Wednesday, February 20, 2013

অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্কও আশিস নন্দীর জয়পুর বিতর্কের মত জলান্জলি হয়ে গেছে বহুদিন আগেই। তিনি বাম জমানায় একরকম দরবারি অর্থনীতিবিদ ছিলেন।তাতে কিন্তু পরিবর্তন জমানায় এডজাস্ট করতে তাঁর অসুবিধা হয় নি।আশিস নন্দী হাজার হোক জাতে তেলি, নবশাঁখ। অধ্যাপক অমর্ত্যর মত সবদিক বজায় রেখে কথা বলতে পারেন না, আবার হাটে হাঁড়িও ভেঙ্গে দেন। অমর্ত্যবাবূ কিন্তু বাঙ্গালি স


 অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্কও আশিস নন্দীর জয়পুর বিতর্কের মত জলান্জলি হয়ে গেছে বহুদিন আগেই তিনি বাম জমানায় একরকম দরবারি অর্থনীতিবিদ ছিলেন।তাতে কিন্তু পরিবর্তন জমানায় এডজাস্ট করতে তাঁর অসুবিধা হয় নি।আশিস নন্দী হাজার হোক জাতে তেলি, নবশাঁখ অধ্যাপক অমর্ত্যর মত সবদিক বজায় রেখে কথা বলতে পারেন না, আবার হাটে হাঁড়িও ভেঙ্গে দেন। অমর্ত্যবাবূ কিন্তু বাঙ্গালি সুশীল সমাজের খাপে খাপ সঠিক মুখ, বেফাঁস কথা বলেন না।রাজনৈতিক ভাষা বা মন্তব্য এড়িয়ে চলেন এবং অর্থনীতির ভাষাতেই কথা বলেন। আমরা আম বাঙ্গালি যতই রাজনৈতিক প্রাণী হইনা কেন, অর্থনীতি আমাদের ধাতে নেই।এই জন্য তাঁর মতামতই আমাদের কাছে ধার্মিক ফতোয়ার মত অতি অবশ্যই শিরোধার্য।আশিস নন্দী বিতর্কের মাঝে তাই ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে তাঁর মন্তব্যে মাথা ঘামাবার লোক বহুজন সমাজের নেই বললেই চলে।সংসদের বাজেট অধিবেশনের মুখে মোক্ষম সময়েই তিনি তাঁর মিসাইল প্রক্ষেপন করেছেন, যা করপোরেট নীতি নির্ধারণে সহায়ক হয় এবং বিরোধিরা খামোশ থাকেন

পলাশ বিশ্বাস



অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ
।তিনি অর্থনীতির ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, এ নিয়ে আমাদের প্রিয় বন্ধু ডঃ সুবোধ রায় প্রশ্ন তোলায় তাঁকে বাংলা মীডিয়া পাগল বলতে ছাড়েনি।আমরা ঔ বিতর্কে যাব না।যে সাব আলটার্ন গ্রুপ বাংলা থেকে সারা দেশের বহিস্কৃত সমাজের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে সব চেয়ে বেশি মাথা ঘামায়, তার প্রতিনিধি যেমন সমাজবিজ্ঞানী ডঃ আশিস নন্দী তেমনি অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তার মুখ।যেহেতু বাংলার বহুজন সমাজের কোনো মুখ নেই। এ যাবত বাংলার সুশীল ভদ্র সমাজই বহিস্কৃতদের হয়ে কথা বলেছে, দলিত আদিবাসী ও পিছড়ে বর্গের নেতাও তাঁরা।বহিস্কৃত সমাজ মূক এবং বদির বাংলায় তার প্রমাণ প্রতিনিয়ত পাওযা খূবই সহজ।মাণ্য গণ্যিদের কথা শিরোধার্য করে উন্নয়ন বা ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলার ক্ষমতা, সুযোগ বহিস্কৃতদের নেই।থাকলেো হয়ত ধাতে সইবে না। অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্কও আশিস নন্দীর জয়পুর বিতর্কের মত জলান্জলি হয়ে গেছে বহুদিন আগেই তিনি বাম জমানায় একরকম দরবারি অর্থনীতিবিদ ছিলেন।তাতে কিন্তু পরিবর্তন জমানায় এডজাস্ট করতে তাঁর অসুবিধা হয় নি।ন্নদী হাজার হোক জাতে তেলি, নবশাঁখ অধ্যাপক অমর্ত্যর মত সবদিক বজায় রেখে কথা বলতে পারেন না, আবার হাটে হাঁড়িও ভেঙ্গে দেন। অমর্ত্যবাবূ কিন্তু বাঙ্গালি সুশীল সমাজের খাপে খাপ সঠিক মুখ, বেফাঁস কথা বলেন না।রাজনৈতিক ভাষা বা মন্তব্য এড়িয়ে চলেন এবং অর্থনীতির ভাষাতেই কথা বলেন। আমরা আম বাঙ্গালি যতই রাজনৈতিক প্রাণী হইনা কেন, অর্থনীতি আমাদের ধাতে নেই।এি জন্য তাঁর মতামতই আমাদের কাছে ধার্মিক ফতোয়ার মত অতি অবশ্যই শিরোধার্য।আশিস নন্দী বিতর্কের মাঝে তাই ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে তাং মন্তব্যে মাথা ঘামাবার লোক বহুজন সমাজের নেই বললেই চলে

সংসদের বাজেট অধিবেশনের মুখে মোক্ষম সময়েই তিনি তাঁর মিসাইল প্রক্ষেপন করেছেন, যা করপোরেট নীতি নির্ধারণে সহায়ক হয় এবং বিরোধিরা খামোশ থাকেন

'Amartya Sen not a Nobel laureate'

Press Trust of India

Posted: Nov 24, 2004 at 1557 hrs IST



A city court on Wednesday took up a petition challenging the description of professor Amartya Sen as a Nobel laureate in a translated work of the economist and directed the respondents to appear before it on January 20 next year.

Contending that Prof Sen had not been awarded the Nobel Prize, the petitioner has filed a case of cheating and conspiracy under relevant sections of IPC against the publishing company, publisher, translator and cover designer of the translated book "Unnayan O Swakhamata" (Development As Freedom).

Prof Sen's name, however, did not figure among the respondents.

Petitioner Dr Subodh Chandra Roy, stated to be a doctorate in nuclear physics, challenged the description "arthanititey nobel puroshkar prapto" (Nobel laureate in economics) on the cover of the book before Sen's name, claiming that the description was false.

Roy claimed that there are only five Nobel Prizes -- Physics, Chemistry, Physiology or Medicine, Literature and Peace.

He stated that the Bank of Sweden had instituted a Prize in economic sciences in 1968, during the Bank's tercentenary celebrations, in memory of Alfred Nobel and this was awarded to Sen in 1998.





বামপন্থীদের ধর্মঘটে মোটেও সায় নেই নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন।শ্রমিক ধর্মঘট উদ্দেশ্যচ্যুত হচ্ছে বলেই মনে করেন তিনি।
 
তার মতে সব দাবি সঠিক এবং যৌক্তিক এই মনোভাব রাখছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব। অন্যটি হচ্ছে, শ্রমিক সংগঠর মানেই হচ্ছে ধর্মঘট করা, লক-আউটে যাওয়া এবং শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার ক্ষতি করা।
 
কলকাতায় সিপিএম সমর্থিত ভারতীয় রিজার্ভ-ব্যাংকের শ্রমিক সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে এসে ভারত জুড়ে সিপিএমের ডাকা ২০ এবং ২১ ফেব্র"য়ারির শ্রমিক ও শিল্প ধমর্ঘট প্রসঙ্গে এভাবে সমালোচনা করেন অধ্যাপক সেন।
 
অমর্ত্য সেন বলেন, "শ্রমিক সংগঠন কোনো ভুল করতে পারে না এই ধরনের চিরাচরিত ধারনা এবার ত্যাগ করার সময় এসেছে।"
 
তিনি বলেন, "শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদেরই আগে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া উচিৎ। কোন ইস্যুতে তারা ধর্মঘটের পথে হাঁটবেন সেটি স্পষ্ট জেনে ওই আন্দোলনে নামা প্রয়োজন। আর আমি মনে করি, উপয্ক্তু দাবি না হলে ধর্মঘটে যাওয়া ঠিক নয়। শুধু উত্তেজনা ছাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ধর্মঘটের মতো শক্তিশালী প্রতিবাদ মাধ্যম ব্যবহার করা উচিৎ নয়।"
 
শুধু তাই নয়, সিপিএমের ধর্মঘটে তিনি যে তীব্র বিরোধী সে কথাও এদিন অমর্ত্য সেনের কথায় স্পষ্ট হয়ে যায়।
 
তিনি বলেন, "প্রাইমারি স্কুলের কতিপয় শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ধর্মঘট করেন। নিজেদের পাওয়ার দাবিতে। কিন্তু তারা ভুলে যান, যেসব কঁচিকাচা শিশুদের লেখাপড়া বন্ধ করে তারা ধর্মঘট শুরু করলেন, এতে কিন্তু ওই সব শিশুরাও তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো। আর এসব ধর্মঘটিরা অধিকাশ বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএর বলেও মন্তব্য করেন ড. অমর্ত্য সেন।
অমর্ত্য সেনের এই মন্তব্যে বেশ অস্বস্তিতে পড়েন ওই অনুষ্ঠানের উপস্থিত শীর্ষ বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের নেতারা। যদিও তাদের মধ্যে মহম্মদ সেলিম অমর্ত্য সেনের পরবর্তী বক্তা হিসাবে বলেন, "আগামী ২০ এবং ২১ তারিখে দেশের ১১টি বাম সংগঠন এবং তৃণমূল ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের ডাকা শিল্প ধমর্ঘটের কর্মসূচির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন মনে করেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণের ফলে এখানে নারীশিার হার বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, ভারতের এখন উচিত প্রতিবেশী বাংলাদেশের কাছ থেকে এ বিষয়ে শিা নেয়া। নতুন বার্তা

স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বেসরকারিকরণ দেশের এক বড় অংশের মানুষকে সুলভে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবার সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে৷ রবিবার ফের এ ব্যাপারে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনায় সরব হলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন৷ এই প্রসঙ্গে তিনি দেশের বাম দলগুলির ভূমিকারও সমালোচনা করেন৷ 

তাঁর প্রশ্ন, দেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যখন রান্নার গ্যাস ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিই নেই, তখন রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ার প্রতিবাদে বামেদের আন্দোলনের সামগ্রিক গ্রহণযোগ্যতা কোথায়? 

এ দিন কলকাতা বইমেলায় আয়োজিত সাহিত্য সভায় অমর্ত্যবাবু বলেন, 'আমি কখনও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলাম না৷ তবে ছাত্রাবস্থায় প্রেসিডেন্সি কলেজে তাদের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম৷ পরমাণু চুক্তির বিষয়ে সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা অবশ্যই বামেদের রণকৌশলগত ভুল ছিল৷ তবে বর্তমানে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধি সহ অনেক ক্ষেত্রেই বাম আন্দোলনের কোনও যৌক্তিকতা আমি খুঁজে পাই না৷ বরং আমি ব্যথিত হই৷ দেশের মূল সমস্যাগুলির ব্যাপারে বাম নেতৃত্বকে নজর দিতে হবে৷' 

এই মূল সমস্যাগুলি কী সে ব্যাপারে অমর্ত্যবাবু স্পষ্ট করে না বললেও, যেভাবে তিনি স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তা থেকে বলাই যায় এই দুই ক্ষেত্রে বামেদের ভূমিকায় তিনি সন্তুষ্ট নন৷ তাঁর কথায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, চিন, জাপান, তাইওয়ানের মতো দেশেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মূলত সরকার পরিচালিত৷ 'চিন যেখানে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উত্‍পাদনের ২.৭ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য খরচ করে, সেখানে আমরা মাত্র ১.২ শতাংশ করি৷ জামশেদজি টাটা বলেছিলেন, সকলের অবৈতনিক শিক্ষা এবং নিখরচায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া উচিত৷ অথচ আমাদের দেশে এখন স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার জন্য এক বড় অংশের মানুষকে অনেক বেশি দাম দিয়ে বেসরকারি ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করতে হয়৷ ভারতই পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসাবে পুরোপুরি বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকে ঝুঁকেছে৷ এটা খুবই বিপজ্জনক৷' একই ভাবে তিনি শিক্ষায় বেসরকারিকরণ নিয়েও দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনা করেন৷ 

অমর্ত্যবাবুর মতে, নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব রয়েছে৷ নৈতিকতা এবং যৌক্তিকতা রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত থাকা উচিত বলে তিনি মনে করেন৷ ভাষাগত এবং বর্ণগত বৈচিত্রের জন্যই অধিকাংশ ভারতবাসীর মানসিকতার ব্যাপারেও রাজনীতিবিদরা ওয়াকিবহাল নন৷ 

দুর্নীতিকে যেভাবে দেশবাসী মেনে নিয়েছে, তাও ভারতের ভবিষ্যতের পক্ষে অশনিসঙ্কেত বলে মনে করেন অমর্ত্যবাবু৷ তবে যুব সমাজ এই সমস্যাগুলি থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারে বলে আশাবাদী এই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ৷ তিনি বলেন, 'দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে যেভাবে যুব সমাজ আন্দোলনে নেমেছে, তাকে আমি স্বাগত জানাই৷ দেশের হাল ধরতে তাদের আরও বেশি অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে৷ ভারতে আর্থিক বিকাশ অব্যাহত৷ অনেকেই যাঁরা এ দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাঁরা আবার ফিরে আসছেন৷ ফলে আমি যথেষ্ট আশাবাদী৷' 

সলমন রুশদি প্রসঙ্গে অমর্ত্য: 'বহু মানুষের প্রচুর অসুবিধা রয়েছে৷ অভিযোগ করার মতো তাদের অনেক কারণ রয়েছে৷ মুসলিমদেরও অনেক অসুবিধা রয়েছে৷ আমি মনে করি, মুসলিম গোষ্ঠীগুলি যখন তাদের এই বিষয়গুলির কথা বলছে, তখন তাদের এই সত্যিকারের সমস্যাগুলির থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে এই সব ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে৷ আমাদের উচিত মুসলিমদের জ্বলন্ত সমস্যাগুলির সমাধানের বিষয়ে যত্নবান হওয়া৷ তবে মানুষের মতপ্রকাশের অধিকারের ব্যাপারে আমি কখনওই চিনের সঙ্গে ভারতকে একাসনে বসাতে রাজি নই৷ ভারতীয় নাগরিকদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত৷ চিনের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন৷ এ ব্যাপারে ভারত অবশ্যই চিনের তুলনায় ভাল৷ তবে আমি মনে করি এই তুলনামূলক ভালই যথেষ্ট নয়৷'


গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের শিাব্যবস্থা নিয়ে দু'দিনের এক পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমনই মন্তব্য করেন অমর্ত্য সেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গীতাঞ্জলি সেমিনার কে এই বৈঠকের আয়োজন করে প্রতীচী ট্রাস্ট।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সেন বলেন, শুধু চীন, কোরিয়া বা জাপান নয়, নারীশিায় ভারতের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে নারীশিা এগিয়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে উল্লেখ করে অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সর্বস্তরে নারী নেতৃত্ব রয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে নারীদের সংখ্যা প্রচুর বলে তিনি উল্লেখ করেন। অধ্যাপক সেন বলেন, 'বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যেও নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ আমাদের নজর এড়ায়নি। এ থেকে ভারতের অনেক কিছুই শেখার আছে।'

বৈঠকে অমর্ত্য সেন পশ্চিমবঙ্গের নারীশিার বর্তমান ব্যবস্থারও সমালোচনা করেন।


সোমবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৩

মানবজমিন ডেস্ক: লিঙ্গ সমতার দিক দিয়ে ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। সামাজিক সব সূচকে এগিয়ে গেছে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ- এমন মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. অমর্ত্য সেন। শনিবার তিনি ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি বোম্বে (আইআইটি-বি)তে 'ইন্ডিয়া: এ ডিফেন্স এন্ড এ ক্রিটিক' শীর্ষক জি. এল মেহতা মেমোরিয়াল লেকচারে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনা থেকে একটি ভাল বিষয় বেরিয়ে এসেছে। তাহলো এ ইস্যুতে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। অনেকে বলে থাকেন গ্রামে নয়, শুধু শহরগুলোতেই ধর্ষণ ঘটনা ঘটে- আমি তাদের বলতে চাই ভারতের গ্রামগুলোতে অহরহ আমাদের দলিত শ্রেণীর নারীরা ধর্ষিত হচ্ছেন। এ বিষয়টিতে তারা সচেতনই নন। তিনি এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতার বিষয়টিকে তিনি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। তিনি ইঙ্গিত করেন, প্রতিবেশী দেশ (বাংলাদেশ) সামাজিক সব সূচকে ভারতকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক নারী স্বাস্থ্যকর্মী ও স্কুল শিক্ষিকা আছেন। তারা বাংলাদেশকে মানব উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে ভারতের চেয়ে উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছেন। ভারতে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নারীদের বড় ভূমিকার সমর্থন করে তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য এই স্বাস্থ্যখাতের কর্মশক্তি জরুরি। ভারত তার জিডিপির শতকরা মাত্র ১ দশমিক ২ ভাগ খরচ করে জনস্বাস্থ্যে। চীন এ খাতে খরচ করে শতকরা ২ দশমিক ৭ ভাগ। ইউরোপিয়ান দেশগুলো খরচ করে ৭ দশমিক ৯ ভাগ।



রান্নার গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাম দলগুলোর কেন্দ্রীয় নীতির বিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নোবেল পুরস্কারবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। গত রোববার কলকাতা বইমেলায় লিটাররি মিটে বামদলগুলোকে উদ্দেশ করে অমর্ত্য সেন বলেন, যেসব ইস্যুকে হাতিয়ার করে বাম দলগুলো আন্দোলনে সরব হচ্ছে তা পাল্টাতে হবে। এ সময় তিনি দলগুলোর আন্দোলনের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি নেতৃত্ব নিয়ে ভাবারও পরামর্শ দেন। অমর্ত্য সেন বামদের জনসংযোগ বাড়ানোর ওপরও জোর দিতে বলেন। উল্লেখ্য, ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বামদের চৌত্রিশ বছরের দুর্গের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর পরাজয়ের কারণ হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নেতাদের দূরত্ব তৈরি হওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিল বাম নেতৃত্ব। এদিন সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন অমর্ত্য সেন। ২০০৮ সালে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করে ইউপিএ-ওয়ান সরকারের ওপর থেকে বামদের সমর্থন প্রত্যাহার করার সেই সিদ্ধান্তও ভুল ছিল বলে মত দেন অমর্ত্য সেন। অন্যদিকে বইমেলায় বিতর্কিত লেখক সালমান রুশদির কলকাতা সফর বাতিল নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, আসল সমস্যা না তুলে ধরে অযথা এই বিষয় নিয়ে হইচই করা হচ্ছে। এ রাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকেই বঞ্চিত কিন্তু সেই সমস্যা নিয়ে কেউই সরব হয় না বলে উল্লেখ করেন তিনি। আনন্দবাজার পত্রিকা।

view=details&type=gold&data=Games&pub_no=1316&menu_id=15&news_type_id=1&val=122462




