'সংযত থাকুন'— স্পষ্ট নির্দেশ দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু সেই বার্তা যে দলের নিচুতলায় পৌঁছচ্ছে না, এ বার তার সাক্ষী রইল বাঁকুড়ার জয়পুর থানার কারকবেড়িয়া ও আরামবাগের গৌরহাটি গ্রাম।
কারকবেড়িয়ায় সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য, এক অশীতিপর বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পেটানো হল বুধবার রাতে। গৌরহাটির উত্তরপাড়ায় মারধর করে কানও ধরানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। দু'টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তৃণমূল। গত ১৯ মে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে সিপিএমের রাজ্য কমিটির প্রবীণ সদস্য, ক্যানসার আক্রান্ত শেখ ইসরায়েলকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। তার দু'দিন আগেই শান্তি বৈঠক সেরে ফেরার পথে তৃণমূলের লোকজনের হাতে মার খেয়েছিলেন হুগলির ধনেখালির জোনাল সম্পাদক দিলীপ মুখোপাধ্যায়।
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=27puru1.htm
অভিযুক্ত তৃণমূল
বৃদ্ধকে মারধর, কান ধরানো হল সিপিএম নেতাকে
নিজস্ব সংবাদদাতা • জয়পুর ও বাঁকুড়া
'সংযত থাকুন'— স্পষ্ট নির্দেশ দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু সেই বার্তা যে দলের নিচুতলায় পৌঁছচ্ছে না, এ বার তার সাক্ষী রইল বাঁকুড়ার জয়পুর থানার কারকবেড়িয়া ও আরামবাগের গৌরহাটি গ্রাম।
কারকবেড়িয়ায় সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য, এক অশীতিপর বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পেটানো হল বুধবার রাতে। গৌরহাটির উত্তরপাড়ায় মারধর করে কানও ধরানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। দু'টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তৃণমূল। গত ১৯ মে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে সিপিএমের রাজ্য কমিটির প্রবীণ সদস্য, ক্যানসার আক্রান্ত শেখ ইসরায়েলকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। তার দু'দিন আগেই শান্তি বৈঠক সেরে ফেরার পথে তৃণমূলের লোকজনের হাতে মার খেয়েছিলেন হুগলির ধনেখালির জোনাল সম্পাদক দিলীপ মুখোপাধ্যায়।
অন্য দিকে, তৃণমূলের 'ভয়ে' বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় 'ঘরছাড়া' সিপিএম বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্রকে 'উপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়া'র আর্জি জানিয়ে জেলাশাসকের কাছে বৃহস্পতিবার দরবার করলেন বাঁকুড়ার বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্র। বিধানসভায় শপথ নিতে গিয়ে কাশীবাবুকে 'নিরাপত্তাহীনতার' কথা জানিয়েছিলেন মনোরঞ্জনবাবু।
সিপিএম নেতাদের 'শাস্তি'। আরামবাগের গৌরহাটিতে।— মোহন দাস
বাঁকুড়ার জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। কাশীবাবুর কথায়, "দলনেত্রী আমাদের সংযত থাকতে বলেছেন। যারাই গণ্ডগোল করুক, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর হতে হবে। মনোরঞ্জনবাবু যাতে নিশ্চিন্তে বাড়িতে ফিরতে পারেন, তা দেখতে জেলাশাসককে অনুরোধ করেছি।"
কিন্তু শীর্ষ নেতারা যা উপলব্ধি করছেন, তা কি দলের নিচুতলায় আদৌ পৌছচ্ছে?
বোধহয় না। বস্তুত, 'অস্ত্রাগার' হদিস অভিযানের নামে সিপিএম নেতা-কর্মীদের 'সবক' শেখানো অব্যাহত। স্থানীয় সূত্রের খবর, সিপিএমের কারকবেড়িয়া পার্টি অফিসে বেআইনি অস্ত্র রয়েছে, এই অভিযোগে জনা ত্রিশেক তৃণমূল কর্মী বুধবার রাত প্রায় ৮টা নাগাদ সিপিএমের গেলিয়া লোকাল কমিটির সদস্য, ৮০ বছরের শশধর দে-র বাড়ি ঘেরাও করেন। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শশধরবাবুর অভিযোগ, "ওরা বারবার বলছিল, কারকবেড়িয়ার পার্টি অফিসে অস্ত্র রয়েছে। অফিসের চাবি চাইছিল। কিন্তু চাবি আমার কাছে ছিল না। ওরা বিশ্বাস করেনি। উল্টে আমাকে মারতে মারতে ঘর থেকে বের করে টেনেহিঁচড়ে পার্টি অফিসের কাছে নিয়ে যায়। সেখানেও পেটায়।"
শশধরবাবুর সঙ্গেই মার খান স্থানীয় দুই সিপিএম কর্মী বাসুদেব গঙ্গোপাধ্যায় ও শ্যামাপদ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে পার্টি অফিস খুলেও কোনও অস্ত্র মেলেনি। ওই তিন জনকে জখম অবস্থায় ফেলে রেখে হামলাকারীরা চলে যায়। রাতেই শশধরবাবু জয়পুর থানায় তৃণমূলের কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। দু'চোখে গভীর ক্ষত ও কোমরে আঘাত নিয়ে শশধরবাবুকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে চিকিৎসার জন্য। তাঁর পরিবার প্রচণ্ড আতঙ্কে। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, "শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ কর্মীরা তৎপর রয়েছে। কারকবেড়িয়ায় ঠিক কী হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।" ওই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। সিপিএমের জয়পুর জোনাল কমিটির সম্পাদক মদনমোহন পাত্র বলেন, "আমাদের দলের ওই বর্ষীয়ান নেতা অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা যে ভাবে তাঁকে ও আরও দু'জনকে পিটিয়েছে, তা ভাবা যায় না। হেতিয়া, গেলিয়া-সহ নানা জায়গায় আমাদের কর্মীদের তৃণমূলের লোকজন মারধর করছে। অথচ পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।" যদিও জয়পুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বপন কোলের দাবি, "দলনেত্রীর নির্দেশ মতো আমাদের কর্মীরা সংযতই রয়েছেন। যদি কিছু ঘটে থাকে, তা জনরোষ এবং সিপিএমের অর্ন্তদ্বন্দ্বের পরিণাম।"
এ দিন একই ছবি দেখা গিয়েছে গৌরহাটি গ্রামের উত্তরপাড়ায়। বাড়িতে অস্ত্র রয়েছে— এই দাবিতে গৌরহাটি-২ পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য তথা দলের লোকাল কমিটির সদস্য শীতল মিশ্র এবং গ্রাম কমিটির নেতা মলয় মালিকের বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন চড়াও হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, দুই সিপিএম নেতাকে মারধর করে কান ধরে বসিয়ে রাখা হয়। কারকবেড়িয়ার মতোই এ ক্ষেত্রেও তল্লাশি চালিয়ে সেখানে অস্ত্র মেলেনি।
No comments:
Post a Comment