসের যে শহরে সংসার পাতবেন নবদম্পতি, সেই অ্যাঙ্গলিসেও পর্যটকদের ঢল নেমেছে। চার্লসের সঙ্গে বাগ্দানের সময় থেকেই তাঁর সোনালি চুল আর মাপা হাসি দিয়ে দুনিয়ার মন কেড়েছিলেন কুড়ি বছর বয়সী রূপসী ডায়না স্পেন্সার। পনেরো বছরের বিবাহিত জীবনে জনপ্রিয়তার নিরিখে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন স্বামীকে, এমনকী, রাজপরিবারকেও। চার্লসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পরেও সেই জনপ্রিয়তাতে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। মৃত্যুর ১৪ বছর পরেও এখনও তিনি ব্রিটিশ রাজপরিবারের অন্যতম পরিচিত মুখ। অন্য দিকে ২৯ বছর বয়সী কেট ডাকসাইটে রূপসীও নন, অভিজাত আদবকায়দাও জানেন না। তাঁর মূলধন স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবহার এবং মনকাড়া খোলা হাসি। তা ছাড়া, উইলিয়ামের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে অনেক দিনের এবং প্রেমিকযুগল পরস্পরের সান্নিধ্যে যে যথেষ্ট খুশি, তা তাঁদের এক সঙ্গে দেখলেই মালুম হয়। কিন্তু ১৩ বছরের বড় চার্লসের সঙ্গে ডায়নার প্রেম-পর্যায়টা ছিল নেহাতই সংক্ষিপ্ত। দু'জনকে এক সঙ্গে যথেষ্ট আড়ষ্ট লাগত। ডায়না নিজেই বিবাহবিচ্ছেদের কিছু দিন আগে বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "আমাদের বিয়েতে সব সময়ে তিন জন ব্যক্তি উপস্থিত থাকত, আমি, চার্লস আর ক্যামিলা (যুবরাজ চার্লসের তৎকালীন প্রেমিকা, বর্তমান স্ত্রী)।" কেট এখন সাংবাদমাধ্যমেরও প্রিয়পাত্রী। 'ভোগ' পত্রিকার ডেপুটি এডিটর এমিলি শেফিল্ডের কথায়, "কেট মুখ খুললেই সেটা খবর। ও এখন যা-ই বলে, সংবাদপত্র আর ম্যাগাজিনগুলো লুফে নেয়।" সিরিয়া | মৃত্যু মিছিল অব্যাহত, চলছে ধরপাকড়ও | সংবাদসংস্থা • দামাস্কাস | তাঁরা গিয়েছিলেন 'শহিদ'দের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁরা জানতেন না 'শহিদ'দের তালিকায় তাঁদের নামও যুক্ত হয়ে যাবে। 'শহিদ'দের শ্রদ্ধা জানানোর মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে কাল 'শহিদ' হন আরও ১২ জন। আর আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ বাড়ি বাড়ি ঢুকে সরকার বিরোধীদের খোঁজে তল্লাশি চালিয়েছে। | | আম্মানে সিরিয়ার দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ।—রয়টার্স | এর আগে বৃহস্পতিবারই প্রেসিডেন্ট বাসার অল-আসাদ ঘোষণা করেন, সিরিয়ায় পাঁচ দশক ধরে জারি থাকা জরুরি অবস্থা আইন প্রত্যাহার করা হল। এই খবরে শুক্রবার জনতা 'মুক্তি মিছিল' নিয়ে নেমে পড়ে রাস্তায় রাস্তায়। আর সেই মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। 'মুক্তি মিছিল' পরিণত হয় 'মৃত্যু মিছিলে'। 'শহিদ' হন অন্তত ১২০ জন। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী কাল দুমা শহরে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪ জনের। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ, ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের যেতে দিচ্ছে না পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরাও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। গোটা দেশ জুড়ে বইছে আতঙ্কের স্রোত। অভিযোগ, জরুরি অবস্থার অবসান হলেও যথেচ্ছ ধরপাকড় চালিয়ে যাচ্ছে বাসার অল-আসাদের পুলিশ বাহিনী। সিরিয়ায় গণতন্ত্র রক্ষা, স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য গঠিত কমিটির প্রধান ড্যানিয়েল সৌদকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিকে, কাল 'শহিদ'দের শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া মানুষের মিছিলে গুলি চালানোর প্রতিবাদে দু'জন সাংসদ পদত্যাগ করেছেন। সরে দাঁড়াতে রাজি ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট সংবাদসংস্থা • সানা
রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের পরে অবশেষে গদি ছাড়তে রাজি হলেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লা সালে। পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির তৈরি ক্ষমতা হস্তান্তরের ৩০ দিন ব্যাপী পরিকল্পনা মেনে সালে সরে দাঁড়াবেন। ইয়েমেন সরকারের তরফে এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। গত দু'মাসে সালে-বিরোধী বিক্ষোভে অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সৌদি আরব এবং আরও পাঁচটি আরব দেশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিরোধী পক্ষের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের এক মাসের মধ্যে সালে সরে দাঁড়াবেন। |
|
|
|
| |
|
|
| বিহার | মান যাচাইয়ের পরীক্ষায় ফেল ৯ হাজার শিক্ষক | নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা | 'কেয়া আপ পাঁচভি ক্লাস সে তেজ হ্যায়', টেলিভিশনের এই জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শোয়ের কথা মনে আছে। যার সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন বলিউড তারকা শাহরুখ খান। ওই শোয়ে আমজনতা অবাক হয়ে দেখেছে, ক্লাস ফাইভের সহজ প্রশ্নের উত্তর অনেক সময়েই দিতে পারেন না বড়রা। কিন্তু সে তো অনভ্যাসের ফল। অনেক সময়েই চর্চার অভাবে পুরনো অনেক জিনিস ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু পড়ুয়াদের নিয়েই যাঁদের দিন কাটে, সেই শিক্ষকেরাও যদি পঞ্চম শ্রেণির বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন? ঠিক এমনটাই ঘটেছে বিহারে স্কুলশিক্ষকদের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের মান যাচাইয়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষায় প্রশ্নগুলি ছিল এ রকম--কোন দিন রাখি পালিত হয়? সূর্যের সব থেকে কাছাকাছি অবস্থান কোন গ্রহের? বাল্বের ফিলামেন্ট কোন ধাতু দিয়ে তৈরি? সম্ভাব্য চারটি উত্তরের মধ্য থেকে সঠিক একটি বেছে নিতে হবে। ঘটনা হল, এমন সহজ সব প্রশ্নের উত্তর না দিতে পেরে অকৃতকার্য হয়েছেন প্রায় ৮ শতাংশ শিক্ষক। সংখ্যায় যা ৯ হাজারের কাছাকাছি। গত বিধানসভা ভোটে বিরোধী দলগুলি প্রচারে তুলোধোনা করেছিল রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে। অভিযোগ ছিল, নীতীশ-রাজত্বে শিক্ষার মান পড়ে গিয়েছে বিহারে এবং নীতীশের সময়ে বহাল হওয়া শিক্ষকদের বেশির ভাগেরই মান খুব খারাপ। ভোটের সময়ে প্রচারে গিয়ে নীতীশ নিজেও শিক্ষকদের মান নিয়ে অভিযোগ শুনেছিলেন। ক্ষমতায় ফিরে তিনি কার্যত স্বীকার করে নেন, পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ না করে ভুলই করেছে সরকার। আর সেই ত্রুটি শোধরাতেই দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় বসেই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ শিক্ষকদের মান যাচাইয়ে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেন। স্থির হয়েছে, এ রকম দু'টি পরীক্ষা দিতে হবে অস্থায়ী প্রাথমিক শিক্ষকদের। দু'টি পরীক্ষাতেই যিনি ফেল করবেন, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করবে সরকার। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন ৮৮৮৪ জন। দ্বিতীয় বারের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেই এঁদের চাকরি যাবে বলে ইতিমধ্যেই মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। একই ভাবে ইতিমধ্যেই ১৭৪ জন দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষাতেও অকৃতকার্য হয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছেন। সরকার খুব শীঘ্রই এঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। রাজ্যের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী পি কে শাহি বলেন, "প্রথম বার স্কুলে শিক্ষক দেওয়াটাই জরুরি ছিল। তড়িঘড়িতে পরীক্ষা না নিয়ে শুধুমাত্র মার্কশিটের ভিত্তিতেই আমরা শিক্ষক বহাল করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষকের মান নিয়ে ক্রমাগত নানা মহল থেকে প্রশ্ন ওঠায় আমরা ওই শিক্ষকদের