অমর্ত্য সেন নোবেল জিতলেও আন্তর্জাতিকতার আকাশে উড়াল দিতে পারেননি:

১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৪:৪১

আহমদ আশিকুল হামিদ : নোবেল পুরস্কার জিতলেই কেউ যে একেবারে গড় উল্টে ফেলার মতো মহাকিছু হয়ে যান না সর্বশেষ ক্ষেত্রে তার প্রমাণ দিয়েছেন ভারতের নাগরিক অমর্ত্য সেন।

'দি আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান গ্রন্থে মূলকথার মধ্য দিয়ে মিস্টার সেন বুঝিয়ে দিয়েছেন, অন্য দশজন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয়র মতো তিনিও মনে-প্রাণে একজন কট্টর

হিন্দুই রয়ে গেছেন, তথাকথিত আন্তর্জাতিকতার আকাশে উড়াল দিতে পারেননি। ভারতীয় হিন্দুদের জন্য এটাই অবশ্য স্বাভাবিক। অনেক তথ্য ও ঘটনারই উল্লেখ করা যায়, যেগুলো প্রমাণ করবে, মুসলমানদের প্রতি ভারতীয় হিন্দুদের মনোভাব সেই ব্রিটিশ আমলের মতোই রয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর 'টু নেশন থিওরিতে কোনো ভুল বা অতিরঞ্জন ছিল না। মিস্টার জিন্নাহ আসলেও একশ ভাগ সত্যই বলেছিলেন। প্রথমে 'ওপার বাংলার কথাই বলা যাক। শুনলে আমাদের 'ধর্মনিরপেক্ষ সুশীলজনেরা রা-রা করে উঠতে পারেন, কিন্তু ভারত এতটাই 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যে, কোলকাতার মুসলিম প্রধান পার্ক সার্কাস এলাকায় মুসলমানরা এখনো জুমার নামাজ পড়তে যান টুপি পকেটে নিয়ে। অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়ে- যেন কোনো অন্যায় করতে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই মাইকে আযান দেয়া আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নয়াদিল্লির তথা ভারতের কেন্দ্রস্থলের দিকে লক্ষ করুন। ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর মতো বিদেশিনী খ্রিস্টান রমণীকেও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার আগে ব্রাহ্মণ পুরোহিত ডেকে, হাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে এবং ঢাকঢোল বাজিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। মন্দিরে গিয়ে গলায় আঁচল পেঁচিয়ে হিন্দুদের দেবীকে পেন্নাম করতে হয়। অথচ সোনিয়া গান্ধী হিন্দু নন। এসবই ভারতের রাজনীতিতে অবশ্যপালনীয়- সোনিয়া গান্ধী থেকে লালকৃষ্ণ আদভানী পর্যন্ত রাজনীতিকদের প্রত্যেককে হিন্দুধর্ম এবং ধর্মের বিধি-বিধান মানতে হয়। নাহলে ভোট পাবেন না তারা। কথাগুলো জানানোর উদ্দেশ্য একথা স্পষ্ট করা যে, যতোই 'ধর্মনিরপেক্ষতার স্লোগান দেয়া হোক না কেন, ভারত এখনো সর্বতোভাবেই হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রই রয়ে গেছে। দেশটিতে মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের বিপদও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এখানে ২০০২ সালের সংঘটিত গুজরাট হত্যাকান্ডের উল্লেখ করা যায়। গোধরায় একটি ট্রেনে অগ্নি সংযোগের মিথ্যা অভিযোগে দিনের পর দিন ধরে সেবার শতশত মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু বিজেপির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী মুসলমানদের স্বার্থে কোনো পদক্ষেপ নেননি। শুধু তা-ই নয়, হত্যাকান্ড নিয়ে লোকসভায় বিতর্ক শুরু হওয়ার প্রাক্কালে গোয়ায় অনুষ্ঠিত বিজেপির সম্মেলনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী গুজরাট হত্যাকান্ডের জন্য উল্টো মুসলমানদের দায়ী করেছিলেন। তার কথাগুলোও ছিল উস্কানিমূলক। তিনি বলেছিলেন, 'যেখানেই মুসলমান সেখানেই সন্ত্রাস। তাদের ধর্ম সন্ত্রাস শেখায় এবং পৃথিবীর কোথাও তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারে না। বাজপেয়ী গুজরাট পরিস্থিতির জন্য তার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের এবং গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্রনাথ মোদীর কোনো দায়-দায়িত্ব নেই বলেও ঘোষণা করেছিলেন। এককালের সমাজতন্ত্রী ও বাজপেয়ীর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজের বক্তব্যও স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, 'রেপ বা ধর্ষণ এমন কোনো বিষয় নয়। এটা অতীতেও বহুবার ঘটেছে। গর্ভবতী মায়ের পেট কেটে শিশু হত্যার যে কথা বলা হচ্ছে তা কি এক গুজরাটেই ঘটেছে? ১৯৪৭ সাল থেকে এমন ঘটনা কতবার ঘটেছে তার হিসাব কষে দেখুন। প্রধানমন্ত্রী বাজপায়ী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজের বক্তব্য লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, দুজনই প্রকারান্তরে মুসলিম হত্যাকান্ডে নিজেদের সমর্থন ও পরোক্ষ অংশগ্রহণের কথা স্বীকার করেছিলেন। তাদের কথায় ঘাতকদের প্রতিও সমর্থন ও উস্কানি ছিল- যার অর্থ হলো, মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় যেকোনোস্থানে হত্যার অভিযান চালানো যেতে পারে এতে দোষের কিছু নেই এবং এটাই ভারতীয় মুসলমানদের প্রাপ্য 'ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী ন্যাশনাল কংগ্রেস ও বামপন্থীসহ বিজেপির বিরোধিতাকারী দলগুলোও কখনো মুসলমানদের পক্ষে ভূমিকা পালন করেনি। গুজরাট হত্যাকান্ডের দিনগুলোতে দেখা গেছে, রাজ্যের রাজধানী আহমেদাবাদে যাওয়ার কিংবা মুসলমানদের বাঁচানোর লক্ষে কোনো ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে সোনিয়া গান্ধী শুধু লোকসভার অধিবেশন আহবান জানানোর দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন। এর ফলেও ঘাতকরা যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। এদেশের কারো কারো 'কাকাবাবু জ্যোতি বসু তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাকেও শুধু দিল্লিতেই দৌড়-ঝাঁপ করতে দেখা গেছে। এভাবেই এক মাসের বেশি সময় কাটিয়ে দিয়েছিলেন 'ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের রাজনৈতিক নেতারা। লোকসভার অধিবেশনে দেয়া ভাষণেও সোনিয়া গান্ধী গুজরাট হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচারের এবং মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তেমন জোরালোভাবে জানাননি। তিনি প্রধানত মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্রনাথ মোদীকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন- যেন ওই একজন মাত্র ব্যক্তিকে সরানো হলেই মুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে যেন হত্যার অভিযানে বাজপেয়ীসহ কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো ভূমিকা বা অংশগ্রহণই ছিল না প্রাসঙ্গিক অন্য একটি তথ্যও কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বিরোধী দলের সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী তখন গুজরাটের রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ, গুজরাটে তখন নির্বাচন হলে মুসলমান নিধনে নেতৃত্ব দেয়ার 'পুরস্কার হিসেবে বিজেপি জোটই জয়ী হতো এবং নরেন্দ্র মোদীই আবারও মুখ্যমন্ত্রী হতেন। ভারত এতটাই 'ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এর মধ্য দিয়েও প্রমাণিত হয়েছিল, ভারতে এখনো 'টু নেশন থিওরিই সত্য। উল্লেখ্য, বিজেপি এখনো গুজরাটের ক্ষমতায় রয়েছে এবং মোদীই আবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।

এখানে কংগ্রসের ভূমিকার দিকটি লক্ষ করা দরকার। পর্যালোচনায় দেখা যাবে, বিরোধিতা ও প্রতিবাদের নামে কংগ্রেস যেটুকু করেছিল তার সবই করেছিল নিজের 'ধর্মনিরপেক্ষ পরিচিতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য। কংগ্রেসের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশের অন্যান্য রাজ্যে 'ভোট ব্যাংক মুসলমানদের সন্তুষ্ট করা। অর্থাৎ কংগ্রেসের উদ্দেশ্যের মধ্যে মুসলমানদের জানমাল হেফাজতের কোনো উপাদান ছিল না। সবই ছিল নিতান্ত রাজনৈতিক কৌশল। বলা দরকার, কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি সময় ভারতের ক্ষমতা থেকেছে এবং কংগ্রেসের সময়ও মুসলমানরা একইভাবে হত্যা ও দাঙ্গার শিকার হয়েছেন। ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ যখন ভেঙে ফেলা হয় তখনও কংগ্রেসই ক্ষমতায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরসীমা রাও। কিন্তু কংগ্রেস সরকার বাবরী মসজিদ ভাঙা যেমন প্রতিহত করেনি তেমনি ব্যবস্থা নেয়নি মুসলমানদের হত্যার অভিযান থামানোর জন্যও। উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং বলেছেন এবং একথা প্রমাণিতও হয়েছে যে, অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আদভানী বাবরী মসজিদ ভাঙার কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু নরসীমা রাওয়ের কংগ্রেস সরকার এই দুজনসহ কারো বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সত্যিকার 'ধর্মনিরপেক্ষ কোনো রাষ্ট্রে এমনটা কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু উত্তর প্রদেশ ও গুজরাটসহ সারা ভারতে মুসলমানদের হত্যাকান্ড সম্ভব হওয়ার কারণ হচ্ছে, সংবিধানে লেখা থাকলেও এবং প্রকাশ্যে প্রচারণা চালানো হলেও ভারত এখনো উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি, মনোভাব ও কৌশল নিয়ে এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে মুসলমানদের হত্যা করার, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালানোর এবং মুসলমানদের পদানত রাখার ব্যাপারে গোপনে গোপনে সকল দলের মধ্যেই সমঝোতা রয়েছে। পার্থক্য হলো, বিজেপি যেখানে হিন্দুত্ববাদী পরিচিতিকে প্রকাশ্যে আনে কংগ্রেস সেখানে 'ধর্মনিরপেক্ষতার সাইনবোর্ডকে সামনে রাখে।

এখানে কমিউনিস্ট ও বাম নামধারীদের প্রসঙ্গেও বলা দরকার। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ এবং ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তান-বিরোধী ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে অন্য ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, তার আগের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আমলে এই বিরোধিতায় তেমন কমতি ছিল কি-না? উত্তর হলো, সর্বতোভাবে ভারতের স্বার্থ উদ্ধারে নিয়োজিত থাকলেও জ্যোতি বসু এদেশে অনেকেরই 'কাকাবাবু হওয়ার চাতুরিপƒর্ণ কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। 'কমরেড জ্যোতি বসু যেখানে অভিনয় করার কৌশল নিয়েছিলেন, 'কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেখানে কূটনৈতিক শালীনতা ও শিষ্টাচার পর্যন্ত মানেন না। তার কথাবার্তা শুনে বরং মনে হবে, প্রকাশ্য পরিচিতিতে একজন 'কমিউনিস্ট হলেও তার আবির্ভাব ঘটেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি, আরএসএস ও সংঘ পরিবার থেকে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লেগে থাকার জন্যই যেন তাকে মুখ্যমন্ত্রী বানানো হয়েছিল উদাহরণ হিসেবে এখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার কিছু মন্তব্যের উল্লেখ করা যায়। ২০০৪ সালের ১৭ আগস্টের বোমাবাজি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত ও চরমভাবে ক্ষুব্ধ, পশ্চিমবঙ্গের এই 'কমরেড মুখ্যমন্ত্রী তখন বাংলাদেশে পাকিস্তানের 'সেকেন্ড ফ্রন্ট আবিষ্কার করে বসেছিলেন। বোমাবাজির ঠিক পরদিন উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও চরম বাংলাদেশ-বিরোধী হিসেবে পরিচিত কোলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, 'বাংলাদেশ এখন একটা থ্রেট। এ শুধু কথার কথা ছিল না। কারণ, অত্যন্ত ক্ষোভ ও বিরক্তির সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ যে একটা 'থ্রেট এবং পাকিস্তান যে বাংলাদেশে তার 'সেকেন্ড ফ্রন্ট খুলেছে- এই কথাটি তিনি দিল্লিকে তথা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে 'ততোবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, 'যতোবার ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু 'আফসোসের বিষয়, কেউই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথাকে তেমন 'পাত্তা দেননি। তা সত্তে¦ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তার নিজের মনের মতো করে ব্যাখ্যা হাজির করেছিলেন। আনন্দবাজারকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে 'কমরেড মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশে 'মৌলবাদীরা এমনভাবেই মাথাচাড়া দিয়েছে, যার ফলে 'ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিজম নাকি একটি 'জটিল জায়গায় চলে গেছে তিনি আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে বলেছিলেন, কথিত 'মৌলবাদীদের প্রতিফলন নাকি সরকারে এবং সেনাবাহিনীতেও হচ্ছে এজন্যই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বাংলাদেশকে একটা 'থ্রেট মনে করেছেন। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তিনি যে পাকিস্তানের পাশাপাশি সার্বিকভাবে মুসলমানদেরই টেনে এনেছেন সে কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্থাৎ ভারতের তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেরও কারো কাছে মুসলমানদের আশা করার বা পাওয়ার কিছু নেই- তা তিনি মুখ্যমন্ত্রী বা রাজনেতিক নেতা, কূটনীতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী বা নোবেল বিজয়ী যা-ই হোন না কেন। উদ্বেগের কারণ হলো, ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোই পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মুসলিমবিরোধী হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে। দেশটিতে হিন্দু ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন শুধু গড়েই ওঠেনি, সেগুলো দশকের পর দশক ধরে তৎপরতাও চালিয়ে আসছে। এসব সংগঠনের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। তাদের লক্ষ ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানো। তারা ভারতের সেনাবাহিনীতে হিন্দুত্ববাদের প্রচারণা চালাচ্ছে। পেছনে রয়েছে শিব সেনা, বজরঙ্গ দল, আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এবং বিশ্ব হিন্দুপরিষদ বা ভিএসপির মতো কয়েকটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল। দলগুলো সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের অফিসার ও সৈনিকদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে ভেড়াচ্ছে। পুলিশ অনেক উপলক্ষেই প্রমাণ পেয়েছে, ভারতের সেনাবাহিনী ও হিন্দু সন্ত্রাসীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা মুসলমানদের হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না। কারণ, নিন্দেশ আসে 'র-এর কাছ থেকে। সব প্রধানমন্ত্রীর আমলেই 'র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ ভারতের রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, 'র এবং সন্ত্রাসীদের সমন্বিত নেটওয়ার্ক একযোগে কাজ করছে। বাবরী মসজিদ ধ্বংস ও মুসলমান হত্যা, গোধরায় ট্রেনে অগ্নি সংযোগ, গুজরাট গণহত্যা, মালেগাঁওয়ের বোমা বিস্ফোরণ, সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নি সংযোগ এবং সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়ংকর সব অপরাধেই রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, 'র এবং সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিটি হত্যাকান্ডের সময় তো বটেই, আগে-পরে সকল উপলক্ষেও প্রমাণিত হয়েছে, ভারতীয় মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো দল ভারতে নেই। অদূর ভবিষ্যতেও তেমন কোনো দলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ, 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে যতো প্রচারণাই চালানো হোক না কেন, ভারত এখনো হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রই রয়ে গেছে। বিশ্লেষণের এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, অমর্ত্য সেন মোটেও ব্যতিক্রম ঘটাননি। একজন ভারতীয় হিন্দু হিসেবে তিনি বরং তার জাতীয় দায়িত্বই পালন করেছেন।

বর্তমান পর্যায়ে এত কথা বলার কারণ শুধু অমর্ত্য সেন নন। মিস্টার সেন যে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করেছেন, সেই ভারতের চামচামো করার মতো লোকজনের সংখ্যা এদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তো বটেই, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্য সকল ক্ষেত্রেও তারা দাপটের সঙ্গে তৎপরতা চালাচ্ছে। এসব লোকজনই কথায় কথায় বাংলাদেশকে 'এপার বাংলা বানিয়ে ছাড়ছে- যেন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ 'ওপার বাংলা পশ্চিমবঙ্গের মতো ভারতের একটি রাজ্য মাত্র বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, সবকিছুর পেছনে রয়েছে একই সুচিন্তিত পরিকল্পনা। অমর্ত্য সেনও সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশের জনগণকে তারা ধীরে ধীরে ভারত নামের ট্যাবলেট গেলানোর কৌশল নিয়েছেন। ভারতীয় হিসেবে অমর্ত্য সেন এমন কিছু করতেই পারেন, কিন্তু উদ্বেগ বেড়ে চলেছে আসলে বাংলাদেশের ওই গোষ্ঠীর কর্মকান্ডে। সার্বভৌম বাংলাদেশকে শুধু 'এপার বাংলা বানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছেন না তারা, সুযোগ সৃষ্টি করে ভারতের জাতীয় সঙ্গীতও বাজাচ্ছেন। এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখার সম্মেলনে। গত ১ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করেছেন এর কর্মকর্তারা। এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠানে সাধারণত স্বাগতিক দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। কর্তাব্যক্তিরা যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, সম্মেলনে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন একজন ভারতীয়। ওই ভারতীয়র প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যই নাকি ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়েছেন তারা যুক্তিটি অবশ্য হালে পানি পায়নি। কারণ, এটা ভারত- বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলার মতো কোনো উপলক্ষ ছিল না বরং সম্পূর্ণরূপে ছিল ক্লাবটির বাংলাদেশ শাখার সম্মেলন। এতে যদি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট নিজেও উপস্থিত থাকতেন তাহলেও তার বা বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো চলতো না। ক্লাবের গঠনতন্ত্রেও অন্য কোনো দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর বিধান নেই। অতীতে এই রোটারি ক্লাবেরই অনেক সম্মেলন বাংলাদেশে হয়েছে। সেগুলোর কোনোটিতেও নিয়মের বাইরে যাওয়া হয়নি। যেমন গত বছর রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তুরস্কের একজন নাগরিক ক্লাব প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ওই সম্মেলনে তাই বলে তুরস্কের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়নি। কিন্তু এবার নিন্দনীয় ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা। তারা একজন মাত্র প্রতিনিধির প্রতি সম্মান দেখানোর অজুহাত দেখিয়ে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে ছেড়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং সাবেক তত্ত¦াবধায়ক সরকারের একাধিক উপদেষ্টাসহ উপস্থিত গণ মান্যজনদের কেউই এ ব্যাপারে আপত্তি জানাননি। তারাও সম্ভবত ভক্তিতে গদগদ হয়ে পড়েছিলেন। জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করার এ ঘটনাটিকে হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে সম্মানিত হওয়ার মতো বিষয়। এ দুটিকেই আমরা সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতার জন্য জাতি প্রাণ দিয়েছে, রক্তের সাগর তৈরি করেছে। এত বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বলেই জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার অবমাননাকে আইনে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে নিন্দিষ্ট করা হয়েছে। সংবিধানেও জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখার সুস্পষ্ট নিন্দেশনা রয়েছে। এজন্যই যার-তার প্রতি সম্মান দেখানোর নামে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো যায় না, যেমন যায় না যে-সে মানুষের গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগানো। এ সংক্রান্ত আইন ও নিন্দেশনা রোটারি কর্মকর্তাদেরও অজানা থাকার কথা নয়। তা সত্তে¦ও তারা যেহেতু একজন ভারতীয় নাগরিকের প্রতি সম্মান দেখানোর অজুহাতে জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়েছেন সেহেতু ধরে নেয়া যায়, সব জেনে-বুঝেই তারা আইন অমান্যের এবং অবমাননা দেখানোর অপকম্মটুকু করেছেন। বলা বাহুল্য, এর পেছনে রয়েছে ভারতপ্রীতির সে একই উদ্দেশ্য, যে উদ্দেশ্য থেকে অমর্ত্য সেন মুসলমানদের ইসলাম ত্যাগ করার 'নসিহত করেছেন। বিষয়টি নিয়ে এখনই গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার।

http://m.somewhereinblog.net/blog/motilal/29364966


রবীন্দ্র গবেষকদের প্রতি নিন্দা জানালেন অমর্ত্য ও ইউনূস

শান্তি মতিবেদক

সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা রবীন্দ্র গবেষকদের প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন দুই বাংগালী নোবেল বিজয়ী ড. অমর্ত্য সেন ও ড. মুহম্মদ ইউনূস।

