Wednesday, February 6, 2013

ট্রাইবুনালের রায়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশে

ট্রাইবুনালের রায়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশে
যাবজ্জীবনের সাজাপ্রাপ্ত জামাত নেতা কাদেরের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ঢাকায় আওয়ামি লিগের সমর্থকদের বিক্ষোভ
ট্রাইবুনালের রায়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশে

ঢাকা: একদিকে মুক্তিযুদ্ধের অপরাধীদের বিচার, অন্য দিকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, বাংলাদেশে এখন দু'টোই চলছে সমান তালে৷ বিচারাধীন নেতাদের পাশে এসে দাঁড়াতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে মৌলবাদী সংগঠন জামাত-ই-ইসলামি-র এককাট্টা অনুরাগী দল৷ তার ওপর গত ক'দিনে বাংলাদেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আরও একটি সংগঠন, আওয়ামি লিগের সমর্থনে যারা জামাত-ই-ইসলামি-র বিরোধিতায় সরব৷ 

মুক্তিযুদ্ধের অপরাধীদের বিচার চলছে বাংলাদেশে৷ জামাত-ই-ইসলামি-র ন'জন উচ্চপদস্থ নেতার বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছে৷ প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ১৯৭১-র যুদ্ধে হিংসায় ইন্ধন, পরিকল্পিত গণহত্যা এবং ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে৷ বিচারের জন্য গঠিত হয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল৷ মঙ্গলবার সেই ট্রাইব্যুনাল বিচারাধীন আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবনের সাজা দেয়৷ প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন জামাত সমর্থকরা৷ অন্য দিকে, যাবজ্জীবন নয়, কাদেরের ফাঁসির দাবিতেও আওয়ামি অনুরাগী গোষ্ঠী অবস্থান বিক্ষোভ, আন্দোলন শুরু করেছে৷ আদালতে যে ছ'দফা চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট উল্লেখ, মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুল কাদেরের নির্দেশেই মিরপুরে অন্তত ৩৪৪ জনকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়৷ এ ছাড়া ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ কাদেরের পক্ষে সওয়ালকারী আইনজীবী জানিয়েছেন, রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হবে৷ তাঁর যুক্তি, কাদেরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা এখনও প্রমাণিত নয়৷ 

আবদুল কাদের-সহ বিচারাধীন ন'জনই পাক সেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিলেন বলে৷ মুক্তিযোদ্ধাদের খুন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দেশ্য বানচাল করে দেওয়ার ছকও কষেছিলেন৷ ট্রাইব্যুনালে তাঁদের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ আনা হয়েছে৷ 

গত মাসের ২১ তারিখে আরেক জামাত নেতা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়েছে৷ বর্তমানে আজাদ ফেরার হওয়ায়, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেন্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে৷ প্রাথমিক ভাবে অনুমান, পাকিস্তানে আত্মগোপন করেছেন আজাদ৷ তাই আজাদকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ইসলামাবাদকে অনুরোধও জানিয়েছে ঢাকা৷ বাংলাদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে মাত্র আট মাসে অন্তত ২৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ অনেকের মতে, এই সংখ্যা ৩০ লক্ষ৷ উগ্রপন্থী ও পাক সেনার হাতে সম্মান খুইয়েছিলেন কমপক্ষে আড়াই লক্ষ মহিলা৷ 

বাংলাদেশি লেখক এবং সাংবাদিক হারুন হাবিব বলেছেন, '১৯৭১-এর যুদ্ধ আক্ষরিক অর্থেই ছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ৷ কত মানুষ যে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন, তার সঠিক তথ্য নেই৷ এত দিন চেয়েও সুবিচার পাননি তাঁরা৷' ক্ষমতাসীন আওয়ামি দলের মুখপাত্রের বক্তব্য, 'দেরি হয়েছে ঠিক, তবে মানুষ এ বার নিশ্চয়ই বিচার পাবেন৷' 

আওয়ামি লিগ ও জামাত-ই-ইসলামি - দু'টি দলের মধ্যে রয়েছে বিস্তর আদর্শগত ফারাক৷ আওয়ামি লিগ-নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান৷ আর জামাত চায় ইসলামিক আদর্শ মেনেই চলুক দেশ৷ হারুনের দাবি, 'আদর্শের এই মৌলিক পার্থক্যই দু'টি সংগঠনকে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করেছে৷ সেখান থেকেই জন্ম সাম্প্রতিক প্রশাসন-বিরোধিতার৷' 

গত ৪৮ ঘণ্টায় জামাত সমর্থকদের রক্তচক্ষু শাসিয়ে বেড়িয়েছে ঢাকা-সহ প্রায় গোটা দেশকেই৷ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিরুদ্ধে প্রচার ছাড়াও দফায় দফায় সংগঠিত হয়েছে প্রতিবাদ৷ রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, গাড়ি ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে৷ কয়েকটি জায়গায় জামাত কর্মীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনা ও র্যাব-এর সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গিয়েছে৷ সংবেদনশীল এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ 

পাল্টা প্রতিবাদে নেমেছেন আওয়ামি লিগের সমর্থকরাও৷ আবদুল কাদেরের ফাঁসির দাবি জানিয়ে ট্রাইব্যুনালের বাইরে অনেক রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান তাঁরা৷ তাঁদের বক্তব্য, 'কাদের যে অপরাধ করেছেন, তার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কোনও সাজাই নয়৷' ফাঁসির দাবিতে বুধবার রাতে ঢাকায় মশাল মিছিলেরও আয়োজন করা হয়৷ 

জামাত-ই-ইসলামি-র সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'আমাদের সংঘটনকে কোণঠাসা করার এ এক সুপরিকল্পিত চক্রান্ত৷ সরকারই এই ষড়যন্ত্রের রূপকার৷' মুক্তিযুদ্ধের সময় পর্যুদস্ত আওয়ামি লিগ প্রতিশোধ নিতেই 'পুরোনো ক্ষত খুঁচিয়ে ঘা করার চেষ্টা' করছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcom

Website counter

Census 2010

Followers

Blog Archive

Contributors