পরীক্ষায় বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দু'টি পরীক্ষাতেই যাঁরা ফেল করবেন তাঁদের চাকরি যাবে। আর যাঁরা কৃতকার্য হবেন, তাঁদের স্থায়ী শিক্ষকপদে বহাল করা হবে।" এ সব দেখেশুনে বিরোধী দলের নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকি বলছেন, "আমরা আগেই বলেছিলাম সরকারের শিক্ষক নিয়োগ নীতি ভুল। এখন তা সবাই টের পাচ্ছে।" কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে নীতীশ কুমারের নয়া দাওয়াই বিহারে | নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা | সিপিএম নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন 'ডু ইট নাউ'। চটজলদি কাজ করার কর্মসংস্কৃতি সরকারি স্তরে ফেরানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি। মুখে না বললেও খাতায়-কলমে সরকারি দফতরগুলিতে কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে বুদ্ধবাবুর ঢঙেই ময়দানে নেমে পড়লেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। তফাৎ শুধু বুদ্ধবাবু যা মুখে বলেছিলেন, নীতীশ তা খাতায়-কলমে বাস্তবায়িত করতে চাইছেন। রাজ্যের সাধারণ প্রশাসন বিভাগ থেকে সম্প্রতি একটি নির্দেশ সরকারের সব বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এ বার থেকে বেশির ভাগ ফাইলই বিভাগে তিন দিনের বেশি আটকে রাখা যাবে না। কোনও কারণে তিন দিনের বেশি কোনও ফাইল আটকে রাখলে, তার কারণ দর্শাতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরকে। এই প্রক্রিয়ার সার্থক বাস্তবায়ন করতে নতুন পদ্ধতিও অবলম্বন করছে বিহার সরকার। ওই পদ্ধতি অনুযায়ী, এখন থেকে যে কোনও ফাইলের উপরে একটি বিশেষ কপি থাকবে। তাতে কোন তারিখে ওই ফাইল সংশ্লিষ্ট বিভাগে এসেছে এবং কবে তা ছাড়া হচ্ছে, তা নথিভুক্ত করতে হবে। দেরি হলে সেখানেই তার কারণও লিখে রাখতে হবে। সাধারণ প্রশাসন বিভাগের সচিব দীপক কুমার জানিয়েছেন, আগামী ২৫ তারিখ থেকেই এই প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে রাজ্যের সমস্ত সরকারি দফতরেই। তার আগে সাধারণ প্রশাসন বিভাগ থেকেই ফাইলের উপরে নথিভুক্ত করার জন্য ফর্ম পাঠিয়ে দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন প্রায় তা শেষের পথে। দীপক কুমার বলেন, "২৫ এপ্রিল থেকে কোনও বিভাগ ওই কপি ছাড়া কোনও বিভাগই নির্দিষ্ট ফাইল বিভাগে গ্রহণ করতে পারবেন না, ছাড়তেও পারবেন না।" ১৯৫২ সাল থেকে বিহার সরকারের আইন অনুযায়ী, কোনও সরকারি কর্মচারী, তিনি সচিবই হোন বা কেরানি, কেউই তিন দিনের বেশি কোনও ফাইল আটকে রাখতে পারবেন না। রাখলে তাঁকে কারণ দর্শাতে হবে। দীপক কুমারের দাবি, "নতুন এই ফর্ম চালু হওয়ার পরে সহজেই জানা যাবে, কোন বিভাগের জন্য ফাইলটি পাশ হতে দেরি হয়েছে। তখনই সেই বিভাগকে কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো যাবে।" সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য কারণ না দেখাতে পারলে ওই বিভাগ বা বিভাগের কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে দাবি সাধারণ প্রশাসন বিভাগের সচিবের। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে ইতিমধ্যেই নীতীশ কুমার সরকারি পরিষেবা নিশ্চিত করতে পরিষেবা অধিকার আইন নিয়ে আসছেন। ইতিমধ্যেই বিধানসভায়তা তা পাশও হয়েছে। এ বার সরকারি বাবুদের ফাইলের পাহাড়ের উপরে বসে থাকার অভ্যাসও পাল্টে ফেলতে সক্রিয় হতে চান নীতীশ। কম্পিউটারে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম, দাবি চার তরুণের | নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি | ম্যাক, উইনডোজ, ইউনিক্স, প্ল্যান ৯-এর পাশাপাশি এ বার আরও একটি নাম জুড়ছে। 