আজ লন্ডনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা এই নিন্দা জানান।

১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম বাংগালী অর্থনীতিবীদ ড. অমর্ত্য সেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বুকে টিপ দিয়েছিলেন, এ বেপারে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বংগে কর্মরত গবেষকরা যথাযথ আলোকপাত করেন নি। মতিকণ্ঠ ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর নাতি লুই গাব্রিয়েল মরেনো ওকাম্পোর সাক্ষাতকার না নিলে এ তথ্যটি আমার অজানা রয়ে যেত।

ক্ষুব্ধ অমর্ত্য

ক্ষুব্ধ অমর্ত্য

২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম বাংগালী অর্থনীতিবীদ ড. মুহম্মদ ইউনূস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গবেষকরা শুধু গ্রামীন বেংক কত শতাংশ হারে সুদ নেয় সেই গবেষনায় লিপ্ত। অথচ রবী ঠাকুর যে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বুকে টিপ দিয়েছিলেন, সে বেপারে তারা কুন কথাই বলে না।

ক্ষুব্ধ ইউনূস

ক্ষুব্ধ ইউনূস

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বুকে টিপ দিয়ে রবীন্দ্রনাথের পার পেয়ে যাওয়াকে সমর্থন করে অমর্ত্য ও ইউনূস বলেন, নোবেল বিজয়ীরা টিপ দিলে তা কুন অপরাধ হতে পারে না।

রবীন্দ্র গবেষকদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, আমার জীবন থেকে চোদ্দটি বসন্ত অকারনে হারিয়ে গেল, কাজে লাগাতে পারলাম না। তথ্যের অভাবে শুধু দুর্ভিক্ষই হয় না, আরও সমস্যা হতে পারে।

রবী ঠাকুরের জীবন নিয়ে গবেষনায় লিপ্ত পণ্ডিতদের ধিক্কার জানিয়ে ইউনূস বলেন, আমার জীবন থেকে ছয়টি বসন্ত ফুরিয়ে গেল, কুন কাজেই লাগল না। রবীন্দ্র গবেষকদের এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।

অমর্ত্য সেন ও ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মায়ানমারের বিরোধী নেত্রী অং সান সু চির প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আজকে রাতে তুমি অন্যের হবে ভাবতেই জলে চুখ ভিজে যায়

আজকে রাতে তুমি অন্যের হবে ভাবতেই জলে চুখ ভিজে যায়

অমর্ত্য সেন বলেন, অং সান সু চির সংগে আমার অনেক সাক্ষাত হয়েছি। কিন্তু সে আমাকে কখনও জড়িয়ে ধরেনি। চুম্বন করতে দেওয়া তো দুরের কথা। অথচ ওবামা তাকে জড়িয়ে ধরে চুমা দিয়েছে।

ইউনূস আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, আমার চট্টগ্রামের বাড়ি থেকে অং সান সু চির বাড়ি দেখা যায়। আমরা প্রতিবেশী। অথচ সে জড়িয়ে ধরে ওবামাকে।

অবিলম্বে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে দেওয়ার দাবিতে সোচ্চার অমর্ত্য ও ইউনূস অং সান সু চিকে উদ্দেশ করে বলেন, লাইনে আসুন।

তবে কে আগে অং সান সু চিকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন দিবেন, তা নিয়ে অমর্ত্য ও ইউনূসের মধ্যে মৃদু বাদানুবাদ হয়।

অমর্ত্য দাবী করেন, তিনি আগে নোবেল পেয়েছেন, তাই তিনিই আগে অং সান সু চিকে চুমা দিবেন। কিন্তু ইউনূস বলেন, অং সান সু চি তার মতই শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। ওবামাও শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। তাই জড়াজড়ি ও চুমাচুমি আগে শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তদের মধ্যে ঘটতে হবে। এর পর একে একে পদার্থ রসায়ন অর্থনীতিতে নোবেল প্রাপ্তরা চেষ্টা করতে পারেন।

ইউনূস অমর্ত্যকে লাইন ধরার পরামর্শ দিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, লাইনে আসুন।

http://motikontho.wordpress.com/tag/%E0%A6%85%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A8/


Calcutta High Court
Ananda Publishers Pvt. Ltd. And ... vs State Of West Bengal And Anr. on 15 September, 2006
Equivalent citations: 2007 (3) CHN 68
Author: P S Banerjee
Bench: P S Banerjee

JUDGMENT

Prabuddha Sankar Banerjee, J.

1. This revisional application under Section 482 of the Criminal Procedure Code is at the instance of the petitioners who were accused persons in the case which was numbered as C-859 of 2004 pending before the Court of learned Metropolitan Magistrate, 13th Court, Calcutta.

2. The said case was brought by the present opposite party No. 2 for alleged offence under Section 418/420/120B of Indian Penal Code and was filed before the Court of learned Additional Chief Metropolitan Magistrate at Calcutta.

3. The learned Additional Chief Judicial Magistrate after taking cognizance of the offence transferred the case to the Court of learned 13th Metropolitan Magistrate.

4. The opposite party No. 2 filed the said case claiming himself to be an educated person having obtained his Ph. D degree from Moscow State University (formerly USSR). It is the case of the complainant of that case that the present petitioners are the translator, publisher, cover designer and printer of one Bengali book under the title of "Unnoyon O Shakhamata". It is the further case of the complainant that the writer of the said book was Professor Amartya Sen who is winner of the "Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in memory of Alfred Nobel" for 1998. The said book was translated into Bengali language and was published by Ananda Publisher and the complainant purchased the copy of the said book on 22.7.2004. After going through the jacket cover of the said book he noticed that the author has been described as "Ortho Nitite Nobel Puroskare Sonmanito". It is alleged in the said complaint that accused No. 1, being a publisher had adequate knowledge about the website and was acquainted with the website address of the Nobel Foundation. It is the allegation of the complainant that the accused persons were in the know that Amartya Sen obtained the prize in "Economic Sciences in the memory of Alfred Nobel" for 1998. As such, describing him, as "Arthonitite Nobel Puroskare Sammanito" was intentional mistake. It is the further case of the complainant that as per Will of Alfred Nobel there was no Nobel Prize for Economics. It is the further case of the complainant that Nobel Prize is given for (i) Physics (ii) Chemistry (iii) Physiology or Medicine (iv) Literature and (v) Peace. It is the further case of the complainant that since 1968, the Bank of Sweden inaugurated the Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in memory of Alfred Nobel. The complainant also alleged that the said intentional mistake was made by the accused persons for the purpose of wrongful gain from the purchasers by deceiving and inducing them to purchase the book using fraudulent description thereby causing wrongful loss to them. The complainant further took the plea that the jacket cover of the book was made in such way that it can be separated from the book at any time. As the complainant sustained mental injury from the said fraudulent description made in the book, the complaint was filed with prayer for punishment as per provision of Section 418/420/120B of the Indian Penal Code.

5. The learned Magistrate after examination of the complainant and relying upon the documents issued summons against the present petitioners for alleged offence under Section 420 of the Indian Penal Code.

6. The present petitioners entered into appearance before the concerned Magistrate and were released on executing P.R. bond.

7. Subsequently, they came up before this Court by filing the revisional application under Section 482 of the Criminal Procedure Code with prayer for quashing the said criminal case by invoking the inherent power.

8. Sri Sabyasachi Banerjee, learned Advocate appearing for the petitioners, challenged the proceeding on the following grounds:

a) That there was material suppression of fact before the Court below.

b) That the Court below without applying its judicial mind issued the process against the present petitioners.

c) That the Court below did not consider that the ingredients which are essential to constitute an offence of cheating as per provision of Section 415 of the Indian Penal Code are absent.

d) That the Court below did not consider that the complainant was not cheated in any way by the act of the present petitioners.

e) That the Court below ought to have considered that the book in question was translated in Bengali from the original book which was published by Oxford University Press.

9. The complainant Dr. Subodh Chandra Roy, who is the opposite party No. 2 in this revisional application appeared and conducted the case in person.

10. The following cases were relied upon by the parties:

(i) G.V. Rao v. L.H.B Prosad reported in 2000 C Cr. LR(SC) 302.

(ii) Dr. Sharma's Nursing Home v. Delhi Administration reported in 1999 SCC (Cri) 91.

(iii) Madhab Rao Scindia and Ors. v. S.C. Angre and Ors. reported in 1988 SCC (Cri) 234.

(iv) State of Hariyana v. Bhajanlal .

(v) Punjab National Bank and Ors. v. Surendra Prosad Sinha reported in 1993 SCC (Cri) 149.

(vi) Champa Agency and Anr. v. R. Chowdhury and Anr. reported in 1974 CHN 400.

(vii) Kalpanath Rai v. State .

(viii) Zee Telefilms Ltd. v. Sahara India Commercial Corporation Ltd. and Anr. reported in 2001 C Cr. LR (Cal) 106.

(ix) N.D. Dayal and Anr. v. Union of India and Ors. 2003 (SCI) GJX 0886 SC.

(x) Municipal Corporation of Delhi v. Gunram Kaur, .

(xi) Abhik Sarkar and Anr. v. State and Anr. 2004 C Cr. LR (Cal)

383.

11. In this connection, I must mention that at the time of hearing, parties referred to the print outs from website with respect to Nobel Foundation and also regarding the bio-data of Professor Amartya Sen.

12. Dr. Roy, the opposite party No. 2 at the time of his strenuous argument tried to convince me that the present petitioners knew it very well that Prof. Amartya Sen never received any Nobel Prize for Economics as the said award does not exist on the basis of last Will of Alfred Nobel. Dr. Roy contended at the time of hearing that as per last Will of Alfred Nobel, there would be Nobel Prize for Physics, for chemical discovery or improvement (Chemistry), for most improved discovery within the domain of Physiology or Medicine, for literature and for person who shall have done the most or the best work for fraternity between nations, for the policy or reduction of standing arms and for the holding and promotion of peace congresses (peace). For this he referred to Annexure 'A' which is at page 18 of his affidavit-in-opposition. He also referred to Annexure 'B' which is at page 19 which relates to the details of the Nobel Foundation established in 1900.

13. Annexure 'C which is at page 20 describes the award given to Prof. Sen "Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in memory of Alfred Nobel". Annexure 'D' appearing at page 21 of the affidavit-in-opposition by opposite party No. 2 goes to show that Prof. Amartya Sen got the said prize in the year 1998. Dr. Roy, during his strenuous argument drew my attention to the fact that Nobel Prize is different from the prize in Economic Sciences and Nobel Prize is known as Nobel Diploma as it appears in Annexure 'E-1' corresponding to page

22. The said Annexure goes to show that Robert B. Laughlin got Nobel Diploma for the year 1998 in Physics. Similarly, the Nobel Diploma prize in Chemistry was given to Walter Khan for the year 1998 as per Annexure 'E-2'. He also drew the attention of the Court to Annexure 'E-3.' 'E-4' and on the basis of the same it was submitted that the Nobel Prize is known as Nobel Diploma. At the same time, he drew the attention of the Court to Annexure 'E-5' corresponding to page 26 which clearly provides that words 'Nobel Diploma' is absent. The print outs from website with respect to Copyright and Trade Mark of Nobel Foundation and the medal for the prize in Economic Sciences in memory of Alfred Nobel is quite different from the actual Nobel Prize. Accordingly, it was submitted by Dr. Roy the opposite party No. 2 that this fact was known to the present petitioners who intentionally described Prof. Sen as "Ortho Nitite Nobel Puroskare Sonmanito". Dr. Roy continued his argument on the ground that the same was done intentionally to deceive the purchasers by prevailing over them to accept Prof. Sen as recipient of Nobel Prize in Economics. The ultimate aim of the present petitioners was for wrongful gain by deceiving the purchasers to accept Prof. Amartya Sen as recipient of Nobel Prize in Economics.

14. Dr. Roy argued further that he was also cheated by the present petitioners as he was of the belief that Prof. Sen got Nobel Prize in Economics which was subsequently found not to be correct. Dr. Roy further argued that the learned Trial Magistrate on the basis of his initial ezahar and on the basis of documents which were filed at the time of enquiry was of clear opinion that there exists strong prima facie case against the present petitioners for alleged offence under Section 420 of the Indian Penal Code and thereafter summons were issued. Accordingly, it was submitted by Dr. Roy that the learned Magistrate after applying his judicial mind was of clear opinion that the ingredients which are essential for commission of offence under Section 420 of the Indian Penal Code were prima facie proved before him and as such the question of quashing the criminal proceeding should be rejected.

15. The following facts are not in dispute:

i) That the present petitioners translated and published the original work of Prof. Amartya Sen namely "Development as Freedom" which was published in United States by Alfred A. Knopf and was published in India by Oxford University Press, New Delhi.

ii) That the petitioners printed and published the said book in Bengali in the name of "Unnoyon O Shakhamata" after getting permission from the original publisher.

iii) The said permission on oath as stated in the affidavit was not disputed by the opposite party No. 2 in his affidavit-in-opposition.

iv) That no criminal action has been taken against the original publisher by the opposite party No. 2.

16. Sri Sabyasachi Banerjee, at the time of his argument challenged the proceeding pending before the Court below mainly on the ground that there was suppression of fact as it has not been stated before the Court below that in the original book which was in English and published by Oxford India Paper book, Amartya Sen was mentioned as winner of Nobel Prize in Economics.

17. Sri Banerjee further argued that the present petitioners only printed and published the said work of Amartya Sen and it is verbatim reproduction of the original work of Amartya Sen from English to Bengali including the description of Amartya Sen in the cover page of the English version.

18. Sri Banerjee further contended that the ingredients which are absolutely necessary for making out prima facie case of cheating are absent and the learned Magistrate without applying his judicial mind issued the process. It was further argued by Sri Banerjee that if the entire proceeding is not quashed, the present petitioners will be harassed and it is the bounded duty of this Court to stop the same by quashing the proceeding by invoking its inherent power under Section 482 of the Criminal Procedure Code.

19. It was argued by Sri Banerjee that even the Hon'ble Supreme Court in the case of N.D. Dayal and Anr. v. Union of India (supra) mentioned Prof. Sen for his classic work "Development as Freedom" as Nobel Prize winner. On the basis of the same, it was argued that as the Apex Court already held that Amartya Sen is Nobel Prize winner, the petitioners did not commit anything wrong in mentioning him as "Arthonitite Nobel Puroskare Sammanito" in the book "Unnoyon O Shakhamata".

20. I have already stated that print outs from the website were filed and were made Annexures to the affidavit-in-opposition by the opposite party No. 2. It is the specific case of the opposite party No. 2 that there is no Nobel Prize for Economics.

21. I have gone through the print-outs from the said website which are marked as Annexures 'A' to 'G' corresponding to pages 18 to 28 of the affidavit-in-opposition. Even from the excerpt of the Will of Alfred Nobel which is marked as Annexure 'A' (page 18) it is seen that the following sentences have been mentioned "NOBEL -Physics, Chemistry, Medicine, Literature, Peace, Economics". Strangely the Annexures which I have already referred go to show that against the word Nobel, each of the Annexure contains the subject namely Physics, Chemistry, Medicine, Literature, Peace and Economics. Annexure 'C starts with "Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in memory of Alfred Nobel". However, against the word Nobel the following subjects are mentioned namely Physics, Chemistry, Medicine, Literature, Peace and Economics-Annexure 'D' (page 21) is the prize for Economic Sciences 1998 in the name of Amartya Sen. However, against the word "Nobel" Economics is also mentioned along with Physics, Chemistry, Medicine, Literature and Peace.

22. In Annexure 'D' the following words on the right hand side have been mentioned--

The 1998 prize in

Physics

Chemistry

Physiology or Medicine

Literature

Peace

Economic Sciences

23. It is therefore, clear that along with Nobel Prize for the other subjects, Economic Sciences has also been included. The print outs with respect to Nobel Prize for Physics, Chemistry etc. go to show that the words Nobel Diploma has been mentioned in those Annexures whereas for Economics it has been mentioned as 'Laureates' and name of Prof. Sen has been mentioned for the year 1998.

24. Dr. Roy drew the attention of Annexure 'G' (page 28) and special reference was made to last paragraph which runs as follows:

The Economics prize is not a Nobel Prize. In 1968 the Bank of Sweden (Sveriges Riks Bank) instituted Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in memory of Alfred Nobel and it has since been awarded by the Royal Swedish Academy of Science, Stockholm.

25. On the basis of the said observation and also on the basis of contents of other print-outs from website regarding Nobel Prize, Dr. Roy contended that Prof. Amartya Sen was never awarded Nobel Prize for Economics but he was awarded with Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in the memory of Alfred Nobel.

26. Dr. Roy being armed with those observations argued that describing Prof. Amartya Sen as recipient of Nobel Prize in Economics is wrong and printing the same in Bengal version of 'Development as Freedom' in the name of "Unnoyon 0 Shakhamata" is to be treated as deceitful act on the part of the present petitioners in cheating common people including complainant.

27. Being asked by the Court how the complainant was cheated by the act of the present petitioners in mentioning Professor Sen as recipient of Nobel Prize in Economics, Dr. Roy answered that had it been known to him that Prof. Sen did not receive Nobel Prize in Economics, he would not have purchased the book. During hearing Sri Joymalya Bagchi, learned Senior Counsel for the petitioners produced one book in the name and style "The Argumentative Indian" published by Penguin Books and contended that Prof. Sen was mentioned as winner of Nobel Prize in Economics in 1998 in the said book.

28. Whether Prof. Amartya Sen actually received "Nobel Prize in Economics" in the year 1998 or obtained Bank of Sweden Prize in Economic Sciences in the year 1998 is not to be decided by this Court as this Court has no power to pass such order.

29. In the case of N.D. Dayal and Anr. v. Union of India, the Hon'ble Supreme Court mentioned Prof. Sen as recipient of Nobel Prize in Economics when the Apex Court referred the book "Development as Freedom". How far the said finding of the Supreme Court is relevant regarding 'Nobel Prize" award is not to be considered by this Court. We are concerned whether by publishing the book 'Development as Freedom' in Bengali the petitioners cheated the complainant.

