Thursday, September 12, 2013

আদবানিকে গুরুত্ব না দিয়েই প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর নাম ঘোষণার কৌশল বিজেপি-র

আদবানিকে গুরুত্ব না দিয়েই প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর নাম ঘোষণার কৌশল বিজেপি-র

আদবানিকে গুরুত্ব না দিয়েই প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর নাম ঘোষণার কৌশল বিজেপি-র
নয়াদিল্লি: লালকৃষ্ণ আদবানির প্রবল আপত্তিকে আমল না দিয়ে সম্ভবত শুক্রবারই নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে ঘোষণা করতে চলেছে বিজেপি৷


তবে এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হচ্ছে না৷ লালকৃষ্ণ আদবানি এখনও তাঁর মতে অনড় হয়ে বসে আছেন৷ তাঁকে সমর্থন করছেন সুষমা স্বরাজ৷ তবে রাজনাথ সিং অনেক চেষ্টা করে ও কৌশলে দলের ভিতরের বিরোধটা কমাতে সক্ষম হয়েছেন৷ গতকাল রাতে তিনি মুরলী মনোহর জোশীর সঙ্গে দেখা করেন৷ তারপর আজ জোশীর কাছে আরএসএস নেতাদেরও নির্দেশ এসে যায়৷ ফলে আদবানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোশী যে বিরোধিতা করছিলেন, সেখান থেকে তিনি সরে এসেছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর৷ নরেন্দ্র মোদীতে তাঁর আর আপত্তি নেই৷ রাতে বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও দেখা করেছেন রাজনাথ৷ মোদীর বিরোধিতা থেকে সুষমা যাতে সরে আসেন, সে জন্য একটা টোপ দিয়েছেন রাজনাথ৷ তিনি সুষমাকে দলের লোকসভা নির্বাচনে প্রচার কমিটির প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ মাস কয়েক আগে গোয়ায় আদবানিদের বিরোধিতা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদীকে এই পদ দেওয়া হয়েছিল৷ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে ঘোষণা করা হলে এই পদে আর থাকবেন না মোদী৷ সুষমার কাছে এই বার্তাও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যে, তিনি রাজি না হলে অরুণ জেটলিকে এই পদ দেওয়া হতে পারে৷ দলে সুষমার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীই হলেন জেটলি৷

এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, আগামিকাল দুপুরের মধ্যেই দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার ঘোষণা করে দেবেন রাজনাথ৷ পার্লামেন্টারি বোর্ডে মোট বারোজন সদস্য আছেন৷ তার মধ্যে শরীর খারাপ বলে বাজপেয়ী বৈঠকে আসেন না, নরেন্দ্র মোদী নিজেও আসবেন না৷ বাকি সদস্যদের মধ্যে সুষমাকে বাদ দিয়ে বাকি আটজনই মোদীর পক্ষে৷ আদবানি, সুষমা বিরোধিতা করলেও মোদীর পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে রাজনাথের খুব একটা অসুবিধা হবে না৷ আদবানিকে এটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি খুব বেশি গোলমাল করতে চাইলে, আনুষ্ঠানিক বৈঠক না ডেকেই রাজনাথ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেবেন৷ পার্লামেন্টারি বোর্ডের সব সদস্যের সঙ্গেই তাঁর কথা হয়ে গিয়েছে৷ অধিকাংশ সদস্য মোদীর পক্ষে৷ বিজেপি সূত্রের খবর, রাজনাথ সিংকে সুষমা বলেছেন, তিনি মনে করেন, বিধানসভা নির্বাচনের পরেই মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে গ্রহণ করা উচিত৷ আর পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক ডেকে যেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ রাজনাথ যেন বৈঠক না ডেকে এই ঘোষণা না করেন৷

আরএসএসের নির্দেশ সত্ত্বেও আদবানি যখন তাঁর মোদী-বিরোধিতা থেকে সরতে রাজি হননি, তখন এই প্রবীণ নেতাকে দলের মধ্যে যতটা সম্ভব একা করে দেওয়ার কৌশল নেন রাজনাথ৷ আদবানিকে যাঁরা সমর্থন করছিলেন, তাঁদের মধ্যে মুরলীমনোহর জোশী ও অনন্তকুমারকে নিজের দলে নিয়ে নিতে পেরেছেন রাজনাথ৷ এমনকি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চহ্বানও বলেছেন, মোদীর সঙ্গে তাঁর কোনও বিরোধ নেই, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলে তাঁর কোনও অসুবিধা নেই৷ ফলে আজ দুপুরের মধ্যেই অবস্থাটা এমন দাঁড়ায় যে, সুষমা ছাড়া আদবানির পাশে অন্তত প্রকাশ্যে আর কেউ নেই৷ বিজেপির আজকের রমরমার পিছনে লালকৃষ্ণ আদবানির অবদান সম্ভবত সবথেকে বেশি, মোদী-সহ দলের দ্বিতীয় প্রজন্মের সব নেতাই তাঁর হাতে তৈরি করা৷ গুজরাত দাঙ্গার পর নরেন্দ্র মোদীকে বাঁচাতে তত্‍কালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে দলের মধ্যে একা করে দিয়েছিলেন আদবানি৷ আর সেই মোদীর কারণেই দলে তাঁরও একই অবস্থা হয়েছে৷

