Wednesday, November 12, 2014

Taslima Nasrin:মেয়েদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত কালো পর্দায় ঢেকেও শান্তি হচ্ছে না সৌদি আরবের।


মেয়েদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত কালো পর্দায় ঢেকেও শান্তি হচ্ছে না সৌদি আরবের। এখন থেকে মেয়েদের চোখও, বিশেষ করে যে চোখগুলো সুন্দর, ঢেকে রাখতে হবে। চোখ ঢাকলে মেয়েরা দেখবে কী করে! তাদের দেখার দরকার নেই। মেয়েদের দেখাটা জরুরি নয়। তারা অন্ধ হয়ে যাক। তারা খানা খন্দে পড়ুক, মরুক। অনাত্মীয় পুরুষেরা যেন মেয়েদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ না দেখে। মেয়েরা কোনও না কোনও পুরুষের সম্পত্তি। অন্যের সম্পত্তির দিকে তাকানোটা আর যেখানেই চলুক, সৌদি আরবে চলবে না।

মেয়েদের আকর্ষণীয় চোখের দিকে যদি চোখ পড়ে বাইরের পুরুষের, তবে কে হলফ করে বলতে পারে, সেই পুরুষ কামোত্তেজনায় কাতরাবে না, ধর্ষণের চেষ্টা করবে না! পুরুষেরা ধর্ষণের চেষ্টা করবে ধরে নিয়েই মেয়েদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে মেয়েদের। এরকম মনে করার কিন্তু কোনও কারণ নেই যে মেয়েদের স্বার্থে মেয়েদের ধর্ষণ থেকে বাঁচানো হচ্ছে। মেয়েরা যেহেতু কোনও না কোনও পুরুষের সম্পত্তি, অথবা হবু সম্পত্তি, তাই পুরুষের স্বার্থেই পুরুষের সম্পত্তিকে ধর্ষণ থেকে বাঁচানো হচ্ছে। পুরুষেরা চায় না তাদের সম্পত্তির গায়ে কোনও দাগ লাগুক। এ কারণে শরীর তো বটেই, মেয়েদের চোখও ঢেকে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। তাদের কোনও কিছু দেখার অধিকার আর নেই। চোখ থাকতেও অন্ধত্বকে বরণ করে নিতে তারা বাধ্য হচ্ছে।

অথচ, অবাক কাণ্ড, ধর্ষণের চেষ্টা যারা করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে, তাদের দমনের, তাদের শোধরানোর, তাদের পরামর্শ দেওয়ার কিন্তু কোনও ব্যবস্থা সৌদি আরবে নেই।

আমার প্রশ্ন, পুরুষেরা কামোত্তেজনায় কাতরালেই বা অসুবিধে কী! উত্তেজনা সামলানোর ক্ষমতা কি সৌদি পুরুষের নেই? যদি না থাকে, তবে ওদের শেখানো হোক কী করে তা সামলাতে হয়। শিখলে মেয়েরা অন্তত চোখ খুলে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারবে। খানা খন্দে পড়তে হবে না, মরতে হবে না। নীতিপুলিশের জ্বালায় মেয়েরা বাধ্য হচ্ছে আস্ত এক একটা কালো কফিনের মধ্যে ঢুকে যেতে। চোখগুলোকেও এখন থেকে বোরখা পরাতে হবে নয়তো জেল খাটতে হবে। নীতিপুলিশকে পুষছে কিন্তু সৌদির রাজ পরিবার। এই ক'মাস আগেই নাকি নীতিপুলিশদের সংস্থা রাজপরিবার থেকে তিপ্পান্ন মিলিয়ন ডলার উপহার পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র কি কখনও সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেছে? কেউ শুনিনি। সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্র এখন অস্ত্র বিক্রি করছে। ষাট বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র। ছোটখাটো কোনও অংক নয় কিন্তু। তো এই সময় যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে কি পারতো না বলতে যে তোমরা মেয়েদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করো, তারপর অস্ত্রের বেচা কেনা হবে? সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মুখ খোলে না, কিন্তু নানা দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ভীষণই উদ্বিগ্ন, চেঁচিয়ে সর্বনাশ করছে, সাবধান করে দিচ্ছে পৃথিবীর অনেক দেশকেই। শুধু সেই দেশটিকেই সাবধান করছে না, যে দেশটি মেয়েদের মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি লংঘন করছে। এর একটিই হয়তো কারণ, এমন বিলিয়ন ডলারের খদ্দেরকে যুক্তরাষ্ট্র অখুশি করতে চায় না। দিনের শেষে টাকার হিসেবটাই দেখছি আসল হিসেব।