30. Admittedly, the publisher of the original book 'Development as Freedom' was not made party to the proceeding before the Court below. I have already stated that the present petitioners only translated the said book into Bengali after obtaining permission. On perusal of Section 415 of Indian Penal Code,' it is clear that the ingredients, which are essential for commission of an offence of cheating are very much absent in the case brought by the opposite party No. 2. The Court below did not get any opportunity to consider whether in the original book i.e. 'Development as Freedom', Amartya Sen was described as winner of Nobel Prize in Economics.

31. Dr. Roy, in course of his argument referred Section 415 of the Indian Penal Code and on the basis of the same he argued that the present petitioners dishonestly induced common people and the said common people being deceived by such act of the petitioners purchased the book. He further argued that the present petitioners intentionally induced the common people and thereby the said common people were cheated.

32. Section 415 of the Indian Penal Code runs as follows:

Whoever, by deceiving any person, fraudulently or dishonestly induces the person so deceived to deliver any property to any person, or to consent that any person shall retain any property, or intentionally induces the person so deceived to do or omit to do anything which he would not do or omit if he were not so deceived, and which act or omission causes or is likely to cause damage or harm to that person in body, mind, reputation or property, is said to 'cheat'.

33. On perusal of the explanation appended to the said Section it is clear that a dishonest concealment of fact is a deception within the meaning of this Section (emphasis supplied).

34. I have already stated that the book in question namely "Unnoyon-O-Shakhamata" was translated into Bengali from the original book named "Development as freedom" written by Prof. Sen which was published in USA by Alfred A Knopf. The Indian edition of the said book was published by Oxford University Press. Had there been any dishonest intention on the part of the present petitioners, the contents of the book along with cover page would have been different. As it is verbative translation of the original book, it cannot be said that there was any dishonest concealment of fact.

35. It has become the settled principle of law at present that the High Court should invoke its inherent power under Section 482 of the Criminal Procedure Code sparingly. In other words, the said inherent power should be invoked in rarest of rare cases. If it is found that there was inherent defect in the proceeding from very beginning, the High Court should invoke its inherent power to save a litigant from further harassment. In Rambilas Devi and Anr. v. Umesh Kumar Singh and Anr. reported in 2006(2) C Cr. LR (SC) 118; the Hon'ble Supreme Court came to the decision that if the allegations do not constitute any criminal offence, and if no ingredient of the alleged offence is made out, the Court should quash the proceeding in the interest of justice.

36. Let me now discuss the cases referred by the parties during hearing.

37. In Avik Sarkar and Anr. v. State and Anr. reported in 2004 C Cr. LR (Cal) 383 the Single Judge of this Court refused to quash the proceeding on the ground that there was publication and circulation of obscene photograph of Baris Baker and a lady in the newspaper and the sports magazine and trial is yet to commence. In my opinion the said case law is not attracted, as we are not concerned with publication of any obscene photograph etc.

38. In the case between G.V. Rao v. L.H.B. Prosad and Ors. reported in 2000 C Cr. LR (SC) 302; the Hon'ble Court came to the conclusion that fraudulent intention is essential.

39. In the case between Dr. Sharma's Nursing Home v. Delhi Administration and Ors. reported in 1999 SCC (Cri) 91; the Hon'ble Supreme Court opined that dishonest inducement is one of the ingredient of cheating.

40. I have already discussed that dishonest inducement is very much absent in the instant case on the basis of materials on record.

41. In the case between Madhav Rao Jiwajirao Scindia and Ors. v. Sambhaji Rao Chandrojirao Angre and Ors. reported in 1988 SCC(Cri) 234, the Hon'ble Court held:

When a prosecution at the initial stage is asked to be quashed, the test to be applied by the Court is as to whether the uncontroverted allegations as made prima facie establish the offence. It is also for the Court to take into consideration any special features which appear in a particular case to consider whether it is expedient and in the interest of justice to permit a prosecution to continue. This is so on the basis that the Court cannot be utilized for any oblique purpose and where in the opinion of the Court chances of an ultimate conviction are bleak, and therefore, no useful purpose is likely to be served by allowing a criminal prosecution to continue, the Court may while taking into consideration the special facts of a case also quash the proceeding even though it may in a preliminary stage.

42. In this regard, I must refer my earlier discussion wherein I have discussed that on the basis of materials on record the main ingredients for commission of an offence of cheating are absent.

43. The case in between State of Hariyana and Ors. v. Ch. Bhajan Lal and Ors. reported in AIR 1992 SC 604; in my opinion has no manner of application in the instant case.

44. In the case between Punjab National Bank and Ors. v. Surendra Prosad Sinha, 1993 SCC (Cri) 149; the Hon'ble Court came to the finding that regarding issue of process, Court should be circumspect and judicious in its approach process should not be an instrument of oppression and harassment.

45. In the case between Champa Agency and Anr. v. R. Chowdhury and Anr. reported in 1974 CHN 400 : CRR No. 865 of 1973--date of judgment 20.8.1974 this Court passed order regarding mens rea and the Court came to the conclusion that in a case against a company or a corporate body, mens rea is an essential ingredient. The case reported in 1997 (8) SCC 732, in my opinion, has no application in the instant case.

46. In the case between Zee Telefilms Ltd. v. Sahara India Commercial Corporation, reported in 2001 C Cr. LR (Cal) 106; the Court held that mens rea is one of the essential ingredient in an offence of defamation.

47. On the basis of materials on record I am of clear opinion that the ingredients which are essential to constitute an offence of cheating are absent in the instant case. It is also clear from materials on record that dishonest intention on the part of the present petitioners could not be established and the learned Magistrate without proper application of his judicial mind passed order for issuing process against the present petitioners. I am of clear opinion that this is a fit case where this Court should invoke its power under Section 482 of the Criminal Procedure Code to prevent harassment of litigants.

48. Accordingly, this criminal revision is allowed on contest. The proceeding arising out of case No. C-859 of 2004 pending before the Court of learned Metropolitan Magistrate, 13th Court, Calcutta, is hereby quashed. However, there will be no order as to costs. Copy of this order be sent to the Court below at once.

http://indiankanoon.org/doc/83430/

অমর্ত্য সেনের নতুন বই: আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স: দ্য ইলিউশন অব ডেসটিনি

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ সকাল ৭:২৪ |



অমর্ত্য সেনের নতুন বই: আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স: দ্য ইলিউশন অব ডেসটিনি

অ ব নি অ না র্য

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সমপ্রতি প্রকাশিত বই আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স: দ্য ইলিউশন অব ডেসটিনি। মানুষের মধ্যে একক আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে সময়ের সাথে সাথে সহিংস আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু মানুষের পরিচয় কি কেবল একটি? কেনইবা মানুষের ধারণা হয় যে, সে কেবল একজন মুসলিম, বা কেবল একজন বাঙালি? এসব আত্মপরিচয়ের সংকটের ঐতিহাসিক সামাজিক রাজনৈতিক প্রোপটে আলোচনা করেছেন এই অর্থনীতিবিদ। আমরা জানি, অমর্ত্য সেন আগে দ্য আর্গুমেন্টেটিভ ইনডিয়ান নামে একটি বই লিখেছেন, যার অর্থ দাড়ায় যুক্তিপ্রিয় ইনডিয়ান। পশ্চিমা দুনিয়া সবসময়ই প্রচার করে যে, গণতন্ত্র ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্মস্থান পূর্বে নয়, পশ্চিমে। অমর্ত্য সেন লিখেছিলেন, প্রাচ্যের নিজস্ব পদ্ধতিই আছে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের, এবং ধর্মীয় সহনশীলতারও। চোখে আঙুল দিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন, সত্য প্রকাশের কারণে ধর্মের নামে পশ্চিমে কীভাবে জিওর্দানো ব্রুনোকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো। অথচ এর বিপরীতে ষোড়শ শতাব্দীতে মোগল সম্রাট আকবরের ঘোষণা_ 'ধর্ম নিয়ে কোনো ব্যক্তিরই হস্তপে করা উচিত নয়, এবং যার যার পছন্দমতো ধর্ম গ্রহণ করার স্বাধীনতা সবার আছে।' এরকম যুক্তিশীল একজন অর্থনীতিবিদ সদ্যপ্রকাশিত বইয়ে অনেকটাই আবেগ বা সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স-এর রিভিউয়ে অনেকইে একই মন্তব্য করেছেন। সবচেয়ে বেশি যে উদাহরণটি সবাই ব্যবহার করেছেন, সেটা ঘটেছে অমর্ত্য সেনের আদ বাসভূমি পুরান ঢাকার ওয়ারিতে।
ওয়ারির বাড়িতে চুয়ালি্লশ সালের এক বিকেলে তাঁর সামনেই ঘটে এক ভয়ংকর দৃশ্য। সময় বলে দিচ্ছে, অবিভক্ত বাংলায় তখন হিন্দু-মুসলিম রায়ট চলছে। বাড়ির দরজায় তীব্র আর্তনাদ। দেখলেন, আহত রক্তাক্ত এক লোক দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করছে। পরে জানা যায়, লোকটার নাম কাদের মিয়া। মুসলিম দিনমজুর লোকটাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান অমর্ত্যর বাবা শ্রী আশুতোষ সেন। সেখানেই লোকটি মৃতু্যবরণ করেন। অমর্ত্য সেনের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি, রায়টের সেই ভয়ংকর দুঃসময়ে, বিশেষত হিন্দু-প্রধান এলাকা বলে দিনমজুর লোকটাকে বাড়ির বাইরে যেতে তাঁর স্ত্রী নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু, বাইরে যাওয়া ছাড়া তাঁর কিছু করার ছিলো না, খাবার জোগাড় তো করতে হবে! অমর্ত্য সেন বলেন, কেবলমাত্র অর্থনৈতিক পরাধীনতা তথা প্রচণ্ড সেই দারিদ্রের কারণেই ওই সময়েও লোকটাকে রিস্ক নিতে হয়েছিলো, যার প্রতিদান হিসাবে মৃতু্যকে তিনি বরণ করেছিলেন।
অমর্ত্য সেনের প্রবন্ধগ্রন্থ "আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স"-এর রিভিউয়ে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার রিভিউয়ার জন গ্রে উপরোক্ত ঘটনার প্রসঙ্গক্রমে আরো একটি ঘটনার কথা আমাদের সামনে তুলে ধরেন। এবং বলেন, একইরকম ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন দর্শনের জন্ম নেয়া সম্ভব। দ্বিতীয় ঘটনার প্রত্যদর্শী ইসাইয়াহ বার্লিন। রুশ বিপ্লবের সময় পেত্রোগ্রাদে তাঁর সামনে ত-বিত মৃতপ্রায় এক ব্যক্তিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্য একদল মানুষ। এ-ঘটনা বার্লিনের মনে হানাহানির প্রচণ্ডতার ভয়ংকর চিরস্থায়ী ছাপ ফেললেও তিনি কখনো শান্তিবাদী ছিলেন না, বা বিপ্লবের বিরুদ্ধাচারীও ছিলেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সরকারী অফিসিয়াল যোদ্ধা ছিলেন তিনি। অন্যান্য মুক্তমনা চিন্তাবিদদের সঙ্গে বার্লিনের পার্থক্য এই, তিনি মনে করেন, মানুষ স্বাধীনতা চায় বটে, আবার একে ভয়ও পায়, এবং অনিরাপত্তার দরুণ একসময় সে আগ্রাসী হয়ে ওঠে।
আইডেন্ডিটি অ্যান্ড বায়োলেন্স-এ অমর্ত্য সেন নিজের জবানীতে বলেন, "ঘটনাটা শুধু রাতের ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মতো নয়, রীতিমতো দুর্বোধ্য মনে হয়েছে আমার কাছে। শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানরত মানুষগুলো কী কারণে হঠাৎ একে অপরের উপর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেলো, যার ফলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটলো? গরীব সেই দিনমজুরকে কেন শুধুমাত্র মুসলিম গোত্রভূক্ত বলে শত্রু ভাবা হলো, সে তো আরো আরো গোত্রেরও একটা অংশ? কিংকর্তব্যবিমূঢ় একটি শিশুর প েআইডেন্টিটির লড়াই বোঝা নিঃসন্দেহে কঠিন। অবশ্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিণত মানুষের পওে এটা বোঝা সহজ নয়।"
অমর্ত্য সেন চুয়ালি্লশের ঘটনাটি প্রত্য করে যেভাবে সেটার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটার অনেকখানি জুড়ে আছে আবেগ। তাঁর মতো অ্যাকাডেমিক প্রফেসরের কাছে কাটখোট্টা দার্শনিক কথার বাইরে আবেগ প্রত্যাশিত নয়। এ-বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, আউটলুকের রিভিউয়ার শুদ্ধব্রত সেনগুপ্ত। রিভিউয়ের শুরুতেই তিনি বলেন, একজন যুক্তিবাদী ইনডিয়ানও মাঝেমধ্যে বিস্ময়করভাবে আবেগী হয়ে ওঠেন। এমনকি সেনের 'আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়ালেন্স: দ্য ইলিউশন অব ডেসটিনি'-কে তিনি 'দ্য প্যাশন অব অমর্ত্য' বলাটাই যুক্তিযুক্ত মনে করেন। নয়টি চমৎকার প্রবন্ধের মাধ্যমে বইটিতে কালচার এবং আইডেন্টিটি বিষয়ে নির্বিচার ধারণার ফলে উদ্ভূত সহিংসতা তথা বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার হুমকি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন অমর্ত্য সেন। রিভিউয়ার সেনগুপ্ত বলছেন, অমর্ত্য তাঁর ােভ, বেদনা, উল্লাস, বিরক্তি, সুখানুভূতি, প্রত্যাশা কিংবা মিশ্রপ্রতিক্রিয়া প্রকাশে সৎ ছিলেন। বইয়ে সেনের হাসির শব্দ পাওয়া যায়, তাঁর অভিযোগ সুস্পষ্ট, এমনকি কখনো কখনো তাঁর দীর্ঘশ্বাসের শব্দও শোনা যায়। তাঁর আগের গ্রন্থ 'দ্য আর্গুমেন্টেটিভ ইনডিয়ান'-এর অনেক বিতর্ক নিয়েও তিনি আলোচনা করেছেন এই বইতে।
যুক্তির পথকে সম্রাট আকবরের ভাষায় অমর্ত্য সেন বলেছেন রাহ-ই-আক্ল। সেনগুপ্ত প্রশ্ন করেছেন, সংবেদনশীলতার উষ্ণতা কি যুক্তির পথকে স্পর্শ করতে পারে? উত্তরও নিজেই দিয়েছেন, অমর্ত্য সেনের নৈতিক দার্শনিকতার পাঠ থেকেই বোঝা যায়, এটা সম্ভব।
রিভিউয়ার সেনগুপ্ত নৈতিক দার্শনিক অমর্ত্য সেনের সঙ্গে অর্থনীতিবিদ সেনকে তুলনা করেছেন বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপী হিসাবে, আবার নাস্তিবাদী আলোকিত বুদ্ধিজীবি সেনকে তুলনা করেছেন সংবেদনশীল বাঙালীর সংগত হিসাবে। তিনি বলেন, আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স-এ সেনের যুক্তিকে সামাজিক শক্তি হিসাবে সহানুভূতি চর্চার অনুশীলন বিবেচনা করা যায়। অমর্ত্য সেনের মতে, এই সহানুভূতির কারণেই মানুষ নিজেকে নিজেদের একজন হিসাবে ভাববার প্রেরণা, আবার এই সহানুভূতিই অপর ভাবতে শেখায়। কিন্তু সেন বলেন, আমাদের পরিচয় একক কিছু নয়। একজন মানুষ একইসঙ্গে এশিয়ান, ভারতীয় নাগরিক, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বাঙালি, আমেরিকা বা লন্ডন প্রবাসী, অর্থনীতিবিদ, অল্পঅল্প দর্শনচর্চাকারী, একজন লেখক, সংস্কৃত-বিশেষজ্ঞ, দৃঢ়ভাবে গণতন্ত্র এবং সেকু্যলারিজমে বিশ্বাসী, একজন পুরুষ, নারীবাদী, ধর্মকর্মে অবিশ্বাসী, জন্মসূত্রে হিন্দু, অ-ব্রাহ্মণ এবং পরকালে অবিশ্বাসী হতে পারেন। তাতে ওই ব্যক্তির কোনো একটি পরিচয়েরও অসত্যতা প্রমাণিত হয় না। বরং এতে করে মানুষের ধর্মীয় রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক বুদ্ধিবৃত্তিক ইত্যাদি ভিন্নভিন্ন পরিচয়ের প্রতি সমানভাবে সম্মান দেখানো সম্ভব হয়। কিন্তু এগুলোর মধ্য থেকে কেবলমাত্র একটি পরিচয়কে এক এবং অদ্বিতীয় পরিচয় ভাবা হলে বাকিগুলোকে অসম্মান করা হয়, ক্রমে বাকি পরিচয়গুলোকে অপর মনে হয়। আত্মপরিচয়ের প্রতি অতি-সম্মান অপরের পরিচয়ের প্রতি সহিংস করে তোলে।
মানুষের একক পরিচয়ের এই ভাবনা পুরোমাত্রায় ভুল, এবং সেটা বিপজ্জনকও হতে পারে। মুসলিমদেরকে কেবলমাত্র ধমর্ীয় পরিচয়ে বিবেচনা করে এবং তাদেরকে 'অ্যান্টি ওয়েস্টার্ন' অভিহিত করে "ওয়ার অন টেরর" নামক সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে কিভাবে স্যামুয়েল হান্টিংটনের "ক্যাশিং সিভিলাইজেশন" থিওরির ব্যবহার হয়েছে, সেটা সুুনিপুণভাবে তুলে এনেছেন অমর্ত্য সেন। বিভিন্নভাবে আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় আইডেন্টিটি নিয়ে সমসাময়িক রাজনীতির সময়োপযোগী সমালোচনা করলেও সেনের সমালোচনায় বাস্তববাদিতার ব্যাপ্তির ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দ্য গার্ডিয়ান বিভিউয়ার জন গ্রে। তিনি আরো বলেন, একটি জাতিকে কয়েকটি কমু্যনিটি এবং ধর্মের সঙ্ঘ হিসাবে দেখতে গান্ধির অনীহার সঙ্গে সমাজে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের তুলনা করেছেন সেন। ফলে সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের বিকল্প হিসাবে সেন যা দেখিয়েছেন সেটা এক ধরণের উদার জাতীয়তাবাদ। দুর্ভাগ্যক্রমে, জাতীয়তা কিভাবে এবং কত কিছুর বিনিময়ে অর্জিত হয় সেটা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন সেন। কমু্যনিটির উৎপীড়ন থেকে ব্যক্তির মুক্তির জন্য আধুনিক জাতিব্যবস্থা অনেক কিছুই করেছে, কিন্তু তার জন্য অনেক মূল্য গুনতে হয়েছে। প্রায় সর্বত্রই, দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতা একটি জাতি-রাষ্ট্র গঠনের মূল প্রক্রিয়ার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইনডিয়ার স্বাধীনতার সময় কমু্যনাল রায়ট তাই ব্যতিক্রম কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রও আধুনিক জাতি হয়েছে ধ্বংসাত্মক সিভিল যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, ফ্রান্স স্বাধীন হয়েছে নেপোলিয়নের যুদ্ধের পর। আফ্রিকা এবং বলকান অঞ্চলেও বহু হাত ঘুরে, গোত্রগত অনেক সংঘাত পেরিয়ে, গোত্রগত পরিশৃদ্ধতার নামে অসংখ্য প্রাণহানির পরে স্বাধীন তথা আধুনিক রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে; চীনের বর্তমান আধুনিকায়নও অসংখ্য তিব্বতী এবং মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর শোষণের মধ্য দিয়েই হচ্ছে। এমনকি উদার জাতীয়তাবাদও সহিংসতার জন্ম দিয়েছে ব্যাপকভাবে। বরং, তুলনামূলকভাবে সেনের সমালোচনার মূল ল্যবস্তু মাল্টিকালচারালিজম এসবের সাপে েগৌণ।
সেনের বিশ্লেষণের মধ্যে গভীর অবাস্তববাদিতার উপস্থিতি আছে বলে উল্লেখ করে জন গ্রে বলেন, এটার কারণ সলিটারিস্ট বা এককপরিচয়বাদিতার বিষয়টার শক্ত বিশ্লেষণে সেন অপারগতা দেখিয়েছেন। সেন বলছেন, "বহুত্ববাদের এই পৃথিবীতে একত্ববাদের এত জয়জয়কার অবস্থার কারণটা একটা বড় প্রশ্ন।" এখানে সেনের কিংকর্তব্যবিমূঢ় হৃদয়ের স্পর্শ পাই আমরা। অন্যান্য উদার দার্শনিকদের মতোই অমর্ত্য সেনও মনে করেন, মানুষে মানুষে দ্বন্দ্বের কারণ হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক ভ্রান্তি। কিন্তু, সলিটারিজমের ভ্রান্তি যদি এতোটাই স্পষ্ট হয়, তাহলে এতো অসংখ্য মানুষের অবিচল আস্থা কেন আজো বিদ্যমান? সেন বারবার হিংসুটে প্রচারকদের হস্তেেপর কথা বলেছেন। সেন লেখেন, "সন্ত্রাসবাদের প্রভুদের সমর্থনে নিষ্পেশিত জনগণের মধ্যে যুদ্ধবিবাদপ্রিয়তা এবং একত্ববাদের আরোপের মধ্য দিয়ে প্রকৃতপ েসহিংসতা উস্কে দেয়া হয়।" কিন্তু গ্রে প্রশ্ন করেন, লোকজন কি আসলে এতোটাই বোকা? নাকি উদার দার্শনিকের বোঝার ভুল এটা?
সাদ্দামের শাসন পরবর্তী ইরাকের সামপ্রদায়িক সংঘাত প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন লেখেন, "এটা বিস্ময়কর নয় যে, একটা মানুষের যতগুলো আইডেন্টিটি আছে সেগুলোর মধ্য থেকে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আইডেন্টিটিগুলো ছাড়া অন্যগুলো উপো করার মাধ্যমে সামপ্রদায়িক সংঘাত এড়ানোটা বরং সমস্যাসংকুল।" অনুমান করা যায়, ইরাকের সামপ্রদায়িকতা বুদ্ধিবৃত্তির বিশৃঙ্খল অবস্থার ফল_ সেটা আগের ইরাকের না বর্তমান পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কতর্ৃক পরিচালিত ইরাকের সেটা অস্পষ্ট। কিন্তু, মানুষের বিভাজন সাধারণ কোনো ভুলের ফলাফল নয়। অনেকগুলো কারণ আছে সেটার, যেমন স্বার্থের দ্দন্দ্ব, প্রতিদ্বন্দ্বীদের মতা কাঠামো, সম্পদ লুণ্ঠনের প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। ইরাকের উত্তর-উপনিবেশিক কাঠামোতে জনসাধারণ কেবলমাত্র গোত্রগত এবং ধর্মীয় দিক থেকেই বিভাজিত নয়, সেখানে মজুদ তেলের মালিকানার প্রসঙ্গও জড়িত। সাদ্দামের শাসন পতনের অর্থ ইরাকের রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়া এবং পুরো দেশ জুড়ে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হওয়া। শিয়া, সুন্নী আর কুর্দিদের মধ্যে বিরোধ লেগেই আছে কেননা মানুষের আত্মপরিচয় তথা আইডেন্টিটি নিয়ে তাদের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। অরাজকতার বর্বর যুক্তির ফাঁদে পড়ে নিজেদের টিকে থাকার তাগিদে প্রজন্ম প্রজন্মান্তরে পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। এখন এই যুক্তিই চলে আসছে যে, এর সমাধান বিভক্তির মধ্যে, কিন্তু ইরাক ভেঙে ছোট ছোট স্থায়ী রাজ্যে বিভাজনের আগে আবার অসংখ্য মানুষ হত্যার ইতিহাস হবে, ঠিক যেমন ঘটেছিলো ইনডিয়া বিভাজনের সময়।
সেনের মতো একজন উদার যুক্তিবাদীর জন্য প্রবন্ধটি একটি বিশ্বাস থেকে উৎসরিত যে, আইডেন্টিটির সংঘাত ভুল বিশ্বাসের ফল। তিনি মেনে নিতে পারেন না যে, এটা মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বার্লিনের মতে, যুক্তির ভুলের কারণে স্বাধীনতা এবং নিয়মকানুন ভেঙে পড়ে না। বাংলায় যারা দিনমজুর লোকটিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে, কিংবা যে মানুষগুলো পেত্রোগ্রাদে মুমূর্ষু মানুষটিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিলো তাদের কোনো ভুল নেই। তারা যা করেছে তা করেছে তাদের ভয় থেকে, তাদের হিংস্রতা থেকে। গ্রে বলেন, এসব নৃশংসতা মানুষের মধ্যকার অনেক গভীর বিষয়, সেনের কনসেপচুয়াল থেরাপি দিয়ে এসব দূর হবার নয়। এ সত্য যদি তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য মনে না হয়, তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আইডেন্টিটি নিয়ে পৃথিবীব্যাপি সহিংসতা দূরীকরণের বিষয়টা সেন যতোটা ব্যাপক গভীর ভাবছেন তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যাপক, অনেক গভীর।
বইটিতে আরো একটি বিষয়ে অমর্ত্য সেন জোর দিয়েছেন। সেটা হচ্ছে ঋণ স্বীকার করা। বিভিন্ন কারণে পূর্ব পশ্চিমের কাছে ঋণী, পশ্চিমও অনেক বিষয়ে পুর্বের কাছে ঋণী। তাছাড়া, এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলো সবাই জানে এক কালচার থেকে এসেছে বস্তুত এসেছে অন্য কালচার থেকে। একেবারেই ইনডিয়ান ডিশ মনে হলেও, ভিনডালু এসেছে মূলত পতর্ুগালের মরিচ থেকে; জ্যামিতিতে সাইন ফাংশনের উৎপত্তি ইওরোপে ভাবা হলেও, এটার উৎপত্তি আসলে ইনডিয়ায়।
আইডেন্টিটি প্রশ্নে অমর্ত্য সেন লেখেন, "যখন কিগালির একজন হুতু দিনমজুরকে জোর করে ভাবানো হচ্ছে যে সে কেবলমাত্র হুতু এবং তাতসিসদের হত্যা করা তার দায়িত্ব... তখনো সে কিন্তু কেবল হুতু নয়, সে একজন কিগালিয়ান, একজন রুয়ান্ডান, একজন আফ্রিকান, একজন দিনমজুর এবং একজন মানুষ।" তিনি আরো লেখেন, "আমাদের স্বাভাবিক জীবদ্দশাতেই আমাদেরকে অনেকগুরো গ্রুপের সদস্য হিসাবে পাই।" নিউইয়র্ক টাইমসের রিভিউয়ার কেনজি ইয়োশিনো প্রশ্ন তোলেন, বাক্যটির মধ্যে উপলব্ধির যে বিষয়টি সেখানেই এটার শক্তি, কিন্তু বাক্যটির দুর্বলতা এই যে, এর মধ্যে ব্যাখ্যা নেই কেন এরকম ঘটে। এবং আমরা সে সম্পর্কে অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছি। এমনকি তিনি এও প্রশ্ন করেন, এটা কি এ-কারণে যে, আইডেন্টিটির সমস্যা যে পরিমাণ সহিংসতা ঘটায়, সহিংসতাও কি সে পরিমাণ আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ঘটায়?

