Tuesday, February 12, 2013

ডিসেম্বরে নিম্নমুখী শিল্পোত্‍পাদন, তবে পাল্লা দিয়ে বাড়ল খুচরোয় মূল্যবৃদ্ধি

ডিসেম্বরে নিম্নমুখী শিল্পোত্‍পাদন, তবে পাল্লা দিয়ে বাড়ল খুচরোয় মূল্যবৃদ্ধি
ডিসেম্বরে নিম্নমুখী শিল্পোত্‍পাদন, তবে পাল্লা দিয়ে বাড়ল খুচরোয় মূল্যবৃদ্ধি
এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি৷ মাসের পর মাস উত্‍পাদন কমছে, কিন্ত্ত জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে৷ উত্‍পাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না, আয় বাড়ে না৷ অথচ, লোকের হাতে খরচ করার মতো বেশি টাকা না এলে জিনিসপত্র বেশি দামে বিকোয় কী করে? আপাত-বিরোধী হলেও এমনটাই ঘটছে আমাদের দেশে৷ 

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তর জানিয়েছে, নভেম্বর মাসের পর ডিসেম্বরেও দেশে শিল্পোত্পাদন ২০১১ সালের তুলনায় কমেছে বেশ খানিকটা৷ নভেম্বরে কমেছিল ০.৮ শতাংশ, ডিসেম্বরে কমেছে ০.৬ শতাংশ৷ বস্ত্তত, এপ্রিল ২০১২ থেকে মার্চ ২০১৩ পর্যন্ত ন'মাসের মধ্যে ছ'মাসই শিল্পোত্‍পাদন আগের বছরের তুলনায় কমেছে৷ বেড়েছে কেবল তিন মাস - মে, অগস্ট এবং অক্টোবর৷ 

ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি কমেছে কারখানায় উত্‍পাদন৷ ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্র থেকে দেশের জাতীয় আয়ের ১৫ শতাংশ আসে৷ সেই ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রই যদি পিছিয়ে পড়ে তাহলে দেশের অভ্যন্তরীন মোট উত্‍পাদন কমবে৷ 

অথচ, জুন এবং সেপ্টেম্বর এই দু'মাস বাদ দিলে খুচরো পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি বাড়তে বাড়তে এবছর জানুয়ারিতে ১০.৭৯ শতাংশে পৌঁছেছে৷ এর অর্থ, ২০১২-র জানুয়ারিতে যে জিনিসের দাম ১০০ টাকা ছিল গত মাসে সেই জিনিসেরই দাম বেড়ে হয়েছে ১১০.৭৯ টাকা৷ অথচ, ওই সময় ১০০ টাকা ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিটে) রাখলে পাওয়া যেত ১০৮ টাকা থেকে ১০৮.৫০ টাকা৷ 

কিন্ত্ত, মজার কথা হল, খুচরো বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া বেড়ে চললেও, পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম কিন্ত্ত কমছে৷ পাইকারি পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি অগস্ট মাসে ৭.৫৫ শতাংশ থেকে পড়তে শুরু করে ডিসেম্বরে ৭.১৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ জানুয়ারি মাসের সূচক প্রকাশিত হবে বৃহস্পতিবার৷ অর্থনীতিবিদদের অনুমান, পাইকারি পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি জানুয়ারি মাসে ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে৷ জিনিসপত্রের পাইকারি আর খুচরো দামে মূল্যবৃদ্ধির ফারাকটা অনেক৷ এর প্রধাণ কারণ, খুচরো বাজারে আকাশছোঁয়া দাম হচ্ছে শাকসব্জী, মাছ-মাংস, ডাল জাতীয় শস্য, ভোজ্যতেল এবং চিনির৷ 