সৌদি আরব মেয়েদের মানুষ বলে মনে করে না। ধর্ষিতা হওয়ার শাস্তি ধর্ষিতাকেই দেয়। আত্মীয়-পুরুষ ছাড়া অন্য কোনও পুরুষের সঙ্গে কোনও মেয়ের কথা বলা, চলা ফেরা বারণ। স্বামীর অনুমতি ছাড়া মেয়েদের ঘরের চৌকাঠ পেরোনোও নিষেধ। বৈষম্যের সহস্র শৃংখলে বন্দি নারী। নারী হয়ে জন্ম নিয়েছে বলেই ভুগতে হচ্ছে বর্বর পুরুষের এই পৃথিবীতে। ধর্ম আর পুরুষতন্ত্রের শাসন সৌদি আরবে। পুরুষেরই দাপট সে দেশে। সুতরাং যদি আদৌ কারোর ক্ষমতা থাকে সৌদি মেয়েদের দুর্দশা দূর করার, পরাধীনতার গহ্বর থেকে তাদের উদ্ধার করার, সে নিঃসন্দেহে সৌদি পুরুষের। মেয়েদের বিরুদ্ধে সৌদি আইনের প্রতিবাদ করতে এ পর্যন্ত খুব বেশি সৌদি পুরুষকে অবশ্য দেখা যায়নি।

মন্দ কাজ বন্ধ করার একটা কমিটি আছে সৌদি আরবে, সেই কমিটির লোকেরাই বলেছে তারা মেয়েদের হাতছানি দেওয়া চোখ নিষিদ্ধ করেছে। কোন চোখ হাতছানি দেয়, কী করে বুঝবো! যে চোখে কাজল, সেই চোখ তো বটেই, তার ওপর চোখের আকার আকৃতি ভালো, এমন চোখও পাপের চোখ, হাতছানির চোখ। চোখ সুন্দর হলেও কোনও ক্ষমা নেই, সে চোখ নিষিদ্ধ। আর যে চোখে কাজল নেই! কাজল না থাকলেও সে চোখ নিষিদ্ধ হতে পারে, শুধু দেখতে ভালো হওয়ার অপরাধে।

মেয়েদের বিরুদ্ধে এই আইনটিকে ইতিমধ্যে একশ ভাগ সমর্থন করেছেন সৌদি রাজপুত্র নাইফ। এই আইনটি এমনই এক বর্বর নারীবিরোধী আইন, এই আইনে যে-কোনও মেয়েকে যখন তখন দোষী সাব্যস্ত করা যায়, জেলে পাঠানো যায়, চাবুক মারা যায়। যেন এ মেয়েদের অপরাধ তারা মেয়ে। যেন এ মেয়েদের অপরাধ তাদের চুল চোখ মুখ আছে, যেন এ তাদের অপরাধ তাদের বুক পেট তলপেট আছে, তাদের পা আছে, পায়ের পাতা আছে। যেন মেয়েরা মানুষ নয়, মেয়েরা এক শরীর পাপ। এই পাপকে, এই লজ্জাকে ঢেকেঢুকে অপরাধীর মতো বাঁচতে হবে, যদি বাঁচতেই হয়। কমিটির লোকেরা দুনিয়ার মুসলিমদের কাছে আবেদন করেছেন, নতুন আইনটিকে সকলেই যেন সমর্থন করে, যেহেতু এই আইন ইসলামের আইন। ইসলামের প্রশ্নে দ্বিমত করে, সাধ্য কার!