আশিস কুমার সেনের নেয়া অমর্ত্য সেনের সাক্ষাৎকার

আশিস কুমার সেন: বিশ্বশক্তি হিসাবে ইনডিয়াকে যে পর্যায়ে বিবেচনা করা হচ্ছে, আপনার কি মনে হয় এটা একটু বাড়াবাড়ি?
অমর্ত্য সেন: না, এখনো পর্যন্ত এটাকে খুব বেশি অতিমূল্যায়ন বলা যাবে না, কেননা আগে বরং একটু কম মূল্যায়ন করা হয়েছে (উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, দশকের পর দশক ধরে গভীর পর্যবেণ শেষে চীন খুব সমপ্রতি ইনডিয়াকে সিরিয়াসলি বিবেচনায় আনতে শুরু করেছে)। কিন্তু বৈশ্বিক প্রোপটে ইনডিয়ার উত্থান অনকে ইনডিয়ানদের জন্যই বেশ সুখকর, আর এর ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের আত্মপ্রসাদ বা পূর্ণতার অনুভূতি জন্ম নিলে সেটা বিপজ্জনক হবে। আমাদের উচিত সেটা সতর্কতার সাথে বর্জন করা।
আশিস কুমার সেন: ইনডিয়ার এই পরিবর্তনের কারণ কী ধারণা করা যেতে পারে? ইনডিয়া ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে কাজ করছে বলে হচ্ছে? নাকি আগের সমাজতান্ত্রিক ইতিহাস মুছে ফেলে আমেরিকার মতো বিশ্বশক্তি কতর্ৃক অনুমোদিত অর্থনৈতিক কাঠামো গ্রহণ করার জন্য?
অমর্ত্য সেন: ইনডিয়ার সমাজতান্ত্রিক অতীত বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, আমি নিশ্চিত নই। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সার্বজনীন প্রাথমিক শিা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, ভূমি অধ্যাদেশ পুনর্নিমাণের মতো মুখ্য অর্জনগুলো যে দেশটার হয়নি তাকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় না। অন্য অনেক েেত্র ব্যর্থতা থাকলেও রাশিয়া, চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম বা অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে এসব েেত্র প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। এখন ইনডিয়ার 'সমাজতন্ত্র' বলতে আপনি যদি অতিবিস্তৃত আত্মঘাতী রাজ্যভিত্তিক লাইসেন্স পদ্ধতি, বা শ্বাসরুদ্ধকারী স্থানীয় উদ্যোগ কিংবা মডার্ন ইন্ডাস্ট্রি বা মডার্ন সার্ভিস সেক্টরের উন্নতি বোঝান, তবে এই পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ বলা যায়। অবশ্য সেেেত্র সাম্যবাদী মানবতাবাদ পরিহার করারও তেমন প্রয়োজন নেই, যা জওররলাল নেহরু বা ইনডিয়ার স্বাধীনতার পথপ্রদর্শনের েেত্র অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার কেন্দ্র ছিলো।
বাস্তবতা গভীরভাবে পর্যবেণ করে ভুল পলিসি শোধরানো দেশের নিজের জন্যই উপকারী। কিন্তু লাইসেন্স রাজ উঠিয়ে নেয়ার ফলে বাইরে থেকেও প্রশংসা পাওয়া গেছে ভালোই, এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। আমেরিকা ইনডিয়ার প্রতি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে মূলত এই কারণে যে, কোল্ড ওয়ারে ইনডিয়া জোটে যোগ দেয়নি কেননা আমেরিকা সেটা চায়নি। বিশ্ব-রাজনীতির নিজের বৈশিষ্ট্যই পাল্টে গেছে এখন_ এই পরিবর্তন কেবল ইনডিয়ার জন্য প্রযোজ্য এমন নয়।
আশিস কুমার সেন: ইনডিয়ার পরিবর্তনের পেছনে তার ডায়াসপোরার অর্জনকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়, বিশেষত আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে। ইনডিয়ার জন্য এই ডায়াসপোরার অর্থ কী? নিজের গৌরবের জন্য ইনডিয়ার কি আনন্দ করা উচিত? 
অমর্ত্য সেন: ইনডিয়ার বৃহত্তর স্বার্থে এবং নিজের ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্টদের মর্যাদা উপলব্ধির েেত্র বিদেশের মাটিতে ডায়াসপোরার বিজয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শুরু থেকেই এই অর্জন ইনডিয়া উপভোগ করেছে, কিন্তু একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর যেমন, দেশের ভেতরে দারিদ্র্য, নিররতা বা নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা দূরীকরণের েেত্র ডায়াসপোরার ভূমিকা যতখানি হওয়া উচিত ততটা হয়নি। এটাও মনে রাখা উচিত, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধরে রাখা, তুলনামূলকভাবে মুক্ত প্রচারমাধ্যম, বহুদলীয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়মিত নির্বাচন হওয়া এবং সরব একটা সিভিল সোসাইটিও বহির্বিশ্বে ডায়াসপোরার সম্মান এবং গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করেছে।
প্রাথমিক শিা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মতো বেসিক সেক্টরে ঘরোয়া অনেক ব্যর্থতার পরও, সমৃদ্ধ গণতন্ত্র, উচ্চশিা এবং টেকনিক্যাল শিায় ইনডিয়ার প্রভূত উন্নতি বৈশ্বিক সিভিল সোসাইটিতে ডায়াসপোরার প্রবেশ সহজ করেছে। এটাও খাটো করে দেখার মতো বিষয় নয়।
আশিস কুমার সেন: শহুরে মধ্যবিত্ত ইনডিয়ানদের জীবনপদ্ধতি অনেকটাই তাদের পশ্চিমা কাউন্টারপার্টদের মতো। ঘরোয়া জিনিসপত্র থেকে শুরু করে খাবার কিংবা কালচারাল দিক থেকেও পশ্চিমাদের সঙ্গে তাদের মিল খুব বেশি। ইনডিয়ানরা কি ক্রমেই তাদের পশ্চিমা সহোদরদের মতো হয়ে যাচ্ছে। যদি তা-ই হয়, তবে এর তিকর দিকগুলো কী?
অমর্ত্য সেন: বিশ্বব্যাপি এখন সবার সঙ্গে সবার এতো বেশি ইন্টারঅ্যাকশন হচ্ছে যে, ভোগের দিক থেকে সারা পৃথিবীর ধনীরাই প্রায় একইরকম। এটা কেবল ইনডিয়ায় নয়, রিও, অ্যাকরা. জোহানেসবার্গ থেকে শুরু করে মুম্বাই বা সাংহাইতেও একইরকম।
সহজ কথায় একে যুগের রীতি বলা যায়। খ্রিস্টের জন্মেরও আগে, চীন থেকে লাক্সারি অনেক দ্রব্য যেমন চাইনিজ সিল্ক, চাইনিজ ফল, চাইনিজ কসমেটিকস ইত্যাদি আমদানির ফলে ইনডিয়ান উচ্চবিত্তের ভোগবিলাস কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, সেবিষয়ে আমি আমার 'দ্য আর্গুমেন্টেটিভ ইনডিয়ান' বইতে আলোচনা করেছিলাম। ইনডিয়ান প্রাচীন সাহিত্যকর্মেও এরকম বর্ণনা আছে। হয়তো এই ভোগের বিষয়টা সমসাময়িককালে বড় ব্যাপ্তি নিয়ে হচ্ছে।
ভোগ্যপণ্যের পেছনে উচ্চবিত্তরা কী পরিমাণ খরচ করছে সেটা কিন্তু সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে ধনী-গরীবের অর্থনৈতিক অবস্থানের ব্যবধান খুব বেশি, এবং সে ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। চীনের মতো দ্রুতগতিতে না হলেও, সমপ্রতি এ ব্যবধান বেশ ভালোই বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ব্যবধান এবং ব্যবধানের বৃদ্ধি আমাদের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় আনা উচিত।
আশিস কুমার সেন: বিশ্বশক্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে চাইলেও ইনডিয়ার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সুচক এখনো অনেক নীচে। বিশেষত মানবিক উন্নয়নের দিক থেকে ইনডিয়া অনেক পিছিয়ে আছে। ইনডিয়া কি এসবকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে? আর ইনডিয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিম্নবিত্তের ভবিষ্যত কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
অমর্ত্য সেন: ইনডিয়ার মানবিক উন্নয়নের নিম্নমান নিয়ে আপনি ঠিকই ধরেছেন। এটা খুবই পুরনো সমস্যা, ফলে এখন ইনডিয়া কম গুরুত্ব দিচ্ছে বিষয়টা এমন নয়।
পঞ্চাশ ষাটের দশকে নিররতা বা বেসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আমি যেসব লিখেছি, সেসব দেখলে হতাশ না হওয়ার উপায় নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওসব সমস্যা আজো প্রাসঙ্গিক। সেগুলো দূরীভূত হলে আমিই সবচেয়ে বেশি খুশী হতাম। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বা মানবিক শক্তি উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার অনেক কাজ করছে। তবে আরো অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু সেগুলো ইনডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির প্রসার, বিশ্ব-অর্থনীতির যোগাযোগের বিস্তৃতি, টেকনিক্যাল সেক্টরের উন্নতি ইত্যাদি কমিয়ে বা সংকুচিত করে নয়। অর্থনৈতিক দুরবস্থা দূরীকরণে এসবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এটা সত্য, কিন্তু কেবল এরাই ইনডিয়ার মানবসম্পদ উন্নয়নের বাধা কাটিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট নয়। 
আশিস কুমার সেন: 9 সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর ইনডিয়ার গণতন্ত্র বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হলেও, গত 10-15 বছর শাসনব্যবস্থার অস্থায়িত্ব, ধমর্ীয় মৌলবাদের উত্থান, এবং কংগ্রেসের মতো মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নিম্নবর্ণের মানুষদের চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আইডেন্টিটির পলিটিক্সের মূল শক্তির ব্যাখ্যা কী? আপনার কি মনে হয়, এটা গ্লোবালাইজেশনের ফল? 
অমর্ত্য সেন: গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটে এটা, তবে গ্লোবালাইজেশনের ফল বলে আমার মনে হয় না। বরং সফল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কারণে, দারিদ্র্য বা সমাজের পশ্চাদপদতার বিষয়গুলোকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্তভর্ূক্ত করার মাধ্যমে এ সমস্যাগুলোর সফল সমাধান করা সম্ভব। আমাদের মধ্যকার পাথ্যর্ক্য এবং দ্বন্দ্বগুলোকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে, মানুষে মানুষে সম্পর্কের উপাদানগুলোকে উপো করে, মানুষের আইডেন্টিটির বিভেদের কলুষিত চেষ্টা সবসময়ই এই পৃথিবীতে মহামারির মতো লেগে আছে। বিভাজনের পদ্ধতি হয়তো পাল্টেছে, কিন্তু এখনো আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বৃটিশ জার্মান আর ফরাসীদের মধ্যে জাতিগত বিভাজন সৃষ্টির মাধ্যমে হয়েছে। আর এখন সে বিভাজনের পদ্ধতির প্রধান হাতিয়ার ধমর্ীয় বিভাজন।
আপনি ঠিকই ধরেছেন, সামাজিক সাম্যতার আন্দোলনে নিম্নবর্গের মানুষদের আন্দোলন একটা নির্দিষ্ট প্লাটফর্মের ভিত্তিতে না হয়ে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হওয়াটা নেগেটিভ ভূমিকা রাখছে। শোষিত শ্রেণীর মধ্যে বিভাজনের মাধ্যমে সহিংস বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হতে না দিয়ে বরং যৌথভাবে অর্থনৈতিক দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য, জেন্ডার বৈষম্য ইত্যাদি দূরীকরণ সমাজের কাছে দায়বদ্ধ রাজনৈতিক নেতাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। 
আশিস কুমার সেন: গ্লোবালাইজেশনের যুগে ইংরেজি শিাকে দতার মাপকাঠি বিবেচনা করা হয়। এমনকি গ্রামের জনগণেরও একটা বড় অংশ ইংরেজি মাধমে শিা গ্রহণ করতে চায়। এ প্রবণতার বিপজ্জনক দিকটা কী বলে আপনার মনে হয়?
অমর্ত্য সেন: এটা ঠিক, গ্লোবালাইজেশন ইংরেজিকেই বিশ্ব যোগাযোগের একমাত্র বাহন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। আমি অবশ্য ইংরেজি শিার প্রতি এ প্রবণতাকে মোটেও পশ্চাদপদতা মনে করি না। এটা যেমন পুরো বিশ্বের সঙ্গে ইনডিয়ানদের যোগাযোগ সহজ করবে, তেমনি ইনডিয়াতেই ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষিতে টেকনিক্যাল বা পলিটিক্যাল ভাষার যোগাযোগে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ইংরেজির প্রতি আগ্রহ যদি ইনডিয়ার নিজস্ব শক্তিশালী ভাষা, সাহিত্য বা ইতিহাসকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করার জন্য হয়, তবে সেটা নিঃসন্দেহে তির কারণ হবে। কিন্তু এখনকার ঘটনা সেরকম নয়, এবং ভবিষ্যতেও এরকম ঝুকি আসলে সচেতনভাবে সেটা আমরা এড়িয়ে যেতে পারবো। ইনডিয়ার নিজস্ব কালচার এবং ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী হয়েও একইসঙ্গে বাকি পৃথিবীর কালচার বা ঐতিহ্যের প্রতিও আগ্রহী হওয়া সম্ভব, যেটা রবীন্দ্রনাথ ব্যাখ্যা করেছিলেন অসাধারণ দতার সঙ্গে। দাসত্ব আর হীন মনোবৃত্তি পরিহার করে নিজেদের পায়ে দাড়িয়ে পুরো পৃধিবীর স্বার্থ চিন্তা করলে এবং তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলে 'স্থানীয়' এবং 'আন্তর্জাতিক'-এর দ্বন্দ্ব ঘুচে যাবে।
তবে অন্য ভাষায় প্রকাশিত শোষিত শ্রেণীর কণ্ঠ যদি ইংরেজি ভাষা অবরোধের সৃষ্টি করে তবে সেটা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। ভাষাগত বিভাজনও অর্থনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। এ সমস্যাকে অপরিহার্য সমস্যা হিসাবে না দেখে দ মানবিক সরকারি পলিসি দিয়ে সফলভাবে সমাধান করা সম্ভব।
আশিস কুমার সেন: ইনডিয়া কী পরিমাণ মতা অর্জন করুক আপনি চান?
অমর্ত্য সেন: মতাকে আমি উদ্ধারকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করি না। মতাহীন এবং মতাশীলদের মধ্যে বিভাজনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে মতা। ইনডিয়া পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘদিন মতাহীনদের দলভূক্ত ছিলো, তাই আমি চাই না সে মতার চর্চা করে বিপরীতদের দলভূক্ত হোক। নিউকিয়ার শক্তি অর্জন বা মিসাইল বানানোর মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় মতা আসবে না, বরং পৃথিবীতে বিরাজমান অসংখ্য সমস্যা সমাধানে আমাদের দতার মধ্য দিয়েই সেটা অর্জিত হবে। আক্রমণকারী সহিংস সেনাবাহিনীর মধ্য দিয়ে গালভারী গণতন্ত্রের কথায় নয়, বরং সত্যিকার গণতন্ত্রের চর্চার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে, এবং সেকু্যলারিজমের চর্চা দিয়ে এই পৃথিবীকে আমাদের অনেক কিছু দেয়ার আছে। বর্তমান বিশৃঙ্খল পৃথিবীতে এ অবদান উপেনীয় নয়। আমরা যে সন্দিগ্ন পৃথিবীতে বাস করছি সেখানে ইনডিয়া যদি সত্যিই উৎকৃষ্ট বিশ্বশক্তির আসন চায়, তবে ইনডিয়ার প েবৃহত্তর কণ্ঠস্বর নিঃসন্দেহে একটা বিরাট কাজরে কাজ হবে।
মতার আরো একটা দিকও আছে। ভূমিহীন দিনমজুর, নিষ্পেষিত গৃহকতর্ীদের মতো উপেতি জনগোষ্ঠির মতায়ন নিঃসন্দেহে পজিটিভ ভূমিকা রাখবে। আমরা যদি বৈষম্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হই, তবে মতার বৈষম্যও আমাদের চিন্তিত করবে। আর ইনডিয়ায় এসব মতার বৈষম্য কমিয়ে আনার প্রয়াসকে যদি ইনডিয়ার সামগ্রিক মতায়ন ভাবা হয়, তাহলে সত্যি সত্যিই আমরা চাই, ইনডিয়া আরো মতাশীল হোক। আরো বিশদভাবে এবং খুঁটিয়ে দেখার দরকার আছে, আমরা আসলে কী মতা চাই, কোনে দৃষ্টিকোণ থেকে সেই মতা, এবং সে মতা আমরা আসলে কী করতে চাই। বেশি মতাশীল হওয়ার মধ্যে বিশেষ কোনো গুণ নেই।