নিসন্দেহ, পাইকারি আর খুচরো দামে মূল্যবৃদ্ধির এই বিশাল ফারাকের বেশির ভাগটাই ঢুকছে মধ্যস্বত্তভোগী ব্যবসায়ীদের পকেটে৷ তবুও, যে সমস্ত জিনিসের খুচরো মূল্য বাড়ছে সেগুলি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করলে বলা যায় মহাত্মা গান্ধী গ্রামীন রোজগার যোজনার মতো কেন্দ্রীয় সামাজিক প্রকল্পের টাকা হাতে পাওয়ায় স্বল্পবিত্ত পরিবারগুলি বর্ধিত আয় খরচ করছে খাদ্যদ্রব্যের উপর৷ 

একদিকে শিল্পোত্‍পাদন কমছে অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে৷ এর প্রভাবে দেশের মানুষের সঞ্চয় কমবে৷ গত সন্তাহেই ইন্ডিয়া রেটিংস নামক সংস্থাটি এই ইঙ্গিত দিয়েছে৷ ইন্ডিয়া রেটিংসের মতে, চলতি অর্থবর্ষে দেশের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে৷ গত বছর এই পরিমাণ ছিল ৩০.৮ শতাংশ৷ 

সঞ্চয়ের হার কমলে শিল্প বিনিয়োগের হারও কমবে৷ কেননা, দেশের সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ব্যাঙ্ক, বিমা প্রভৃতি সংস্থার মাধ্যমে শিল্প বিনিয়োগে চালান হয়৷ 

শিল্পোত্‍পাদন এবং শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ার অন্যতম প্রধান শর্ত কম হারে মূলধনের জোগান৷ কিন্ত্ত, মূল্যবৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি থাকায় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার বিশেষ কম করেনি৷ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার করার খরচ বেশি হওয়ায়, শিল্প সংস্থাগুলিও সম্প্রসারণের কাজ পিছিয়ে দিয়েছে৷ পাশাপাশি, সরকারি ব্যবস্থা লাল গেড়োর ফাঁসে আটকা পড়েছে অনেক প্রস্তাবিত শিল্প প্রকল্প৷ বন ও পরিবেশ সংক্রান্ত অনুমতি পেতে অহেতুক দেরি, জমি জোগাড়ে জটিলতা, বিদ্যুত্ প্রকল্পগুলিতে কয়লার সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা - পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে৷ জিএমআর, জিভিকের মতো অনেকেই এখন রাস্তা তৈরির মতো প্রকল্পগুলি থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছে৷ 

বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশের রন্তানিকারী সংস্থাগুলির উপরও৷ রন্তানি বৃদ্ধির হার কমছে৷ 

শিল্প বিনিয়োগ বাড়ছে না, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না৷ ফলে, কমছে আয়৷ গত সন্তাহেই কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দন্তর তাদের পূর্বাভাষে জানিয়েছিল চলতি অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে, যেটা গত এক দশকে সবচেয়ে কম৷ 

আয় কমলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমবে৷ চলতি অর্থবর্ষের প্রথম দশ মাসে (এপ্রিল থেকে জানুয়ারি অবধি) সরকারের প্রত্যক্ষ কর বাবদ আয় বেড়েছে মাত্র ১২.৪৯ শতাংশ৷ 

আগামী কয়েক মাসে দেশের অর্থনৈতিক আবহাওয়ার বিশেষ উন্নতির আশা নেই৷ বরং, পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে৷ মূল্যবৃদ্ধি কমাতে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আসন্ন বাজেটে বিভিন্ন খাতে ব্যয় সংকোচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ আর্থিক ঘাটতি কমলে টাকার বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিময় দর কমবে এবং তার ফলে আমদানি সস্তা হবে৷ এতে জ্বালানি সহ শিল্প সংস্থাগুলির উত্‍পাদন খরচও কমবে, মূল্যবৃদ্ধি কমবে৷ তাই, সকলের নজরে এখন ২৮ ফেব্রুয়ারি৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcom

Website counter

Census 2010

Followers

Blog Archive

Contributors