Monday, July 22, 2013

শহিদ দিবস ২১ জুলাইয়ে তৃণমূল কর্মীদের মৃত্যুর খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন মমতা একদিকে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি এবং মাওবাদীদের যৌথ চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন৷

পঞ্চায়েত ভোটের চতুর্থ দফায় হিংসা, হানাহানি, মৃত ১
এই সময়: রাজ্যে আজ চতুর্থ দফার নির্বাচন। ভোট হচ্ছে মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং নদিয়ায়। প্রথম দফার ভোট মোটের উপর নির্বিঘ্নে কাটলেও গত দুই দফাতেই নির্বাচন ঘিরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। চতুর্থ দফার পঞ্চায়ের ভোটের শুরুতেই মায়াপুরে মৃত্যু হল এক সিপিএম কর্মীর। মৃতের নাম খয়রুল শেখ। তৃণমূলের বোমার আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয় বলে দাবি করেছে সিপিএম। অন্যদিকে বোমা বাঁধতে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের। এদিকে ভোটের শুরুতেই দুই সিপিআইএম কর্মীর দেহ উদ্ধার হল বীরভূমে। সকালে ময়ূরেশ্বর থেকে উদ্ধার হয় সিপিআইএম কর্মী অসীম বাগদি এবং জামির শেখের দেহ। গতরাতেই তাদের খুন করা হয়েছে বলে অনুমান।

পঞ্চায়েত ভোটে খুনোখুনিকে কেন্দ্র করে অবশেষে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ চতুর্থ দফার ভোটের আগে এক টিভি চ্যানেলকে টেলিফোনে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী একাধারে সবক'টি বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেছেন৷ রাজ্যে রাজনৈতিক মৃত্যুর মিছিল নিয়ে তাঁর আক্রমণের তির এড়াতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকারও৷ দলের শহিদ দিবস ২১ জুলাইয়ে তৃণমূল কর্মীদের মৃত্যুর খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন মমতা একদিকে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি এবং মাওবাদীদের যৌথ চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন৷

অন্য দিকে, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির সদস্য সমর্থকদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷ রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসক হয়েও ক্রমবর্ধমান অশান্তির দায় ঝেড়ে ফেলে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিরোধীদেরই৷ তাঁর দাবি, 'আমাদের (তৃণমূল) লোকজন কোথাও অশান্তি করছে না৷ সেটা আমার জন্যই৷ সিপিএম-কংগ্রেসের সাধারণ কর্মীদের বলব নেতাদের কথায় নাচবেন না৷ ভোটের পর পয়সাওয়ালা নেতারা বিদেশে পালিয়ে যাবে৷ আপনাদের কিন্ত্ত এলাকাতেই শান্তিতে বাস করতে হবে৷'

রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী এই মন্তব্য আদতে হুমকিরই সামিল৷ মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি ভোটের সময় সেই আমরা-ওরার ঐতিহ্যই বজায় রেখেছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷ তবে হুঁশিয়ারির সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি৷

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁর সংঘাত যে ভোটের পরেও দীর্ঘায়িত হয়ে তার আঁচ আগেই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ভোটে খুনোখুনির জন্য এদিন ফের কমিশনের 'জেদ'কেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মমতা৷ নির্দিষ্ট কারও নাম বা পদ উচ্চারণ না-করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, 'কী দরকার ছিল পাঁচ দফায় ভোট করানোর? দুদিনে ভোট হলে একটাও খুন হত না৷' কংগ্রেস, সিপিএম এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে এক বৃহত্তর চক্রান্তের অংশীদার হিসেবে দাবি করে তাঁর অভিযোগ, পুরোটা পরিকল্পনা করে করা হয়েছে৷ এই চক্রান্তে কেন্দ্রীয় সরকারও আছে৷ পাঁচ দফায় কখনও পঞ্চায়েত ভোট হয় নাকি? বিধানসভা হতে পারে৷'