 

প্রকাশ করা হয়েছে: গদ্য  বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০ |বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...

http://www.somewhereinblog.net/blog/aunarjoblog/18799


  1. Amartya Sen - Wikipedia, the free encyclopedia

    Amartya Sen, CH (born 3 November 1933) is an Indian philosopher and ... He is currently the Thomas W. Lamont University Professor and Professor of ...
  2. [PDF] 

    Sen's Entitlement Approach: Critiques and Counter-critiques

    ফাইলের ধরণ: PDF/Adobe Acrobat - দ্রুত দর্শন
    It is now 20 years since Amartya Sen published Poverty and Famines, and a ...literature, and partly to evaluate the extent to which Sen anticipated his critics and ......Devereux, S. & Singer, H. (1999) A tribute to Professor Amartya Sen on the ...
  3. Muhith denies naming Amartya Sen in criticism of - Financial ...

    Muhith denies naming Amartya Sen in criticism of Dr Yunus. Published : Sunday, 11 November 2012. FE Report. Finance Minister AMA Muhith disclaimed on ...
  4. [RTF] 

    Critique of Amartya Sen's argument on Democracy and Famine ...

    ফাইলের ধরণ: Rich Text Format - HTML হিসেবে দেখাও
    In much of his writings on poverty, famines, and malnutrition, Amartya Sen argues that Democracy is the best way to avoid famines partly because of its ability to ...
  5. [PDF] 

    The Contributions of Professor Amartya Sen in the - LSE Research ...

    ফাইলের ধরণ: PDF/Adobe Acrobat - দ্রুত দর্শন
    The Contributions of Professor Amartya Sen in the Field of Human .... It sets out Sen'scritique of standard frameworks in theoretical and empirical economics that ...
  6. [PDF] 

    The Contributions of Amartya Sen to Welfare Economics

    ফাইলের ধরণ: PDF/Adobe Acrobat
    Equally, I do not consider the breadth of definition of ``consequences'' and do not address the critique of consequen- tialism. The contributions of Amartya Sen to ...
  7. Amartya Sen - Autobiography

    Amartya Sen I was born in a University campus and seem to have lived all my life in one campus or another. My family is from Dhaka - now the capital of ...
  8. [PDF] 

    India: A Defense and a Critique by Prof - Indian Institute of ...

    ফাইলের ধরণ: PDF/Adobe Acrobat - দ্রুত দর্শন
    ৫ জানুয়ারী, ২০১৩ – India: A Defense and a Critique. Day & Date : ... About the Speaker: Professor Amartya Sen is Lamont University Professor, and Professor of ...
  9. [PDF] 

    Equality of What?

    www.uv.es/~mperezs/intpoleco/.../Sen%20Equaliy%20of%20what.pd...
    ফাইলের ধরণ: PDF/Adobe Acrobat - দ্রুত দর্শন
    AMARTYA SEN is Drummond Professor of Political Econ- omy at Oxford ... ways of grounding such a criticism, aside from just checking its direct appeal to moral ...
  10. A fraternal argument with Dr Amartya Sen | Business Standard

    ১৬ আগস্ট, ২০০৯ – Professor Amartya Sen has recently reiterated his criticism of the Left's political practice in India. Dr Sen is quoted to have said: "I was ...

অমর্ত্য সেন ও তাঁর বাংলাদেশ ভাবনা

04 November 2012, Sunday


অমর্ত্য সেন





























































































































































































উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অমর্ত্য সেন
জন্মনভেম্বর ৩, ১৯৩৩ (বয়স ৭৯)
শান্তিনিকেতনপশ্চিম বঙ্গ,ভারত
বাসস্থানযুক্তরাষ্ট্র
জাতীয়তাভারতবাংলাদেশ[১]
ক্ষেত্রঅর্থনীতি
প্রতিষ্ঠানহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স
দিল্লী স্কুল অফ ইকোনমিক্স
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া, বার্কলে
প্রাক্তন ছাত্রট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ(পিএইচ.ডি.)(বি.এ.)
প্রেসিডেন্সি কলেজ (বি.এ.)
যেজন্য পরিচিতজনকল্যাণ অর্থনীতি
মানব উন্নয়ন তত্ত্ব
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারঅর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার(১৯৯৮)
ভারতরত্ন (১৯৯৯)

অমর্ত্য সেন (জন্ম ৩রা নভেম্বর১৯৩৩) একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় বাঙালীঅর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক। তিনি দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে ব্যাংক অফ সুইডেন পুরস্কার (যা অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার হিসেবে পরিচিত) লাভ করেন।

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]শৈশব

অমর্ত্য সেন পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ঢাকার ওয়ারীতে।

[সম্পাদনা]শিক্ষাজীবন

১৯৪১ সালে অমর্ত্য সেন তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন সেইন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয় এ। দেশ ভাগের পরে তারা ভারতে চলে গেলে অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে তিনিপ্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঐ বছরই তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে পড়তে যান। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

[সম্পাদনা]শিক্ষকতা

অমর্ত্য সেন মাত্র ২৩ বছর বয়সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এর অর্থনীতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এবং পূর্ণ অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৬০-৬১ সালে ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি,স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট বার্কলেতে ভিজিটিং অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যামন্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৯৭২ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স এ অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। অমর্ত্য সেনের লেখা গ্রন্থাবলী ৩০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

[সম্পাদনা]সম্মাননা

অমর্ত্য সেন ৯০টিরও বেশি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন।[২]


.


এছাড়াও, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১১ সালে অমর্ত্য সেনকে বাংলা ভাষার ধারক ও বাহক হিসেবে বাংলা একাডেমী তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।[৪]

[সম্পাদনা]প্রকাশিত প্রধান গ্রন্থাবলি

  • Sen, Amartya, Collective Choice and Social Welfare, San Francisco, Holden-Day, 1970
  • Sen, Amartya, On Economic Inequality, New York, Norton, 1973
  • Sen, Amartya, Poverty and Famines : An Essay on Entitlements and Deprivation, Oxford, Clarendon Press, 1982
  • Sen, Amartya, Choice, Welfare and Measurement, Oxford, Basil Blackwell, 1982
  • Sen, Amartya, Food Economics and Entitlements, Helsinki, Wider Working Paper 1, 1986
  • Sen, Amartya, On Ethics and Economics, Oxford, Basil Blackwell, 1987.
  • Drèze, Jean and Sen, Amartya, Hunger and Public Action. Oxford: Clarendon Press. 1989.
  • Sen, Amartya, More Than 100 Million Women Are Missing. New York Review of Books, 1990.
  • Sen, Amartya, Inequality Reexamined, Oxford, Oxford University Press, 1992.
  • Nussbaum, Martha, and Sen, Amartya. The Quality of Life. Oxford: Clarendon Press, 1993
  • Sen, Amartya, Reason Before Identity (The Romanes Lecture for 1998), Oxford, Oxford University Press, 1999. ISBN 0-19-951389-9
  • Sen, Amartya, Development as Freedom, Oxford, Oxford University Press, 1999 Review
  • Sen, Amartya, Rationality and Freedom, Harvard, Harvard Belknap Press, 2002
  • Sen, Amartya, The Argumentative Indian, London: Allen Lane, 2005.
  • Sen, Amartya, Identity and Violence.The Illusion of Destiny New York W&W Norton.

[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র


সাক্ষাৎকার ...
সামাজিক উন্নয়নের সম্ভাবনা
অনেক, অভাব যথার্থ সুচিন্তার
'আমি বরাবরই মনে করেছি, যে খারাপ জিনিসগুলো ঘটে, তার অধিকাংশই চিন্তার অভাবে ঘটে,
লোকে খুব পাজি, এই কারণে ঘটে না। পাজি লোক যে নেই তা আমি বলছি না, কিন্তু তার চেয়েও
অনেক বেশি ক্ষতিকর হচ্ছে চিন্তাশূন্যতা।' একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন

সংসদের আসন্ন অধিবেশনে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিল পাশ হতে পারে। আপনি সম্প্রতি বলেছেন, এই বিল যে আনা হচ্ছে, সেটাই একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু স্বাধীনতার পঁয়ষট্টি বছর পরে এই আইন অনেক দেরি হল না কি?

দেরি হল, ঠিকই। কিন্তু সমস্যাটার তো অনেক ক'টা রূপ আছে। কিছু কিছু উদ্যোগ, যেমন রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম, তাতে লোকে কাজ পাচ্ছে, তাতে রোজগার হবে, তা দিয়ে খাবার কিনতে পারবে, সুতরাং এই প্রকল্পের সঙ্গেও তো খাদ্য নিরাপত্তার যোগ আছে। প্রশ্ন হল, দারিদ্র নিয়ে কী কী করা হচ্ছে। দারিদ্রের একটা বড় রূপ হল খাদ্যাভাব, ক্ষুধার্ত থাকা। তার থেকে যে সমস্ত দৈহিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে, সেগুলো নিয়ে ভাবা দরকার। এই পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য নিরাপত্তা বিলটিতে ক্ষুধার ওপর যেমন স্পষ্ট ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে, এর আগের কিছু প্রকল্পের সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার যোগ থাকলেও সেখানে হয়তো ততটা স্পষ্ট ভাবে সেই জোরটা দেওয়া হয়নি। সে দিক থেকে এটা নিশ্চিত ভাবেই একটা বড় পদক্ষেপ। আর নানা দিক থেকে যখন বলা হচ্ছে সরকারের টাকার ঘাটতি আছে, এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এত টাকা বাড়তি খরচ করার সামর্থ্য সরকারের আছে কি না সেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তখন এই আইনের উদ্যোগটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া জানিয়েছেন, বাজেট ঘাটতি আছে বলে খাদ্য নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় খরচ করা যাবে না এটা কখনওই বলা চলে না।
মন্টেক, বা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু এ কথা বরাবরই বলে আসছেন। সরকার তো নানা খাতে খরচ করে থাকেন। এখন খাদ্য বাবদ ভর্তুকি দিতে সরকারের খরচ পড়ে বোধহয় সত্তর হাজার কোটি টাকার মতো। খাদ্য নিরাপত্তার নতুন পরিকল্পনা চালু হলে খরচটা সম্ভবত এক লক্ষ কোটি টাকার কিছু বেশি হবে। বাড়তি খরচটা তত প্রচণ্ড বেশি নয়। একটা অন্য হিসেব পাশাপাশি দেখতে পারি। এখন ডিজেলে ভর্তুকি দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ হয় বোধহয় একানব্বই হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, ডিজেলে ভর্তুকি তুলে দিতে পারলে তো একানব্বই হাজার কোটি টাকা উঠেই রয়েছে বলা যায়। ডিজেলে পুরো ভর্তুকিটা এক বারে তুলে দেওয়া সম্ভব বা সঙ্গত কি না, সেটা নিশ্চয়ই বিচারসাপেক্ষ। কিন্তু যেহেতু সরকারের অর্থাভাব আছে, সুতরাং মানতেই হবে, ডিজেলে ভর্তুকি এবং খাদ্য ভর্তুকির মধ্যে একটা রেষারেষি আছে। ডিজেলের ভর্তুকি থেকে যাঁরা উপকার পান তাঁদের অনেককেই নিশ্চয় ধনী বলা যাবে না, কিন্তু যাঁরা খেতে পাচ্ছেন না, সে-রকম পরিবারের তুলনায় তাঁদের অবস্থা যে ভাল, সেটা তো বলতেই হবে। সুতরাং আমাদের বুদ্ধি এবং হৃদয় দিয়ে বিবেচনা করতে হবে কোন খাতে কতটা ভর্তুকি দেওয়া দরকার। এখন খাদ্য ভর্তুকি দিতে যে খরচ হয় তার মধ্যে নিশ্চয়ই নানা ভুলত্রুটি আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলাই যায়, একটা আর্থিক নিয়োগের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই মন্টেক বলেছেন যে, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য টাকা নেই বললে খুব ভুল বলা হবে।
এই যে 'টাকা নেই' এটা তো বিজনেস মিডিয়া প্রবল ভাবে প্রচার করছে, সব ক'টা কাগজে বলছে যে, এত খরচ চালানো যাবে কী করে। তাদের মতে, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এত বেশি খরচের পরিকল্পনাটা বাজেটের দিক থেকে ভয়ানক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। এ প্রশ্ন ঠিক ভাবে বিচার করতে গেলে দেখতে হবে, কী কী খাতে সরকার বেশি টাকা খরচ করছে। আর তা হলেই দেখা যাবে, অন্তত পাঁচ-ছ'টা জিনিস আছে, বুদ্ধি-বিবেচনা অনুসারে যার একটা বা কয়েকটা খাতে বাজেট কাটলে খাদ্য নিরাপত্তার টাকাটা উঠে আসবে।

প্রচার ও বাস্তব

'বিজনেস মিডিয়াই খুব শোরগোল তুলে প্রচার করেছে যে, একে দেশের গ্রোথ কমে গেছে,
তার ওপরে এই সব 'আজেবাজে' খরচ করলে দেশের খুব সমস্যা হবে। কিন্তু মানবকল্যাণের
জন্য এবং অর্থনৈতিক প্রসারের জন্যও এই সরকারি প্রচেষ্টার খুবই প্রয়োজন।'প্রতীচী ইনস্টিটিউট,
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলকাতা ক্যাম্পাস। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

খাদ্য নিরাপত্তা বিলটিতে শিশুদের পুষ্টির ব্যবস্থায় নানা ঘাটতি আছে। এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি আলোচনাসভায় আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ অভিমত প্রকাশ করেছেন। শিশুদের পুষ্টির ক্ষেত্রে তো নানা দিক থেকেই ঘাটতি আছে। যেমন স্যানিটেশন-এর পর্যাপ্ত আয়োজন নেই বলেও তো...

