Monday, April 8, 2013

সরকারের লক্ষ্য বিপিএল নয়, সরকারের লক্ষ্য আইপিএলঃ


সরকারের লক্ষ্য বিপিএল নয়, সরকারের লক্ষ্য আইপিএলঃ

Saradindu Biswas

Saradindu Biswas's profile photo
3:49 PM (4 hours ago)
to me
সরকারের লক্ষ্য বিপিএল নয়, সরকারের লক্ষ্য আইপিএলঃ 
মিলেনিয়ম গোলের প্রতিশ্রুতিতে পৌঁছানোর জন্য আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) তার কর্মী ও আন্তর্জাতিক জাতিগুলিকে নিয়ে কাজ করে চলেছে। ২০০০ সালে ৮টি প্রয়োজনীয় লক্ষ্য মাত্রা স্থির করে এই সংস্থা একটি আন্তর্জাতিক ঘোষণা পত্র প্রকাশ করে ও বিশ্বের সব দেশের নেতারা সেখানে স্বাক্ষর করেন।  তারা প্রতিশ্রুতি দেন যে, আন্তর্জাতিক জাতিগুলি দারিদ্রতা, ক্ষুধা, আসুখ, নিরক্ষরতা , প্রাকৃতিক  অনুৎকর্ষতা এবং মহিলাদের প্রতি বৈষম্য দূর করবে।  
সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যে এই ৮ টি লক্ষ্য হল ঃ  
১) দারিদ্রতা ও ক্ষুধাকে নির্মূল করা।
২) সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা।
৩) লিঙ্গ সমতা ও মহিলাদের স্বশক্তিকরন। 
৪) শিশু মৃত্যু কমানো। 
৫) মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন। 
৬) এইচআইভি/এডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে লড়াই। 
৭) প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ। 
৮) উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ভাগিদারীত্ব তৈরি করা। 
এই প্রতিবেদনে দারিদ্রতা ও ক্ষুধা নির্মূল করার বিষয়ের উপর ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে কিছু প্রয়োজনীয় প্রসঙ্গের উপ্র আলোকপাত করছিঃ   
আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ২০১০ সালে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছে যে, বিশ্বের ৯২৫ মলিয়ন মানুষ দীর্ঘ কালীন ক্ষুধায় পীড়িত। এবং এই তালিকায় আছে ভারতের ৮ টি রাজ্য যা আফ্রিকার ২৬ টি অতিগরীব দেশের লোক সংখ্যা থেকেও ১১ মিলিয়ন বেশী। পশ্চিমবঙ্গও ভারতের এই ৮টি রাজ্যের অন্যতম। 
এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কৃষির ব্যবস্থা, বনসম্পদ ও জলসম্পদ বিকাশের জন্য বিশ্বের সমস্ত দেশগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে। গ্রামীন ক্ষেত্রে কৃষিতে বেশী বিনিয়োগ করে প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য  সুরক্ষিত করার কথাও  বলা হয়েছে । একথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ ক্রতে প্রত্যেক দেশ যত্নবান হবে । 
ভারতের প্রেক্ষিতটি আবার ভিন্ন। খাদ্য শস্যের বিপুল জোগান থাকলেও এখানে চরম খাদ্য সংকট চলছে। সরকারি খাদ্য ভান্ডার উপছে পড়ছে। খোলা আকাশের নিচে দিনের পর দিন  পড়ে থেকে লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রেশনের থেকেও কম দামে পশু খাদ্য হিসেবে সেই শস্য বিক্রি করা হচ্ছে বিদেশের বাজারে, তবু দেশের মানুষ থাকছে অভুক্ত। সুপ্রীম কোর্ট খাদ্য না পচিয়ে জনগণের মধ্যে সাবসিডিয়ারি মূল্যে অথবা বিনামূল্যে বিতরণ করার নির্দেশ দিলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে সরকার তা কার্যকরী করছে না। 
এখানে সরকারের বড় অজুহাত হল, এ ভাবে খাদ্য বন্টন করলে জনগণের কাজের স্পৃহা নষ্ট হয়ে যাবে। 
খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও সম্পূর্ণ জনবিরোধী। 
-বর্তমান বিলে দেশের ৩৩% মানুকে খাদ্য সুরক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।  
-আগের এপিএল, বিপিএল কথাগুলি তুলে দিয়ে প্রাইওরিটি গ্রুপ ও জেনেরেল গ্রুপ করা হয়েছে, যাতে আগের অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না।
-এই বিলে ক্ষুধার্থ মানুষের সংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছে।
-পরিবার পিছু (৫জন করে) ২৫ কেজি খাদ্য দেবার কথা বলা হয়েছে। যা দিনে একজনের ভাগে ১৬৬ গ্রাম করে দাঁড়ায়। 
-প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন, সংগ্রহ , সরবরাহ ও সংরক্ষণ নিয়ে এই বিল একেবারেই নিরব( যা আন্তর্জাতিক জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা FAO এর নির্দেশিকার পরিপন্থী)। 
-এই বিলে সরকার খাদ্যের পরিবর্তে আধার কার্ডের মাধ্যমে নগদ টাকা (ক্যাশ ট্র্যান্সফার) প্রদানের উপর বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। 
-আইসিডিএস বা মিডডে মিলে প্যাকেট খাবার সরবরাহ করার প্রস্তাব রেখে একদিকে যেমন পিছনের দরজা দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানীগুলিকে বরাত পাইয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে মানুষের খাদ্য সার্বভৌমতাকে ধ্বংস করে দেবার চক্রান্ত হচ্ছে। 
ইতি মধ্যে এই বিলের বর্তমান অবস্থার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির কাছে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের অভিযোগ জমা পড়েছে। সারা দেশ ব্যাপি খাদ্য নিয়মকের দপ্তরে ধর্না প্রদর্শন করা হয়েছে। দিল্লীর যন্তর মন্তরে চলেছে বিক্ষোভ ও আইন মান্য আন্দোলন। সরকারের এই অনড় অবস্থান সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে! তাদের দায় বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে!  
এই বিল বর্তমান অবস্থায় পাশ হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বেলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারন বিলে অভিযোগ নিরসনের তেমন কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। ফলে, খাদ্য চুরি, দুর্নীতি অবাধে চলতে থাকবে, যা রোখার মতো কোন রক্ষা কবজ মানুষের হাতে নেই।  
প্রশ্ন উঠছে সরকার কি ইচ্ছে করেই এই জটিলতা তৈরি করছেন? সুযোগ করে দিচ্ছে্ন কালোবাজারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে! নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলির অসম্ভব মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়ে ইতিমধ্যেই যারা জনজীবনকে দিশাহারা করে তুলেছে? দিন মজুরে পরিণত করে ফেলেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে? রাষ্ট্রীয় শ্রমের সবটুকুই চলে যাচ্ছে অনুৎপাদক মুনাফাবাজদের লাভের খাতায়।  
এই ঘোলা জলে পড়ে মিলেনিয়াম গোলের রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ঝরা পাতার মত ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে সাইনিং ইন্ডিয়ার গোয়েবলসিয় শ্লোগান। ভারতবর্ষের  বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি পালন তাই এক অলীক কল্পনা মাত্র। বোঝা যাচ্ছে সরকারের লক্ষ্য বিপিএল নয়, সরকারের লক্ষ্য আইপিএল। কতিপয় মানুষের মোচ্ছবের ব্যবস্থা করা ও ক্লের পুতুলের মতো হুল্লোড়বাজির আপ্তসহায়ক হয়ে ভাঁড়ামো করে যাওয়া।           

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcom

Website counter

Census 2010

Followers

Blog Archive

Contributors