'যৌন উত্তেজনা বেড়েছে তোমার, সে তোমার সমস্যা, আমার নয়। তোমার সেটি বাড়ে বলে আমার নাক চোখ মুখ সব বন্ধ করে দেবে, এ হতে পারে না। আমি তোমার ব্যক্তগত সম্পত্তি নই যে তুমি আমাকে আদেশ দেবে আমি কী পরবো, কীভাবে পরবো, কোথায় যাবো, কতদূর যাবো। তোমার সমস্যার সমাধান তুমি করো। আমাকে তার দায় নিতে হবে কেন! যৌন উত্তেজনা আমারও আছে, সে কারণে তোমার নাক চোখ মুখ ঢেকে রাখার দাবি আমি করিনি। আমার ইচ্ছে হলে আমি চোখে কাজল পরবো, কাজল কালো চোখ দেখলে যদি তোমার সমস্যা হয়, তাহলে আমারে চোখের দিকে তাকিও না। যদি তারপরও চোখ চলে যায় মেয়েদের চোখের দিকে, আর তোমার ঈমানদণ্ড নিয়ে তুমি বিষম মুশকিলে পরো, তাহলে শক্ত করে নিজের চোখদুটো বেঁধে রাখো কালো কাপড় দিয়ে। এর চেয়ে ভালো সমাধান আর হয় না। তোমাকে উত্তেজিত করে এমন জিনিস তোমাকে দেখতে হবেনা। তুমিও বাঁচবে, আমিও বাঁচবো।' --- জানিনা সৌদি মেয়েরা কবে বলবে এমন কথা।

আজ সারা বিশ্ব হাসছে সৌদি আরবের কাণ্ড দেখে। নামতে নামতে তারা কত নিচে নেমেছে! মেয়েদের সর্বাঙ্গ নিষিদ্ধ করেছে, এমনকী চোখও। এত ঘৃণা করে ওরা মেয়েদের! বুঝিনা সব মেয়েকে কেন আজও তারা মেরে ফেলছে না! কেন জ্যান্ত কবর দিচ্ছে না, কেন দূর করে দিচ্ছে না দেশ থেকে! কেন এত ঘৃণার পরও মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখছে। সম্ভবত বাঁচিয়ে রাখছে একটিই কারণে, পুরুষেরা যেন ওদের ভোগ করতে পারে, সম্পত্তির ওপর অধিকার আছে তো মালিকের।

