Friday, July 19, 2013

বাড়ি চলে যা, ঝামেলা পাকাস না, অসহায় ‘চাষার ব্যাটা’

বাড়ি চলে যা, ঝামেলা পাকাস না, অসহায় 'চাষার ব্যাটা'

বাড়ি চলে যা, ঝামেলা পাকাস না, অসহায় 'চাষার ব্যাটা'
কৌশিক সরকার

আমাদের বুথে ভোট লুঠ হয়ে যাচ্ছে দাদা৷

কোন বুথ তোদের?

মথুরাপুর স্কুল৷

অ! সঙ্গে ক'জন আছে?

তিন-চার জন আছি৷

ঝামেলা পাকাস না৷ বাড়ি চলে যা৷

সকাল দশটা৷ সালাউদ্দিন মোল্লা, নুপিল ফকিররা এসেছেন পাশের গ্রামে তাঁদের নেতা আবদুর রেজ্জাক মোল্লার বাড়িতে৷ অন্যবারও ভোটের দিনে এ ভাবেই হাওয়া কেমন জানাতে আসেন৷ কিন্ত্ত শুক্রবার তাঁদের যা অভিজ্ঞতা হল, আগে কখনও তা হয়নি৷ এমন ভাবলেশহীন রেজ্জাককে আগে কখনও দেখেননি সালাউদ্দিনরা৷

নিজের জেলায় ভোটের সকালে চন্দনেশ্বরের বাকাড়ি গ্রামে নিজের অফিসঘরেই বসে রেজ্জাক মোল্লা৷ সামনের টেবিলে দু'টো মোবাইল৷ মাঝেমধ্যেই বেজে উঠছে একটা না একটা৷ ওপার থেকে ভেসে আসছে পার্টিকর্মীদের একই রকম কাতর অনুনয়৷ এজেন্টকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না৷ গালিগালাজ করা হচ্ছে৷ চলছে ছাপ্পা ভোট ...৷ আর একই রকম ভাবলেশহীন ভাবে রেজ্জাক বলছেন, 'রোজা রেখেছ? তা হলে বাড়ি ফিরে রেস্ট নাও৷ আর যদি না-ও রেখে থাক, বাড়ি ফিরে স্নান-খাওয়া সেরে জিরিয়ে নাও!'

কে বলছেন এ-সব কথা? না, আবদুর রেজ্জাক মোল্লা! ভাঙড়, ক্যানিংয়ে ভোট মাত্রই এতদিন এ-সব অভিযোগ উঠত রেজ্জাক-বাহিনীর বিরুদ্ধেই৷

আর আজ!

আপনার মডেলই তো অনুসরণ করছে এরা?

প্রশ্নটা শুনে খানিক থমকে প্রবীণ সিপিএম নেতার জবাব, 'আমি গণতন্ত্রকে কাঠি করেছি, ছুরি মারিনি৷ তাই ফারাক আছে৷ আমি যা করেছি তা গণতন্ত্রের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে৷'

কী করবেন আজ?

নিজের ভোটটা দেব৷ বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাকড়ি দুর্গাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথ৷

বাড়িতে বসে আছেন কেন?

আমি এখানে থাকলে তা-ও পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছু ব্যবস্থা নেবে৷

যদিও ততক্ষণে সেই গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী জাহানারা খাতুনও ছুটে এসেছেন তাঁর কাছে গুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে--- বুথের ভিতর তৃণমূলের এজেন্টরা আমাদের বলছে পিটিয়ে সোজা করে দেবে৷ অভিযোগ শুনে দার্শনিকসুলভ নির্লিপ্তি নিয়ে মুখ তুলে এক বার শুধু তাকালেন রেজ্জাক মোল্লা৷ ব্যাস, ওটুকুই!

কোথাও যাবেন না?

যাব ভাঙড়ের দিকে৷ চাকরি বাঁচাতে৷ একটু চক্কর কেটে চলে আসব৷ কী করব আমি? ইটস আ লস্ট গেম ফর সিপিএম৷ আমি চাই সিপিএম হারুক৷ আমি চাই সবকটা জেলা পরিষদই তৃণমূল পাক৷ আমরাও চুরি করেছি, কিন্ত্ত মনে ভয় নিয়ে৷ এরা সব খুল্লামখুল্লা৷ এরা যা পারে করুক৷

বারুইপুরে দলের জেলা অফিসে যাবেন না একবার?

ওখানে সব বড় বড় লেফটেন্যান্ট, কর্নেলরা রয়েছেন৷ আমি ওখানে গিয়ে কী করব?

অন্যবারের থেকে এ বার তাঁর ভোটের দিনের প্রোগ্রাম যে আলাদা, নিজেই জানিয়ে দিলেন প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী৷ যখন সরকার ছিল, তখন সকাল-সকাল নিজের ভোটটা দিতেন৷ তার পর চলে যেতেন চন্দনেশ্বর পার্টি অফিসে 'গণতন্ত্রকে কাঠি করতে'৷ কিন্ত্ত ভোটের দু'দিন আগেই ঘনিষ্ঠ সঙ্গী সাত্তার মোল্লার গ্রেপ্তার তাঁর মনোবলে যে জোর ধাক্কা দিয়েছে, স্বীকার করে নিলেন সেটাও৷ যদিও এ বার সাত্তার থাকলেও যে বিশেষ সুবিধা হত, এমন বলতে পারছেন না৷ কেন? কোথায় গেল আপনার বাহিনী?

'ওরা সরকারি দল করত৷ এখন আমাদের সরকার নেই, ওরাও আমাদের সঙ্গে নেই৷ তবে ওরা এখনও সরকারি দলই করছে!' সাফ জবাব ঠোঁটকাটা রেজ্জাকের৷

আপনি যে গরিব বাড়ির জোয়ান ছেলেদের এক করার কথা বলেছিলেন, তাঁরা?

২০০৯-র লোকসভা ভোটের পর প্রতি বুথে ১০ জন করে এমন ছেলে আমি জোগাড় করেছিলাম৷ তারা কাজ করেছিল বলেই বিধানসভায় জিতেছিলাম৷ কিন্ত্ত আমার দলের নেতারাই মনে করল, ওরা তাদের শত্রু, জায়গা দখল করতে এসেছে৷ তাড়িয়ে দিল৷ ডিসম্যান্টল করে দিল৷ ওরাও এখন বেশিরভাগই তৃণমূলে৷

'চাষার ব্যাটা' একই আছেন৷ রাখঢাক নেই৷ যা মনে আসে, তা-ই হুড়মুড়িয়ে বলে ফেলেন৷ শুধু কিঞ্চিত্‍ হতাশ৷ অসহায়ও৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcom

Website counter

Census 2010

Followers

Blog Archive

Contributors