রাজ্যে ভোটের আগে অস্ত্র আমদানিতে মদত দেওয়ার অভিযোগে নাম না-করে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর দাবি, 'আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন বাইরের রাজ্য থেকে এ রাজ্যে অস্ত্র ঢোকা নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম৷ কিন্ত্ত এখন সেটা হচ্ছে না৷' যেখানে কংগ্রেস এবং সিপিএমের কিছুটা ভিত্তি আছে, ঠিক সেখানেই গণ্ডগোল এবং খুনোখুনি হচ্ছে বলেও অভিযোগ মমতার৷ উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি সেই অধীর চৌধুরির জেলা মুর্শিদাবাদের প্রসঙ্গই টেনেছেন৷ তাঁর কথায়, 'যেখানে কংগ্রেস-সিপিএম, সেখানেই গণ্ডগোল৷ মুর্শিদাবাদে বোমা বাঁধতে গিয়ে কংগ্রেসের দু'জন মারা গেছে৷ আমি এটাও সমর্থন করছি না৷ সিপিএমের কোনও কর্মী মারা গেলে সেটাও সমর্থনযোগ্য নয়৷' মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করে তাঁর অভিযোগ, 'ওখানে কংগ্রেসও আছে, আমরাও আছি৷ কংগ্রেস কর্মীরা আমাদের লোকদের মনোনয়নে বাধা দিয়েছে৷'

দলের দিকে ঝোল টেনে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন,'কী দরকার ছিল পাঁচলায় আমাদের বিধায়ককে খুন করতে যাওয়ার? আমাদের একজন কর্মাধ্যক্ষকে কুপিয়ে মেরেছে৷ আর এক জায়গায় ভোট হয়ে যাওয়ার পর আরএসপি বিধায়কের ঝামেলা করতে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল? তরোয়াল নিয়ে সব বেরিয়ে পড়েছে আমাদের কর্মীদের মারতে৷ আমাদেরও ২১ জন কর্মী খুন হয়ে গেছে৷ আমি আমার দলের কর্মীদেরও বলব মাথা ঠান্ডা রাখতে৷'
কিন্ত্ত চতুর্থ দফার আগে হঠাত্‍ মুখ্যমন্ত্রী এমন প্রতিক্রিয়া দিতে গেলেন কেন? প্রথমত পঞ্চায়েত ভোটে রাজনৈতিক মৃত্যুর খতিয়ান থেকেই স্পষ্ট, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে ব্যর্থ তৃণমূল পরিচালিত প্রশাসন৷ ২০০৩ এবং ২০০৮-এর পঞ্চায়েত এখনও দাগী ভোটের তকমা বয়ে বেড়াচ্ছে হানাহানির জন্য৷ রক্তপাত এড়াতে না-পারলে ২০১৩-ও সেই তালিকায় চলে আসবে৷ যা মুখ্যমন্ত্রী মমতার পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর৷ দ্বিতীয়ত, যত বেশি সম্ভব জেলা পরিষদ দখলের লক্ষ্যে চতুর্থ এবং পঞ্চম দফায় শাসকদল ঝাঁপিয়ে পড়বেই৷ যুত্‍সই প্রতিরোধ এলে আরও রক্তপাতের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে৷ অর্থাত্‍ ভোটের শেষে রাজনৈতিক হত্যার সংখ্যাটা অনেক বেড়ে গেলে শাসক দলই কলঙ্কিত হবে৷ তৃতীয়ত, ভোট যত গড়াচ্ছে, তৃণমূল কর্মীদের মৃত্যুর হারও তত বাড়ছে৷ ফলে নিজের দলের অভ্যন্তর থেকেও 'চাপ' আসবে তৃণমূল ভবনের ম্যানেজারদের উপর৷
দলের ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের প্রতিশোধস্পৃহা থেকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন জায়গায় যেতে পারে যে, তা সামাল দেওয়াই দায় হয়ে উঠবে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে৷ এই সমস্ত যুক্তির আধারেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা, অবিরাম হিংসা ভাবাচ্ছে প্রশাসক মমতাকে৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcom

Website counter

Census 2010

Followers

Blog Archive

Contributors