  • 670 people like this.
  • Shuvadip Datta অনেক টা মনে হয় কোনও পৌরাণিক কাহিনী গল্প কথা শুনছি ... এখনও এমন হতে পারে , তা শুধু সৌদি নয় বিশ্ব তে অনেক যায়গায়ই আছে , কোথাও আইন করে , আর কোথাও সমাজের শাসনের পরে ্‌্‌্‌ দুঃখ জনক আর লজ্জ্যা তো বটেই
    3 hrs · Like · 16
  • Shambhunath Paul বিকৃত পাগল গুলো এটা খুব ভালই জানে কাম উঠলে মেয়েরাই সহজ সমাধান আর ধর্মের যতই বিধান দেখাক নতুন শিশুকে পৃথিবীতে আনার যে অন্য কোন বিকল্প নেই না হলে আরব মহিলা শূণ্য করে দিত..................
    3 hrs · Like · 3
  • Jayoti Das Grina tina noy,e holo khyomotar ashfalon...saudi arob er teler gumor...sara prithibi tader kache tel kinte jabe..duniyar ki dorkar poreche osob manobadhikar niye,tao abar meyeder kosto niye protibad janiye saudi arob er birag vajon howar??!! Tibet e China deerghodin dhore manobadhikar longhon kore ashche...keu kichu korche/bolche ki??..e duniya shartho chara ek paa o cholena...etai er theke bojha jay.
    3 hrs · Like · 2
  • Sabuj Roy আরবে কন্যা সন্তান জন্মানো ব্যান করে দেওয়া সব থেকে ভাল আইডিয়া,
    আইন করতে হবে গর্ভাবস্থায় ভ্রুনের লিংগ নির্ধারন করে কন্যা ভ্রুন হত্যা করতে হবে।।
    হয়ত আমাদের কাছে এটা অমানবিক, কিন্তু ৩০ বছর পর আর আরবের মুমিন দের মেয়েদের নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে না, কারন তখন আরবে মেয়ে থাকবে না, মুমিনদের ইমান ঠিক থাকবে।।
    ...See More
    3 hrs · Like · 12
  • Arindam Munshi Ashadharon Pratibedan. Hats Off
    2 hrs · Like · 2
  • Shumon Ahmed এত ঘৃণা করে ওরা মেয়েদের! বুঝিনা সব মেয়েকে কেন আজও তারা মেরে ফেলছে না! কেন জ্যান্ত কবর দিচ্ছে না, কেন দূর করে দিচ্ছে না দেশ থেকে! কেন এত ঘৃণার পরও মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখছে। সম্ভবত বাঁচিয়ে রাখছে একটিই কারণে, পুরুষেরা যেন ওদের ভোগ করতে পারে, সম্পত্তির ওপর অধিকার আছে তো মালিকের।
    2 hrs · Like · 9
  • Uttam Kumar Deb পৃথিবীর এই একটামাত্র দেশ,যেই দেশটা নিউক বোমা মেরে ভ্যানিিশ করে দিলেও সভ্যতার কোনও ক্ষতি নেই। কাজটি করার আগে শুধু নারী,শিশু আর ভালো পুরুষদের (যদি থেকে থাকে ) সেখান থেকে উদ্ধার করে আনতে হবে। আমি শুনেছি ইউ এ ই,ওমান,কাতার সহ আরবের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিও এতটা নচ্ছার নয়।
    2 hrs · Like · 7
  • Dipok Dey This is the time for Muslim to change their religion
    2 hrs · Like · 3
  • Arindam Munshi This is not a time to change religion Sir, this is a time to strike all the religions and become free from all Religions
    2 hrs · Like · 9
  • Ujjal Nil V soon they will introduce breathing mask on women. "Women sharing same air to breath and live in will make the Saudi men horny" . The Saudi men themselves admit that they are ALL born perverts, so they cover (torture) all sources (women) from where they become perverts. They have brains are occupied around their penis, simple.
    2 hrs · Like · 2
  • নাঈমূল ইসলাম সজীব মোহাম্মদের সেই কথিত, কাল্পনিক " আইয়ামে জাহেলিয়াত " ১৪০০ বছর আগে ছিল না, ১৪০০ বছর পরে তইরি হচ্ছে।
    কিছুদিন পর হয়ত মেয়েদের জ্যান্ত পুতে মারা শুরু করবে।
    ( নবী পত্নি খাদিজার সম্পত্তি ও নবীর বিয়েই প্রমান করে, তদকালীন আইয়ামে জাহেলিয়াত মিথ্যা)
    1 hr · Edited · Like · 3
  • Soyeb Hasan এইসব বর্বর আইন তৈরি করার পরও কোন সৌদি নারী জোড়ালা প্রতিবাদ করলনা।কি অদ্ভূত সমাজ এদের,মেয়েদের জড়বস্তুর মত যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করছে।ধিক ধিক ধিক সৌদির এই নিকৃষ্ট আইনকে। Nasreen Taslima
    1 hr · Like · 2
  • Soyeb Hasan অসাধারন লেখা মেম।অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটা বর্বর আইনকে ধিক্কার দিয়ে জোড়ালা প্রতিবাদ করবার জন্য। Nasreen Taslima
  • Shamsul Huq Rasel http://www.bd-pratidin.com/editorial/2014/11/13/43146
    মেয়েদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত কালো পর্দায় ঢেকেও শান্তি...
    BD-PRATIDIN.COM|BY BANGLADESH PRATIDIN
  • Mong Pru সৌদিরা কোন কালেই সভ্য ছিল না। মেয়েদের প্রচণ্ড আক্রোশের মাধ্যমে নির্জাতিত, নিপীড়িত করতের পারাটাই তাদের ধর্ম, ত এরা ধর্মেরই বা কি বুঝবে? অসভ্য বর্বর এই জাতিটাই এমন একটি ধর্মের পয়দা করেছে যার প্রতি লাইনে মানুষকে অমানুষের মত আচরণ করতে উপদেশ দেয়, যা শয়তানকে ও হার মানায়।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcom

Website counter

Census 2010

Followers

Blog Archive

Contributors