নিশ্চয়ই, স্যানিটেশন এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন আরও অনেকগুলো জিনিসই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকগুলো বিষয়েই করণীয় অনেক। তবে আমি এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা আইনটির বিষয়েই বলেছিলাম। শিশুদের পুষ্টির জন্য কী কী করা উচিত, সে বিষয়ে আমাদের দেশে অনেক কিছুই বলা যায়। যেমন সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, প্রত্যেকটি শিশুর পর্যাপ্ত খাওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। এবং আমাদের ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট স্কিম বা আই সি ডি এস-এ বলা হয়েছে, সদ্যোজাত শিশু থেকে শুরু করে বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য মিড ডে মিল প্রকল্প আছে। এ রকম নানা ধরনের কয়েকটা আয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই যে আইনটা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, এতে খাদ্য নিরাপত্তার অনেক ক'টা দিককে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
তার সঙ্গে আর একটা সমস্যা যোগ হয়েছে। একেবারে খুব ছোট যারা, তাদের বাদ দেওয়া যেতে পারে কি না, সেটা নিয়ে ভাবনা চলছে। বিল-এ তাদের বাদ দেওয়া হয়নি, কিন্তু যে স্ট্যান্ডিং কমিটি বিলটির পর্যালোচনা করেছেন, তাঁরা বলেছেন, খুব ছোট শিশুদের এই আইনের আওতা থেকে বাদ দিয়ে তার বদলে প্রসূতিদের পাঁচ কিলোগ্রাম করে বাড়তি খাদ্যশস্য দেওয়া হোক। প্রসূতি মেয়েদের বাড়তি খাবার দিলে তো ভালই, কিন্তু তার ফলে তো আর এক-বছর দু-বছরের বাচ্চার খাদ্যাভাব চলে যাচ্ছে না!
সুতরাং ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই রকম যে, সুপ্রিম কোর্ট যা বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা বিল তার থেকে এক ধাপ কম, আবার স্ট্যান্ডিং কমিটি তার থেকে আরও এক ধাপ কম। এখন এই দুটোই যে বাচ্চাদের ওপর আঘাত দিচ্ছে, সারা জীবন ধরে তাদের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মানের ওপর এর প্রভাব পড়বে।
এই প্রসঙ্গে চিনের অভিজ্ঞতা প্রাসঙ্গিক। সে কথায় যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে জেমস হেক্ম্যানের কথা ওঠে। হেক্ম্যান শিকাগো ইউনিভার্সিটির নামজাদা অর্থনীতিবিদ, নোবেল প্রাইজও পেয়েছেন। খাওয়াদাওয়া, স্বাস্থ্য, ইত্যাদি সব ব্যাপারে বাচ্চাদের যদি প্রথম থেকে ঘাটতি থাকে, তা হলে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে কতটা ব্যাঘাত ঘটে, সেটা তিনি দেখিয়েছেন। এখন, চিনে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, চায়না ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন সি ডি আর এফ। ওঁরা জেমস হেক্ম্যান এবং আমাকে ওঁদের সিনিয়র অ্যাডভাইজর হতে অনুরোধ করেছিলেন এবং আমরা তাতে সম্মত হয়েছিলাম। বাচ্চাদের পুষ্টি চিনে ভারতের থেকে অনেক ভাল অবস্থায় আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ওদের কিছু কিছু ঘাটতি আছে, সেগুলো কী ভাবে পূরণ করা যায়, ওঁরা সেটাই জানতে চাইছিলেন। এখানে বলি, সাংহাইয়ের মতো কিছু কিছু জায়গায় স্কুলে খাবার দেওয়া হয় বটে, কিন্তু চিনে সামগ্রিক ভাবে আমাদের দেশের মিড ডে মিল প্রকল্পের মতো কোনও ব্যবস্থা নেই। স্কুলের বয়স হওয়ার আগে বাচ্চাদের খাবার দেওয়ারও কোনও সিস্টেম্যাটিক ব্যবস্থা নেই। ওঁরা বললেন, এ বিষয়ে ভারতের, বিশেষ করে তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে যেখানে বাচ্চাদের পুষ্টির প্রকল্পগুলি ভাল কাজ করেছে, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সে নিয়ে অনেক আলোচনা হল।
যেটা লক্ষ করা দরকার সেটা হচ্ছে এই যে, চিনে বাচ্চাদের অপুষ্টি যে আমাদের দেশের চেয়ে কম, সেটা কোনও বিশেষ প্রকল্পের কারণে নয়। চিনে যে হারে মজুরি ও বেতন বেড়েছে, বিশেষ করে গত কুড়ি বছরে, সেটা ভারতের থেকে ছ'গুণ বেশি। একমাত্র সিভিল সার্ভেন্টদের বেতন ছাড়া আর কোনও ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারে চিনের সঙ্গে ভারতের তুলনা চলে না। আমাদের দেশে অর্থনীতির প্রগতি যে হারে হয়েছে, সাধারণ লোকের রোজগারের বৃদ্ধির হার তার কাছাকাছি নয়। অর্থাৎ, চিনে যে অপুষ্টি কম, তার কারণটা খুব 'ক্ল্যাসিকাল' অর্থনৈতিক প্রগতির সঙ্গে লোকের রোজগার বেড়েছে, ফলে তাঁরা বেশি খাবার কিনতে পেরেছেন, ফলে তাঁদের পুষ্টি বেড়েছে, ভারতে সেটা অনেক কম হয়েছে।
আরও নানা সমস্যা আছে। যেমন, টয়লেটের অভাব। ভারতে প্রায় অর্ধেক লোকের জন্য শৌচাগার নেই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, সামর্থ্য নেই। কিন্তু এর সঙ্গে যোগ করতে হবে পরিকল্পনার ত্রুটি যাঁরা বাইরে নানা জায়গায় কাজ করছেন, তাঁদের জন্য যথেষ্ট শৌচাগার তৈরি করা হয়নি। তা ছাড়া, বড় বড় শহরে, যেমন দিল্লি বা গুড়গাঁওয়ে, বহু বাড়ি তৈরি হচ্ছে যেখানে সার্ভেন্টস কোয়ার্টার্স আছে, কিন্তু গৃহকর্মীদের শৌচাগারের অত্যন্ত অভাব। আমার মতে, শহরের পরিকল্পনায় এটা একেবারেই অনুমোদন করা উচিত নয়। কত লোকের থাকার জায়গা হচ্ছে, ক'টা ঘর তৈরি হচ্ছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টয়লেট তৈরি করতে হবে, এ একেবারে আইন করে বেঁধে দেওয়া উচিত। ভারতে একমাত্র চণ্ডীগড়ে এই অভাবটি নেই, কারণ সেখানে কর্বুসিয়ের শহর তৈরির সময় এই প্রয়োজনের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ইউরোপেও এ ব্যাপারে অতীতে সমস্যা ছিল, ওরা সেটা দূর করে ফেলেছে রোজগার বেড়েছে বলেও, আবার সরকার নানা রকম নিয়ম জারি করেছে বলেও। চিনে গোড়া থেকেই এ দিকে নজর দেওয়া হয়েছে, ফলে সমস্যাটা অনেক কম। ভারতে একেবারেই নজর দেওয়া হয়নি।
সুতরাং, বাচ্চাদের অপুষ্টি, টয়লেটের অভাব, বা অন্য নানা অপ্রাপ্তির বিষয় বিবেচনা করার কারণ আছে বলে আমি মনে করি। তবে তা করতে গিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বিশেষ করে নজর দিতে হবে। এক দিকে, দেশের অর্থনীতির প্রগতি কতটা হচ্ছে; অন্য দিকে, সরকারি সাহায্য বা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কতটা কাজ করছে।
আর একটা ব্যাপার লক্ষ করা দরকার। চিনে মজুরি ও বেতন হু হু করে বেড়েছে, তার পাশাপাশি কিন্তু জাতীয় উৎপাদন ও আয়ের বৃদ্ধিও হয়েছে খুব দ্রুত। মজুরি বেশি বলে অর্থনীতির প্রগতিতে ব্যাঘাত ঘটছে, এমনটা একেবারেই বলা যাবে না।

রোজগার বাড়লে তো পুষ্টি ইত্যাদির কারণে মানুষের কর্মক্ষমতাও বাড়ে, অর্থনীতি বেশি উৎপাদনশীল হয়...
সেটাও আমার একটা বক্তব্য। এশিয়ান মডেল যেটাকে বলে জাপান থেকে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, তার পর চিন তার ধরনটাই হল: এক দিকে মজুরি বাড়ানো, অন্য দিকে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা, যার ফলে উৎপাদনশীলতা এমন হারে বাড়তে থাকবে যাতে অর্থনীতির প্রসার দ্রুত এবং স্থায়ী হয়। জাপানে ১৮৬০-এর দশকে মেজি রেস্টোরেশন-এর সময় থেকে এ বিষয়ে চিন্তা করা হয়েছিল। সেই সময় ওঁদের গ্রামাঞ্চলে সরকার যত খরচ করত, তার শতকরা ৪৫ থেকে ৪৭ ভাগ বরাদ্দ হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষার জন্য। ওঁরা ঠিক করেছিলেন, এক ধাক্কায় সকলের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ১৮৬৮'তে শুরু করলেন, ১৯০৫-এর মধ্যে নিরক্ষরতা দূর হল। তখন ওখানে সেনসাস ছিল না, কিন্তু সেনাবাহিনীতে লোক নেওয়ার সময় দেখা হত, প্রার্থীরা সাক্ষর কি না। আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আসা প্রায় অর্ধেক লোক নিরক্ষর ছিলেন, ১৯০৫-এ দেখা গেল প্রায় সবাই সাক্ষর। ১৯১৩'র মধ্যে হিসেব পাওয়া গেল জাপানে অন্য যে কোনও দেশের চেয়ে বেশি বই ছাপা হচ্ছে, আমেরিকার দ্বিগুণেরও বেশি। এমন পরিবর্তনটা হল শিক্ষায় এতটা জোর দেওয়ার ফলেই। পাশাপাশি স্বাস্থ্যতেও খুবই নজর দেওয়া হয়েছিল। এগুলোয় আমরা একেবারেই জোর দিইনি। আমাদের প্রধান সমস্যা সেখানেই। শিক্ষা-প্রচেষ্টার অভাব, স্বাস্থ্য-প্রচেষ্টারও।

খাদ্য নিরাপত্তা বিল সম্পর্কে বার বার বলা হচ্ছে যে, অত টাকা কী করে জোগাড় হবে?
সরকার কিন্তু বলছেন না সেটা। মনমোহন সিংহের সরকার সম্বন্ধে অনেক সমালোচনার কারণ থাকতে পারে, কিন্তু এটা বলতেই হবে যে তাঁরা কখনও বলেননি, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য টাকা নেই। এবং বিজেপি থেকেও কিন্তু এই উদ্যোগের তেমন কোনও বিরোধিতা করা হয়নি। প্রতিবাদটা প্রধানত এসেছে বিজনেস মিডিয়া থেকে। তারাই খুব শোরগোল তুলে প্রচার করেছে যে, একে দেশের গ্রোথ কমে গেছে, তার ওপরে এই সব 'আজেবাজে' খরচ করলে দেশের খুব সমস্যা হবে। কিন্তু মানবকল্যাণের জন্য এবং অর্থনৈতিক প্রসারের জন্যও এই সরকারি প্রচেষ্টার খুবই প্রয়োজন।

এই প্রচারের মোকাবিলা করাটা তো জরুরি ছিল। এ ব্যাপারে আমাদের বামপন্থী দলগুলির একটা বিশেষ দায়িত্ব ছিল না কি?
এ বিষয়ে তাঁদের সহানুভূতি আছে, কিন্তু যা করা দরকার, যতটা করা দরকার, কার্যত তাঁরা তা করছেন না। খাদ্য ভর্তুকি বিষয়ে তাঁদের সহানুভূতি তাঁরা জোরগলায় জানাচ্ছেন, কিন্তু এটাও খুবই জোর দিয়ে বলছেন যে, এল পি জি আর ডিজেলের ভর্তুকি বন্ধ করা যাবে না। হয়তো তাঁরা এটা ভোটের কথা মাথায় রেখেই করছেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে এ কথাও বলতে হবে যে, এর মধ্যে একটা গুনতিরও ভুল বোধহয় আছে। এটা ঠিকই যে, বাচ্চাদের পুষ্টি নিয়ে যতটা আওয়াজ তোলা যায়, এল পি জি বা ডিজেল ভর্তুকি নিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি আওয়াজ তোলা যাবে। কিন্তু এটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয় যে সাধারণ লোকেরা এতই মূর্খ যে, ওই আওয়াজের ফলেই তারা মনে করবে, তাদের খাদ্যাভাবের চেয়ে এল পি জি, ডিজেল, বিদ্যুৎ বা সারের ভর্তুকির ব্যাপারটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই কথা ভেবেই তারা ভোট দেবে যদিও অধিকাংশ লোকের এমন কোনও সরঞ্জাম নেই যাতে এল পি জি ব্যবহার করা যায় এবং তিন ভাগের এক ভাগ লোকের বাড়িতে বিদ্যুতের কানেকশন নেই! আমার ধারণা, এখানে বামপন্থীদের একটা স্ট্র্যাটেজিক ভুলও হচ্ছে সাধারণ লোকের স্বার্থের দিকে যথেষ্ট নজর না দিয়ে শুধু এই সব নিয়ে শোরগোল করাটা একটা নৈতিক ভুল তো বটেই, কিন্তু এই করে ভোট পাওয়ারও সুবিধে হবে বলে আমি মনে করি না।
কেন্দ্রীয় সরকার সম্ভবত চাইছেন ডিজেল ভর্তুকিটা তুলে দিয়ে যে টাকাটা বাঁচবে সেটা খাদ্য নিরাপত্তার কাজে লাগাতে। এর পিছনে দেশপ্রেমের কারণ আছে, কিন্তু তার সঙ্গে ভোটিং স্ট্র্যাটেজিরও সম্পর্ক আছে। এটা তো মাথা গুনলেই বোঝা যায়!
বামপন্থী দলগুলি হয়তো মনে করেন, যাঁরা বাগ্বাজ, তাঁদের কথাগুলোই সবার কানে এত ঘোরে যে তাঁরা নিজেদের খাদ্যাভাব নিয়ে চিন্তা করবেন না, অন্যদের গ্যাসের দাম বাড়ল, তার প্রতিবাদে ওঁদের ভোট দেবেন!

এটা কি শুধুই ক্ষমতার জন্যে, না কি এর পিছনে একটা 'মরাল ব্যাঙ্করাপ্সি' আছে?
আমার ধারণা, এটার প্রধান কারণ সুচিন্তার অভাব। আমি বরাবরই মনে করেছি, যে খারাপ জিনিসগুলো ঘটে, তার অধিকাংশই চিন্তার অভাবে ঘটে, লোকে খুব পাজি, এই কারণে ঘটে না। পাজি লোক যে নেই তা আমি বলছি না, কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর হচ্ছে চিন্তাশূন্যতা।

আপনি আপনার দি আইডিয়া অব জাস্টিস বইতে 'ভাল হওয়া' এবং 'স্মার্ট হওয়া'র মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বলেছেন...
হ্যাঁ, সেটা উইট্গেনস্টাইনের কথার সূত্র ধরে বলেছি। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, আমাদের ভাবার ক্ষমতা যখন আমরা ব্যবহার করি না, তখন এমন অনেক জিনিস করতে পারি, সমাজের পক্ষে যা ক্ষতিকারক, এবং এ নিয়ে ভাবলে আমরা নিজেরাও সেটা বুঝতে পারব। 'স্মার্ট' চিন্তা ভাল হওয়ার একটা বড় উপায়। তাঁর এই কথাটার সঙ্গে আমি একেবারেই একমত।

খাদ্য নিরাপত্তা বা শিক্ষার অধিকারের মতো আরও অনেক জিনিস তো আমাদের দরকার। সে জন্য সামাজিক আন্দোলন জরুরি। আপনি তার সম্ভাবনা কেমন বলে মনে করেন?
আমি মনে করি, সম্ভাবনা খুবই আছে, কিন্তু তার জন্য সুচিন্তিত নেতৃত্বের বিশেষ প্রয়োজন। বামপন্থীদের স্বাভাবিক সহানুভূতির সঙ্গে এর খুবই যোগ আছে, তবে তার প্রকাশ আরও স্পষ্ট ভাবে হওয়া দরকার। অতীতে কিন্তু বামপন্থীরা নানা ভাবেই চিন্তার নতুনত্ব দেখিয়েছেন। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। পঞ্চাশের দশকের কথা, আমি তখন ছাত্র। বহুরূপী থেকে খুব সুন্দর ভাবে 'রক্তকরবী' করা হল। একটা প্রশ্ন উঠল, তাঁরা কেন এই নাটকটি করলেন? কারণ রক্তকরবীতে তো এক দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ বিপ্লবের বিরুদ্ধে বলেছেন! এর উত্তরটা খুঁজে পাওয়া কিন্তু কঠিন নয়। মনে রাখা দরকার, স্বাধীনতার আগেই অনেকে টেররিস্ট মুভমেন্ট থেকে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের চিন্তাটা ছিল এই রকম যে আমরা যে টেররিস্ট মুভমেন্ট করতাম, যদিও তাতে গায়ের ঝাল মেটে, কিন্তু তাতে করে দেশের কোনও পরিবর্তন হবে না, ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে যাবে না, তাদের যেতে বাধ্য করার একমাত্র উপায় মাস মুভমেন্ট। বলা যেতে পারে, রক্তকরবীর সঙ্গে এঁদের চিন্তাধারার অর্ধেকটা সামঞ্জস্য ছিল। টেররিজম করে শেষ অবধি কিছু হবে না এই কথাটা রবীন্দ্রনাথ বলেছেন এবং কমিউনিস্টরাও এটা মনে করছিলেন। কিন্তু মাস মুভমেন্টের বিষয়ে রক্তকরবীতে খুব বেশি কিছু নেই। বহুরূপী যখন রক্তকরবী স্টেজ করলেন, তখন তাঁরা একটা লাইন যোগ করলেন। যখন নাটকটা শেষ হচ্ছে, তখন বলা হল চল্ লড়াইয়ে যাই।' এই যে লাইনটি তাঁরা যোগ করেছিলেন, তার মধ্যে মাস মুভমেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ নিয়ে ভাববার ইঙ্গিত ছিল, এবং রবীন্দ্রনাথের সমর্থন তার পিছনে আছে, এটাও মনে করার ন্যায্য কারণ ওঁরা দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন।
এটা খুবই লক্ষ করার মতো ব্যাপার যে, বামপন্থী শিল্পীরা তখন নানা ভাবে আশ্চর্য রকম চিন্তার খোরাক জুগিয়েছেন। যেমন খাজা আহমদ আব্বাস তাঁর 'ধরতী কে লাল' চলচ্চিত্রে খুব সাবলীল ভাবে তাঁর নতুন ধরনের চিন্তা আমাদের সামনে রেখেছিলেন। এই সব চিন্তার সঙ্গে বামপন্থীদের কাজ ও লক্ষ্যের যোগ ছিল। যেমন, ল্যান্ড রিফর্মস-এর জন্য যে আন্দোলন হয়েছে, সেটাকে কার্যত মাস মুভমেন্টই বলতে হবে।
কিন্তু অতীতে যে সব বিষয় নিয়ে মাস মুভমেন্ট হয়েছে, সে সোশালিস্টই বলা হোক বা কমিউনিস্টই বলা হোক, এখন তো বামপন্থীদের সেগুলোয় উৎসাহ কম বলেই মনে হয়। এখন তো ওই পঞ্চায়েত দখল করব, আমাদের লোককে রাখব, ওদের লোককে মেরে ঠান্ডা করে দেব, এই সব। সব পার্টিতেই এ দিকে যাওয়ার লোভ যথেষ্ট প্রকট। কিন্তু সেটা দমন করাও খুবই জরুরি।