'সুপার এক্স'। রিয়াল টাইম অপারেটিং সিস্টেম ভারতে উদ্ভাবন করা বিরল ঘটনা। গত মাসেই 'বস' মুক্তি পেয়েছে। তার সামান্য পরেই এ বার 'সুপার এক্স' দ্বিতীয় ভারতীয় নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম বলে দাবি অসমের চার তরুণের। পেটেন্টের জন্য আবেদনও করা হয়েছে। একাদশ শ্রেণির ঋষিরাজ কৌশিক, ২৫ বছর বয়সী সাং ভাগবতী, ২৭ বছরের নওয়াজ আহামেদ ও ২৮ বছর বয়সী প্রাঞ্জল বরুয়া প্রায় পাঁচ বছরের প্রচেষ্টায় পুরোপুরি নতুন, স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম বানিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি। জানানো হয়েছে, লিনাক্স ভিত্তিক এই নতুন অপারেটিং সিস্টেমের কর্নেলটি একার হাতে বানিয়ে ফেলেছিল ঋষিরাজ। তা-ও ২০০৬ সালে। তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের এমন কাণ্ডে চমকে গিয়েছিলেন তাঁর শিক্ষক, অভিভাবকরা। এরপরেই ঋষির সঙ্গে হাত মেলায় সফ্টঅয়্যার ডেভেলপার প্রাঞ্জল, গ্রাফিক ডিজাইনার ভাগবতী ও নেটওয়র্ক ডেভেলপার নওয়াজ। চার তরুণের দাবি, পাঁচ বছর পরে পুরোপুরি সফল হলেন তাঁরা। আগের মাসেই, 'ভারত অপারেটিং সিস্টেম সলিউসন্স' বা 'বস' নামে প্রথম ডেবিয়ান লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম মুক্তি পেয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা কেন্দ্র বা ডিআরডিও গত বছরই জানিয়েছে, তারাও পুরোপুরি ভারতীয় অপারেটিং সিস্টেম বানানোর চেষ্টায় আছে। ভারতের বাছাই করা ৫০ জন আইটি বিশেষজ্ঞ, এ নিয়ে বেঙ্গালুরুতে কাজ চালাচ্ছেন। এরও আগে, ২০০৮ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে 'ই-স্বেচা' অপারেটিং সিস্টেম বানিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্ররা। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের জন্য প্রয়োজনীয় সবব্যাপার ছিল সেখানে। বস ছাড়াও উবুন্টু, ফেডোরা, রেডহ্যাটের মতো জনপ্রিয় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বাজারে রয়েছে। চারটি ভার্সানের বস এখনও বাজার ধরতে পারেনি। তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যাও হাতে গোনা। এই অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, বাণিজ্যিকভাবে কতটা সফল হবে অসমের চার তরুণের উদ্যোগ? প্রাঞ্জল বরুয়া এ দিন জোর গলায় বলেন, "আমরা অসম্পূর্ণ অবস্থায় কোনও কিছু ঘোষণা করতে চাইনি। এ বার আমরা 'সুপার এক্স' নিয়ে পুরোপুরি তৈরি। পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছি। কথা চলছে বড় সংস্থাগুলির সঙ্গে। আশা করি ভারতীয় অপারেটিং সিস্টেমটি, ম্যাক, উইনডোজের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিতে পারবে।" কমিশনের কাছে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে নালিশ জানাল বিজেপি | নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি | পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে রাজ্য প্রশাসন অসহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ তুলল বিজেপি। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি অভিযোগ করেছেন, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়ার মতো কিছু জেলায় প্রশাসনের কর্তারা সিপিএম বা কংগ্রেসের নেতাদের মতো আচরণ করছেন। বিজেপির শীর্ষ নেতারা সভা করতে গেলে হয় তার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, না হলে একেবারে শেষ মুহূর্তে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি-নেতাদের হেলিকপ্টার ওঠানামার বিষয়েও অসহযোগিতা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহারের অভিযোগও তুলেছে বিজেপি। নকভি বলেন, কংগ্রেস, তৃণমূল, বামদল— সকলেই জলের মতো কালো টাকা ছড়াচ্ছে। নির্বাচন কমিশন কিছু কালো টাকা উদ্ধার করলেও, সার্বিক হিসেবে তা খুবই সামান্য। পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি, নিতিন গডকড়ীর মতো বিজেপি-নেতারা প্রচারে গিয়েছেন। বিজেপি-র অভিযোগ, উলুবেড়িয়ায় গডকড়ীর সভা ও উত্তর ২৪ পরগনায় জেটলির সভার জন্য একেবারে শেষ মুহূর্তে অনুমতি দেওয়া হয়। স্মৃতি ইরানী, জেটলি, গডকড়ীর হেলিকপ্টার কোথায় নামবে, তার অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ ভুল দেওয়া হয়েছিল। ফলে নির্দিষ্ট জায়গায় নামতে না পেরে কপ্টারকে আকাশে অনেক ক্ষণ চক্কর কাটতে হয়। আজ এই সব অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুতসির সঙ্গে দেখা করেন নকভি। তাঁর বক্তব্য, নেতাদের হেনস্থার বিষয়ই শুধু নয়, তাঁদের নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িত। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়ও এ বিষয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখেছেন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিককে বিজেপির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। টুকরো খবর | | গুলির লড়াইয়ে হত মাওবাদী নিজস্ব সংবাদদাতা • ভুবনেশ্বর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মারা গেল এক মাওবাদী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপন সূত্রে পুলিশ চিত্রকোণ্ডার তেঁতুলিপাদারের ঘন জঙ্গলে মাওবাদী উপস্থিতির খবর পেয়েছিল। আজ স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) জওয়ান ও পুলিশের একটি যৌথ বাহিনী সেখানে তল্লাশি চালায়। সেই সময় জঙ্গলের শিবিরে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা যৌথ বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। এর জবাবে জওয়ানরা পাল্টা গুলি চালালে গুলির লড়াই বেধে যায়। এক জন মাওবাদী গুলিতে মারা গিয়েছে, বাকিরা ঘন জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গোলাগুলি থামলে পলাতক মাওবাদীদের খোঁজে সেনা বাহিনী সেখানে তল্লাশি চালায়। তারা কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করেছে। আরও অনেক সেনা ও পুলিশকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করায় খুন গ্রামরক্ষী নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি
দুষ্কৃতী হামলায় মারা গেলেন গ্রামরক্ষী বাহিনীর সম্পাদক। ঘটনাটি ঘটেছে অসমে নগাঁও জেলার হোজাইয়ে। পুলিশ জানায়, ঢলপুখুরি থানার অন্তর্গত দর্জিসিট গ্রামের গ্রামরক্ষী বাহিনীর সম্পাদক ছিলেন মহিবুর রহমান। কাল রাতে তাঁর ঘরের দরজা ভেঙে ঢোকে সাত-আটজন দুষ্কৃতী। মহিবুরবাবুর স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে মারধর করার পরে দায়ের কোপে হত্যা করা হয় মহিবুরবাবুকে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মহিবুরবাবু সম্প্রতি আনোয়ার আলি নামে এক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেই ক্ষোভেই অন্য অনুপ্রবেশকারীরা তাঁকে শাসাচ্ছিল। এ নিয়ে পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়। আনোয়ার আলি এখন গোয়ালপাড়া শিবিরে থাকলেও তার পরিবার পালিয়ে আসে। গত রাতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিরাই মহিবুরবাবুকে হত্যা করে বলে দাবি করছেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৩ জনের নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি
পথ দুর্ঘটনায় এক শিশু-সহ তিনজনের মৃত্যু হল। ঘটনাটি ঘটেছে নগাঁওয়ে। পুলিশ জানায়, বমরাগুড়ি এলাকার বরদোয়ায় টেম্পো করে যাচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। উল্টোদিক থেকে আসা একটি টাটা মোবাইল টেম্পোটিকে ধাক্কা দিয়ে পালায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় রাহুল আলম নামে ৩ বছর বয়সী একটি শিশু ও আখতারা বেগম (৩৫)। হাসপাতালে মারা যান আমেদা খাতুন। আরও দুই ব্যক্তি জখম অবস্থায় হাসপাতালে। ৩ মে গুয়াহাটি সফরে আন্না নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি
এ বার অসমের দুর্নীতি নিয়ে সত্যাগ্রহে নামতে চলেছেন আন্না হাজারে। তথ্য অধিকার কর্মী তথা কৃষক নেতা অখিল গগৈয়ের আমন্ত্রণে আগামী ৩ মে গুয়াহাটি আসছেন গাঁধীবাদী এই নেতা। সেই সঙ্গে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, স্বামী অগ্নিবেশ, কিরণ বেদীরাও গুয়াহাটি আসবেন। এক সাংবাদিক সম্মেলনে অখিল এই কথা জানান। |
|
|
|
|
|
|
|
|
No comments:
Post a Comment