মোদী নিয়ে তাঁর অবস্থা এতটাই করুণ যে বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী আজ প্রথমে টুইট করে ও পরে স্পষ্টভাবে বলেছেন, আদবানি দেওয়াল লিখন পড়তে পারছেন না৷ সারা দেশের লোক মোদীকে চাইছে৷ বাজপেয়ী-আদবানি মিলে একসময় যে হাওয়া তৈরি করেছিলেন, মোদীর পক্ষের হাওয়া তার থেকেও তীব্র৷ একসময় আদবানি নিজে বাজপেয়ীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে ঘোষণা করেছিলেন৷ এখন তিনি মোদীর হয়ে সেই কাজটাই করুন৷ দলে এভাবে আদবানির বিরুদ্ধে আগে প্রকাশ্যে কথা বলেননি৷ বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি-র মধ্যে পরিস্থিতিটা আদবানির কতটা বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে৷ মোদীর বিরোধিতা করে তিনি বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে ভিলেন হয়ে গিয়েছেন৷ আজ একমাত্র তাঁর পুরনো সহযোগী সুধীন্দ্র কুলকার্নি ছাড়া আর কেউ তাঁর সমর্থনে ও মোদীর বিপক্ষে মুখ খোলেননি৷ পাঁচ বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে যে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া কার্যত মোদীকে রাজস্থানে আসতেই দেননি, তিনি এখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর ভরসায় জিততে চাইছেন৷ রামন সিং সাদরে তাঁকে বরণ করে নিয়েছেন ছত্তিসগড়ে৷ বিজেপি জুড়ে এখন মোদী উন্মাদনা চলছে৷ সেই অবস্থায় আদবানি উল্টো পথে হেঁটেছেন৷ আদবানির কথা ঠিক না ভুল, তা ভবিষ্যত্‍ বলবে, বর্তমান হল, তাঁর রাজনৈতিক শিষ্য মোদী গুরু আদবানিকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছেন৷ কারণ, যাই হোক না কেন, বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার মোদী ছাড়া গতি নেই গোছের মনোভাবে আক্রান্ত৷ বিজেপি নেতারা বলছেন, মোদীর নাম ঘোষণা করে দেওয়ার সুবিধাটা হল, এ নিয়ে আর কোনও সংশয় রইল না৷ মোদীর জনপ্রিয়তার পুরো সুফল দল তুলতে পারবে৷ মোদীর নামে গণভোটের পরিস্থিতি তৈরি করা যাবে, তাতে নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবে বিজেপি৷

কংগ্রেস মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলছিলেন, বিজেপি তো বিভ্রান্ত দল৷ সারা দেশ দেখছে, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার জন্য বিজেপি কী ভাবে চাপ ও পাল্টা চাপের খেলা চলছে৷ কংগ্রেস মনে করে গুজরাতের বাইরে মোদীর কোনও প্রভাবই নেই৷ সঙ্ঘ পরিবারের এক শীর্ষ নেতার মতে, কোনও সন্দেহ নেই এই টানাপোড়েনে খারাপ সঙ্কেত গিয়েছে৷ কিন্ত্ত আর দু'মাস পরে দেখবেন, লোকে এ সব মনে রাখেনি৷ গোয়ায় মোদীকে দলের প্রচার কমিটির প্রধান করা নিয়ে কতটা বিরোধিতা হয়েছিল, সেটা কি লোকে এখন মনে রেখেছে? একবার ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর তখন সবকিছুই ঠিক হয়ে যায়৷ আর আদবানির একটা কথা মনে রাখা দরকার, সকলের একটা সময় থাকে৷ সেই সময় আদবানি পেরিয়ে এসেছেন৷ অবসর নেওয়ারও একটা সময় থাকে৷ সেটা তিনি কেন ভুলে যাচ্ছেন৷

ঘটনা হল, নিজের দলেই ক্রমশ ব্রাত্য হয়ে পড়ছেন আদবানি৷ বিজেপিতে পুরোদস্ত্তর মোদী-যুগ শুরু হতে চলেছে৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcom

Website counter

Census 2010

Followers

Blog Archive

Contributors