সাক্ষাৎকার: অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়
http://www.anandabazar.com/20edit3.html



নোবেল পুরস্কারের কথা
একদিন পাহাড় উড়িয়ে দেবার স্বপ্ন দেখতো মানুষ। কিন্তু পাহাড় যেন বিশাল এক দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে থাকতো বাঁধা হয়ে। তাকে কেটে সমান করা ছিল মানুষের জন্য অসম্ভব এক কল্পনা। কিন্তু একদিন পাহাড় ভেঙ্গে পড়লো মানুষের কাছে। শুধু পাহাড় নয়, শক্ত পাথর আর যা কিছু কঠিন সবই এক মুহূর্তেই চুরমার হয়ে গেল এক আবিষ্কারের কাছে। তার নাম ডিনামাইট। ডিনামাইট এক ধরনের বিস্ফোরক। সবকিছু উড়িয়ে দেওয়াই এই বস্তুর ধর্ম। যে মানুষটি ডিনামাইট আবিষ্কার করছিলেন তিনি কিন্তু তার আবিষ্কারের মতো এত কঠিন ছিলেন না, ছিলেন অনেক নরম মনের মানুষ। 

Nobel53.jpgছোটবেলায় এই মানুষটি স্বপ্ন দেখত একদিন সে আবিষ্কার করবে অনেক কিছু। এলাকার আর দশটা ছোট ছেলেদের চেয়ে সে ছিলো একটু আলাদা রকমের। তার মাথায় সবসময়ের চিন্তা নতুন একটা কিছু করতে হবে। কিন্তু কী করবে আর কীভাবে করবে তা সে জানতো না। স্বাভাবিক নিয়মে ছেলেটি একদিন বড় হয়। তারপর অনেক মাথা খাটিয়ে, শ্রম দিয়ে, সময় ব্যয় করে একদিন আবিষ্কার করে বসলো ডিনামাইট। সেই আবিষ্কার মানুষকে দিলো নতুন এক শক্তি। যে শক্তি তাকে দৈত্যের মতো বিশাল পাহাড় ভেঙে চুড়মাড় করার ক্ষমতা দিলো নিমিষে। তাই তার এবং তার আবিষ্কারের কদর বাড়লো দেশে বিদেশে সবজায়গায়। আর তাই এই আবিষ্কার তাকে অনেক ধনী করলো, কিন্তু শান্তি দিল না। কারণ কিছু খারাপ যুদ্ধবাজ মানুষ তার আবিষ্কারকে মানবকল্যাণের বদলে মানুষ মারার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করলো। হাজার হাজার মানুষ তাই মরতে লাগলো যুদ্ধক্ষেত্রে।

এই ঘটনা তাকে খুব ব্যথিত করলো। তাই মনের শান্তি জন্য শেষে ঠিক করলো এই আবিষ্কার থেকে অর্জিত টাকা মানব সেবায় দিয়ে যাবেন। এই টাকা সেই পাবে যে মানুষের জন্য ভালো কাজ করবে। কেউ যদি সুন্দর গল্প লিখে, কেউ যদি বিজ্ঞানের এমন আবিষ্কার করে যা মানুষের কাজে আসবে, মানুষের শান্তির জন্য যারা কাজ করে যাবে তারাই পাবে এই টাকা পুরস্কার হিসেবে। আজ এই পুরস্কার সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা পুরস্কার হিসেবে পরিচিত। এর নাম নোবেল পুরস্কার। যার টাকায় এই পুরস্কার দেওয়া হয় তার নাম আলফ্রেড নোবেল। নোবেলের নামেই নোবেল পুরস্কারের নাম হয়েছে। আর এই পুরস্কারের আড়ালে হারিয়ে গেছে ডিনামাইট আবিষ্কর্তা আলফ্রেড নোবেল।

নোবেলের বেড়ে ওঠা

Alfred_Nobel53.jpgইংরেজিতে নোবেল মানে মহৎ, আলফ্রেড নোবেল ছিলেনও তাই। তিনি ছিলেন সুইডিশ নাগরিক। আবিষ্কারের নেশা ছিল তার রক্তে। তার বাবাও আবিষ্কার করেছিলেন একটা বিশেষ বস্তু যাকে আমরা আজকে বলি প্লাইউড। 

আলফ্রেড নোবেলের বাড়ী ছিল সুইডেনে। তার বাবার নাম ইমানুয়েল নোবেল আর মার নাম এনড্রিয়েট নোবেল। তিনি ছিলেন তার বাবা মার তিন নম্বার সন্তান। ইঞ্জিনিয়ার বাবা সুইডেনে বানাতেন বড় বড় বাড়ী আর সেতু। কিন্তু নোবেলের জন্মের সাথেই যেন টাকা পয়সার একটা যোগ ছিল। যে বছর নোবেল জন্মগ্রহণ করেন সে বছর সুইডেনের এক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়। এতে ইমানুলেয় নোবেলের অবস্থাও খারাপ হয়ে পড়ে। কারণ সেই ব্যাংকেই ছিল তার সব টাকা-পয়সা। 

এবার টাকা রোজগারের জন্য ইমানুয়েল সুইডেনের পাশের দেশ ফিনল্যান্ড চলে যান। সে সময় আলফ্রেড নোবেলের বয়স ছিল চার বছর। ইমানুয়েল নোবেল ফিনল্যান্ড থেকে আবার চলে যান রাশিয়ায়। সেখানে কাজের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে এসে হাজির হন সেন্ট পিটার্সবার্গ নামের এক শহরে। সেখানে তিনি এক যন্ত্রপাতির কারখানা খুলে বসেন। 
তার একান্ত চেষ্টা আর শ্রমের কারণে একসময় এই কারখানা থেকে লাভ আসতে থাকে। 

সে সময় নোবেল পরিবার বাস করতো সুইডেনে। কারখানা লাভের মুখ দেখার পর নোবেলের বাবা ঠিক করেন তার পরিবারকে তিনি রাশিয়ায় নিয়ে আসবেন। সে সময় নোবেলের বয়স নয় বছর। আর এখানেই শুরু হয় নোবেলের শিক্ষাজীবন।

যতই নোবেল বড় হতে থাকলেন ততই তার আগ্রহ বাড়তে থাকলো সাহিত্য আর কবিতায়। নোবেল গল্প ভালোবাসতেন কিন্তু তার সাথে তিনি ভালোবাসতেন বিজ্ঞান। রসায়ন আর পদার্থবিদ্যায় তিনি বরাবরই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। যখন তার বয়স ১৭ তখন তিনি সুইডিশ, রাশিয়ান, ফ্রেঞ্চ, ইংলিশ আর জার্মান ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠেন।
আলফ্রেডের বাবা চাইছিলেন তার ছেলে তার মতো ইঞ্জিনিয়ার হোক। তিনি চাইতেন না তার ছেলে কবিতা বা গল্প লিখুক। এ কারণেই তার বাবা তাকে রসায়ন প্রকৌশল বা কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য পাঠিয়ে দিলেন রাশিয়ার বাইরে। আলফ্রেড এসে পৌছলেন ফ্রান্সের প্যারিস শহরে। সেখানে তিনি থিওফিল জুল পেলূজ নামের এক ফরাসী বিজ্ঞানীর সাথে কাজ করেন। একই সময় আলফ্রেড ভ্রমণ করেন ইতালি, জার্মানী এবং আমেরিকা। 

প্যারিসে এসে রসায়নে ডিগ্রি নিলেন তিনি। প্যারিসের পরিবেশ ভালো লাগলেও তিনি তার পরিবার ছেড়ে অসহায় বোধ করছিলেন। তাই তিনি চলে গেলেন রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে। এরপর আলফ্রেড নোবেল রসায়নের নতুন উপাদানের জন্য কাজ করতে শুরু করেন। মূলত সহজ উপায়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য তিনি নতুন কোন কিছু আবিষ্কার করতে চাইছিলেন। তার শিক্ষক নিকোলাই এন জিনিন তাকে নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে কাজ করার জন্য বলেন। এই সময় ইমানুলে নোবেল ঠিক করলেন অনেকদিন রাশিয়ায় থাকা হলো। এবার দেশে ফিরে যাওয়া। আলফ্রেডও তার পরিবারের সাথে ফিরে এলেন সুইডেন। 

noble_medals53.jpgএখানে ফিরে এসে তার বাবা পুরনো রসায়ন ব্যবসার উপর মনোযোগ দিলেন। এবার আলফ্রেডের কাজ হলো তার বাবার ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করা। সে সময় নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটতো। 

এ রকমই এক দুর্ঘটনা ঘটে যায় গবেষণা করতে গিয়েই। সে সময় গবেষণাগারে এক বিষ্ফোরণ ঘটে। সেই ঘটনায় আলফ্রেডের ভাই এমিল মারা যায়। কিন্তু তাতেও নোবেল তার গবেষণা বন্ধ করেননি। একই সময় সারা বিশ্বে তার ব্যবসা বাড়তে থাকে এবং বিস্ফোরণকে আরো সহজ করার জন্য নোবেল রাতদিন গবেষণা করতে থাকেন। অবশেষে ১৮৬৬ সালে যখন তার বয়স ৩৩ বছর তখন তিনি এক নিরাপদ বিষ্ফোরক আবিষ্কার করেন। যার নাম ডিনামাইট। ঠিক তার এক বছর পর তিনি এই অবিস্কারের পেটেন্ট বা স্বত্ব লাভ করেন। 

ডিনামাইট আবিষ্কারের পাশপাশি তিনি আরো বেশ কিছু আবিষ্কার করেছিলেন। মোট ৩৫৫টি আবিষ্কারের মালিকানা তিনি লাভ করেছিলেন। এ সব আবিষ্কারের কারণে তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী ব্যাক্তি পরিণত হন।

নোবেল যখন পৃথিবীর অন্যতম সেরা ধনী তখন তার সুখী হবার কথা, কিন্তু ডিনামাইট আবিষ্কারের কারণে তিনি কষ্ট পেতেন। কারণ ডিনামাইট তখন যুদ্ধে ব্যবহার হওয়া শুরু হয়। সে সময় অনেকেই এই আবিষ্কারের জন্য তার নিন্দা করতে শুরু করে। এই আবিষ্কারের কারণে তাকে অনেকেই মৃত্যুর সওদাগর বলে টিটকারি দিত লোকে। আলফ্রেড নোবেল সারা জীবন বিয়ে করেননি। তাই তার মৃত্যুর পর তার এত টাকা দিয়ে কী করা হবে জীবিত অবস্থায় তিনি তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।

নোবেল পুরস্কারের পেছনের কথা

nobel_medal53.jpgতিনি তার ব্যবসা ও আবিষ্কার থেকে যে বিপুল টাকা পেয়েছিলেন তাই দিয়ে তিনি ভালো কিছু করে যেতে চাইলেন। তিনি এই কারণে ছয়বার তার সম্পত্তি নিয়ে উইল বা দলিল করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি শেষবার যে উইল তৈরি করেন তাতে তিনি লেখেন, তাঁর আয়ের ৯৪ ভাগ তিনি এক পুরস্কারের জন্য দিয়ে যাচ্ছেন। এর এক বছর পর তিনি মারা যান। 

সে সময় তিনি পুরস্কারের জন্য রেখে যান ৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার। নোবেল ঠিক করে রেখে গিয়েছিলেন যে মোট পাঁচটি বিষয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে। এই বিষয়গুলো ছিল সাহিত্য, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসা শাস্ত্র আর শান্তির জন্য। কিন্তু তিনি চাইলেও তার পরিবার থেকে সে সময় আপত্তি আসে। যার ফলে সাথে সাথে নোবেল পুরস্কার দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯০১ সালে ঠিক আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর বিশ্বে প্রথম নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। 

১৯৬৯ সালে এসে পাঁচটি পুরস্কারের সঙ্গে আরেকটি পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় সেটি হলো অর্থনীতিতে। নোবেল পুরস্কারে দেওয়া হয় ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার যার অর্থমূল্য ১.৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ কোটি ৫ লক্ষ টাকার সমান। তার সাথে দেওয়া হয় একটি সোনার মেডেল ও সনদপত্র। নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় নরওয়েতে। আর বাকী পুরস্কারগুলো দেওয়া হয় সুইডেনে। উভয় দেশের প্রধান এই পুরস্কার বিজয়ীর হাতে তুলে দেন। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই তারিখটিতে পুরস্কার দেওয়ার কারণ ১৮৯৫ সালের ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেল মারা যান।

উপমহাদেশে নোবেল বিজয়ীরা

আমাদের উপমহাদেশেও বেশ কয়েকজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সেটা নিশচয়ই তোমরা জানো। বাংলাদেশ, ভারত পাকিস্তানের মোট আটজন পুরস্কার পেয়েছে। চল আমরা দেখি তারা কারা। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Tagore53.jpgতিনি ছিলেন কলকাতার ঠাকুর পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে। শুধু কবিতা মাথায় ছিল বলে সবাই ধরে নিয়েছিল তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। অথচ সেই ছোট ছেলেটি তার দেশ জাতি এবং ভাষাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বদরবারে। তার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথম এশীয় এবং ইউরোপের বাইরে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পান। ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। কবি রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা করতেন। তার বাংলা কাব্য গীতাঞ্জলীর ইংরেজী অনুবাদের জন্য তিনি এই পুরস্কার পান। তিনি আমাদের বাংলাভাষাকে বিশ্বের দরবারে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন।

 

 

সি ভি রমন

CVRaman53.jpgযখন কোন আলোক রশ্মি কোন অনুর ভিতর প্রবেশ করে তখন তা ইলেকট্রনের সাথে ক্রিয়া করে। এটাই রমন ইফেক্ট নামে পরিচিত। এই বিষয়টি যিনি আবিষ্কার করেন তার নাম সি, ভি রমন। এই কাজের জন্য তিনি প্রথম এশীয় বিজ্ঞানী হিসেবে ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তার পুরো নাম চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন। তিনি ভারতীয় বিজ্ঞানী।

হরগোবিন্দ খোরানা

Har_Gobind_Khorana53.jpgএরপরে যিনি নোবেল পুরস্কার পান তার নাম হরগোবিন্দ খোরানা। তার জন্ম বিট্রিশ ভারতের বর্তমান পাকিস্তান অংশ মুলতানের রাইপুরে ১৯২২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যখন নোবেল পুরস্কার পান তখন তিনি আমেরিকায়। কিন্তু তারপরেও স্বাধীন ভারতের তিনিই প্রথম নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান রাখার জন্য নোবেল পুরস্কার পান। ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম জিন তৈরির কারণে ১৯৬৮ সালে নোবেল পুরস্কার পান তিনি।

 

আবদুস সালাম

Abdus_salam.gifএরপরে যিনি নোবেল পুরস্কার পান তিনি ভারতীয় নন, পাকিস্তানি। তার নাম প্রফেসর আবদুস সালাম। ১৯২৬ সালে তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শধু পাকিস্তানেরই প্রথম নোবেল বিজয়ী নন প্রথম মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবেও তিনি প্রথম নোবেল বিজয়ী। ১৯৭৯ সালে তিনি ইলেক্ট্রো-উইক থিউরির জন্য পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান। 

মাদার তেরেসা

MotherTeresa53.jpgএকই সময় ভারতের হয়ে নোবেল পুরস্কার নিয়ে আসেন যিনি তার জন্ম ভারতে নয়, কিন্তু তারপরেও তিনি ভারতীয় নাগরিক। তার নাম মাদার তেরেসা। ১৯৭৯ সালে বিশ্ব শান্তির অবদানের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তার জ্‌ন্ম আলবেনিয়াতে। কিন্তু তার মিশন ছিল ভারতের কলকাতা নগরীতে। আজীবন মানুষের সেবা করার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। 

 

সুব্রমনিয়াম চন্দ্রশেখর

ChandraNobel.jpgপদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার ভারতে নিয়ে আসেন সুব্রমনিয়াম চন্দ্রশেখর। তিনি ১৯১০ সালে পাঞ্জাবের লাহোরে (তৎকালীন পাকিস্তানে) জন্মগ্রহণ করেন। নক্ষত্র ও তাদের বির্বতন এর তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য ১৯৮৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তার নামের শেষে চন্দ্রশেখর দেখে কি মনে হচ্ছে এই নাম আগে কোথাও পড়েছি। হ্যাঁ তিনি হচেছন প্রথম ভারতীয় নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর রমন এর ভাতিজা বা ভাইয়ের ছেলে। 

ডক্টর অমর্ত্য সেন

Amartya_Sen53.jpg১৯১৩ সালের পর আরেকজন বাঙ্গালি নোবেল পুরস্কার পান। তার নাম অমর্ত্য সেন। তিনি প্রথম নোবেল বিজয়ী বাঙ্গালি রবীন্দ্রনাথের তৈরি বোলপুর বা শান্তিনিকেতনে ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নোবেল পুরস্কার পান অর্থনীতিতে। আর তার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার বছরটি ছিল ১৯৯৮ সাল। তিনি দুর্ভিক্ষ নিয়ে তার কাজ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, সামাজিক কল্যানমূলক অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এই পুরস্কার পান।

 

ডক্টর মোঃ ইউনুস

yunus-nobel-prize53.jpgবাঙ্গালি নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে সবশেষ সংযোজন বাংলাদেশের ডক্টর মোঃ ইউনুস। ১৯৪০ সালে তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে তিনি দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। এই পুরস্কার সারা বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় অনেক বড় করেছে। তার পুরস্কার শুধু তার একার অর্জন নয় এটি বাংলাদেশের অনেক দুঃস্থ মানুষেরও। এবার আমরা সবাই গর্ব ভরে বলতে পারি আমাদেরও মাঝেও আছে একজন নোবেল বিজয়ী। তবে সেই গর্ব আরো বাড়বে যদি তোমাদের মধ্যে কেউ একদিন আরেকটি নোবেল পুরস্কার নিয়ে আসো বাংলাদেশের জন্য।

 

২০০৮ সালের নোবেল পুরস্কার যাদের ঘরে গেল...


জানতে চাও কারা পেলেন? তাহলে এই লিংকে ক্লিক করো।

 

বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/বিজয় মুজমদার/এবি/এমআইআর/২১ অক্টোবর

http://kidz.bdnew



s24.com/mainStory.php?mainstoryid=60

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcom

Website counter

Census 2010

Followers

Blog Archive

Contributors