Monday, May 25, 2015

গারো তরুণী ধর্ষণ মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই

গারো তরুণী ধর্ষণ মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই

তারিখ: ২৬/০৫/২০১৫
  • হাইকোর্ট রুল জারি করেছে এ ঘটনায় ॥ জবাব দিতে বলা হয়েছে দুই সপ্তাহের মধ্যে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কুড়িলে মাইক্রোবাসে গারো তরুণীকে গণধর্ষণ মামলার তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই। এ ঘটনায় কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ এখন জোর দিচ্ছে যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজের ওপর। এ ফুটেজ থেকেই একটা ক্লু পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ভাটারা থানার ওসি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন। পুলিশ এ ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে। সোমবার মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। 
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় একটি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে ধর্ষণের ঘটনায় এজাহার, সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো এবং পরীক্ষা করতে বিলম্ব কেন 'অসাংবিধানিক' ঘোষণা করা হবে না, ধর্ষিতাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না এবং দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অবহেলার জন্য কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, উত্তরা, খিলক্ষেত, গুলশান, ভাটারা থানার ওসি এবং ভাটারা থানার ডিউটি অফিসারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জনস্বার্থে করা এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জানাতে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রুল ছাড়াও আদালত অন্তর্র্বর্তীকালীন আদেশ দেন। বাংলাদেশের সকল থানায় ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ ও জন্ম পরিচয় নির্বিশেষে বৈষ্যমহীনভাবে সবার সেবা নিশ্চিতে একটি সার্কুলার জারি করার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও পুলিশ কমিশনারকে আদেশ দিয়েছেন।
আদালত তার আদেশে আরও বলেন, যৌন হয়রানি ও যৌন সহিংসতা রোধে বিদ্যমান আইন ও প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, বা ওই পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও নারী অধিকারকর্মীদের নিয়ে একটি কমিটি করতে রিটকারীদের কাছে নামের তালিকা চেয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ৩১ মের মধ্যে এই তালিকা আদালতে জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে রিটকারী চার সংগঠনকে। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও আইনুন নাহার সিদ্দীকা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম। আইনুন নাহার সিদ্দীকা জানান, বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য ১৪ জুন আবার হাইকোর্টের কার্যতালিকায় থাকবে।
তার আগে চার মানবাধিকার সংগঠন, মহিলা পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ্যান্ড সার্ভিসেস ট্র্রাস্ট (ব্লাস্ট) পক্ষ থেকে রবিবার এই রিটটি দায়ের করা হলে শুনানি শেষে আদালত আজ এ আদেশ দেন। 
এদিকে জানা যায়, ওই তরুণীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে নেয়া হয়েছে তেজগাঁও থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। আপাতত তাকে এখানে রেখেই পর্যবেক্ষণ করা হবে। 
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মেয়েটির পরিবার। পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে আটকও করতে পারেনি। টানা তিন দিন অভিযান চালানোর পরও পুলিশ ঘটনার মূল নায়ক তুষারের সন্ধান পায়নি। ফলে পুলিশ এখন জোর দিচ্ছে ভিডিও ফুটেজের ওপর। তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাটারা থানার ওসি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন সোমবার সারাদিন ভিডিও ফুটেজ স্ক্যানিং কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হাতে থাকা ফুটেজ থেকে তিনি একটি চমকপ্রদ তথ্য পেতে পারেন বলে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, সাতদিনের ভিডিও ফুটেজের মধ্যে ওই দোকানে আসা সব মানুষের চিত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হচ্ছে। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও এখান থেকেই একটা তদন্তে সহায়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও পুলিশের বক্তব্যে গরমিল পাওয়া গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে রবিবার কমিটির সভাপতি টিপু মুন্সি সাংবাদিকদের বলেন, 'আদিবাসী তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় একজন গ্রেফতার হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।'
এদিকে টিপু মুন্সির এ বক্তব্যের পরের দিন সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে অন্য কোন সংস্থা গ্রেফতার করলেও তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে এখনও হস্তান্তর করেনি। মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মনিরুল ইসলাম এ সব কথা বলেন। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, 'আদিবাসী তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সম্ভাব্য আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থল কুড়িল বিশ্ব রোড এলাকা ও এর আশপাশে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তদন্ত যেহেতু সামগ্রিক প্রক্রিয়া। তদন্তের আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে মেয়েটির ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়েছে। যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তাদের গ্রেফতার করতে পারব।'
এ ঘটনায় রবিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলমকে সভাপতি করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোঃ মাহবুব হাসান ও ডিবির গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার ওবায়েদুল হক।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে কাজ শেষে ওই তরণী যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে উত্তরার বাসায় যেতে বাসের জন্য একটি সিএনজি স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময় ছাই রঙের একটি মাইক্রোবাস তার সামনে এসে থামে। মাইক্রোবাস থেকে দুই যুবক নেমে এসে অস্ত্র দেখিয়ে মুখ চেপে ধরে তাকে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলেই তার মুখ ও হাত-পা বেঁধে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এরপর গাড়িটি বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে। গাড়ির ভেতরে চালকসহ পাঁচজন তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময়ও তাকে ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখা হয়। রাত পৌনে ১টার দিকে উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়কে তাকে নামিয়ে দিয়ে মাইক্রোবাসটি পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন দুপুরে বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
বিক্ষোভ প্রতিবাদ ॥ এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে সোমবারও প্রতিবাদ করেছে কয়েকটি সংগঠন। জাতীয় ও প্রেসক্লাবের সামনে নারী মুক্তি আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও চারণ সাংস্কৃতিক সংগঠন যৌথভাবে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে বক্তারা ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নারী অবমাননা, ফেসবুকে কুৎসা রটানো, মদ ও জুয়ার মতো সমাজ গর্হিত কর্মকা- নির্মূল করার আবেদন জানান।


No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcom

Website counter

Census 2010

Followers

Blog Archive

Contributors